ওয়ানএমডিবি তহবিল কেলেঙ্কারি: মাস্টারমাইন্ড ঝো লো’কে দেশে ফেরাচ্ছে মালয়েশিয়া
অনলাইন ডেস্ক:
মালয়েশিয়ার আলোচিত ওয়ানএমডিবি তহবিলের কয়েকশ কোটি ডলার অর্থ কেলেঙ্কারির মাস্টারমাইন্ড পলাতক ঝো লো’কে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে মালয়েশিয়া। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিশ্বের একাধিক দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে দেশটির সরকার।
শুক্রবার (০৫ মে) মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম জানিয়েছেন, ওয়ানএমডিবি তহবিল কেলেঙ্কারির মূলহোতা পলাতক ঝো লো’কে দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কয়েকটি দেশের কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে।
ওয়ানএমডিবির পূর্ণরুপ ওয়ান মালয়েশিয়ান ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ। এটা একটা রাষ্ট্রীয় তহবিল। মালয়েশিয়ায় একটি ‘ইকোনোমিক হাব’ তথা ‘আর্থিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এটা গঠন করা হয় আর এ যাত্রা শুরু হয় ২০০৯ সালে। ওই সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নাজিব রাজাক।
মালয়েশিয়ার জনগণকে সাহায্য করার জন্য গঠিত হলেও এই তহবিল থেকে কয়েকশ কোটি ডলার অর্থ হাওয়া হয়ে যায়। ২০১৫ সালের বিভিন্ন ব্যাংক ও বন্ডমালিকদের প্রায় একশ কোটি ডলারের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবার পর বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে।
ওয়ানএমডিবি তহবিল কেলেঙ্কারি বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারিগুলোর অন্যতম, যার জাল ছড়িয়ে পড়েছিল এশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের হলিউড পর্যন্ত। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক রিপোর্টে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৭০ কোটি ডলার নাজিব রাজাকের নিজ একাউন্টে গেছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা ছাড়েন নাজিব রাজাক। ক্ষমতাসীন হন আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি খ্যাত জনপ্রিয় নেতা মাহাথির মোহাম্মদ। এরপরই ওয়ানএমডিবি তহবিল তছরুফের জন্য নাজিব রাজাককে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হয়।
বিচারে রাজাকের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির সাতটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়। এজন্য তাকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর তার স্ত্রী রোসমাহ মনসুরকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
বিচারের শুনানিতে উঠে আসে, নাজিব রাজাক ছাড়াও ওই অর্থ আরও কিছু ক্ষমতাশালী ব্যক্তির পকেটে গেছে। এসব অর্থ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিলাসবহুল ভবন, ব্যক্তিগত জেটবিমান, ভ্যান গগ ও মনে-র মত বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের চিত্রকর্ম কেনা হয়। নির্মাণ করা হয় ‘উলফ অব ওয়াল স্ট্রিট’র মতো হলিউডের ব্লকবাস্টার হিট ছবি।
আর এই অর্থ কেলেঙ্কারির মূলহোতা ছিলেন মালয়েশিয়ার অর্থলগ্নিকারী ও ব্যবসায়ী ঝো লো যিনি এখন পলাতক রয়েছেন। ঝো লো একাই সাড়ে ৪০০ কোটি ডলার পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় উঠে আসে তার নাম। মালয়েশীয় এই ধনকুবেরের সঙ্গে হলিউড তারকা অভিনেতা লিওনার্ডো ডিক্যাপ্রিও ও ফ্যাশন মডেল কিম কার্দাশিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে যা সম্প্রতি সামনে এসেছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’র ফাঁস হওয়া কিছু নথিপত্রের বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গ জানায়, ঝো লো’র সঙ্গে সম্পর্কের জেরে ২০১৮ সালে ডিক্যাপ্রিওকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল গোয়েন্দা সংস্থাটি। ২০২১ সালে মালয়েশিয়ার আদালতে লো’র বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তহবিল কেলেঙ্কারির তদন্ত বন্ধে লো সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আট বছর ধরে পলাতক ওই ব্যবসায়ী এখন চীনে রয়েছেন বলে মনে করা হয়। তাকে গ্রেফতারে ২০১৬ সালে ‘রেড নোটিস’ জারি করে ইন্টারপোল। এবার তাকে দেশে ফেরাতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকার।
ঝো লো’কে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, লোর ফেরানোর বিষয়টি ‘কূটনৈতিক চ্যানেলে’ আলোচনা চলছে এবং এই আলোচনা একাধিক দেশের সরকারকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার এ নেতা বলছেন, প্রক্রিয়াটা বেশ কঠিন। তবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে।