যশোরে টানা বৃষ্টিতে ৯শত ৫ হেক্টর জমির পাকা ধান ক্ষতিগ্রস্ত

আঃজলিল: 

যশোরে ঈদের পর থেকে টানা বৃষ্টিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৯শত ৫ হেক্টর জমির পাকা ধান। যার আনুমানিক দূর্যোগগ্রস্থ ফসলের পরিমান ১০-১৫ শতাংশ বলছে কৃষি কর্মকর্তারা। জেলার আট উপজেলার মধ্যে যশোর সদর, শার্শা, ঝিকরগাছা, মনিরামপুর উপজেলায় বেশি সংখ্যাক কৃষকরা অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন। এদিকে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছেন ক্ষতি সামান্য হয়েছে। তাও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।

কৃষকদের অভিযোগ, ফসল রক্ষায় অতিরিক্ত অর্থ খরচ করেও বৃষ্টিতে মিলছে না শ্রমিক। এতে ক্ষেতেই পচে যাচ্ছে ধান। পানিতে ডুবে যাচ্ছে তাদের স্বপ্ন। সবচেয়ে বেশি মনিরামপুর, চৌগাছা, শার্শা ও সদর উপজেলায় বৃষ্টিতে বেশির ভাগই ধান পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কৃষকেরা।

সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের মালঞ্চী গ্রামের নজরুল শেখ জানান, ‘ধান ভালো হয়েছিল। পাকা ধান প্রায় এক সপ্তাহ আগে কেটে ক্ষেতেই রোদে শুকাতে দিয়েছিলেন। কিন্তু ঝড়-বাদল শুরু হওয়ায় কাটা ধান আর বাড়ি আনা সম্ভব হয়নি। এখন ক্ষেতে হাঁটুপানি জমেছে। ভাসছে কাটা ধান। ধানগাছ পচে যাচ্ছে। অনেক ধানে অঙ্কুর গজিয়েছে।

শুধু নজরুল শেখ নন, এমন বিপদে আছেন যশোরের আট উপজেলার আরও অনেক কৃষক। কয়েকজন কৃষকেরা জানান, ঈদের দিন থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয় জেলাটিতে। এর পর টানা দু’দিন কড়া তাপদাহের পর গেল পাঁচদিন ধরে থেমে থেমে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে ঝড় বইছে। বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো বাতাসে জেলার বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার কৃষকেরা।

যশোর আবহাওয়া অফিস সুত্রে জানা গেছে, গত পাঁচদিনে যশোরে ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে বুধ ও বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এতে ফসলের মাঠগুলোতে পানি জমে কেটে রাখা পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে।

মনিরামপুর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের কৃষক আমির হোসেন বলেন, ‘ক্ষেতে কোথাও এক হাত আবার কোথাও প্রায় হাঁটু পানি। ক্ষেতে বিছিয়ে দেওয়া ধানগাছ পচে গেছে। ধানের গাছ থেকে শিষ ভেঙে পড়ছে। পানিতে ভিজে ধানের অঙ্কুরোদগম শুরু হয়েছে। বেশি টাকা দিয়েও কোনো শ্রমিক পাচ্ছি না। খুব ক্ষতির মুখে পড়েছি।

ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের  কুলবাড়ীয়া গ্রামের সোলায়মান কবীর   জানান, চার বিঘাধানের মধ্যে ১০ কাঠা জমির ধান বাড়িতে এনেছি। বাকী ধান মাঠে ভিজছে। বিচালী হবে না, আটি কেটে বাড়ি আনতে হবে। একই গ্রামের জয়নাল আলীর মাঠে একবিঘা জমির ধান কাটা ছিল। সেগুলো বাড়ি আনার জন্য স্ত্রীসহ মাঠে কাজ করতে দেখা গেছে। রাস্তার উপরে শুকিয়ে তারপর বাড়ি আনতে হবে বলে তারা জানায়।আলমগীর কবীর,   ইজ্জেত আলী ও জিয়াউর রহমানকে ধানের আটি কাটতে দেখা যায়। তারা জানায়, জমিতে পানি জমে আছে। আবার ধান পেকে গেছে। যদি পানি শুকানোর জন্য অপেক্ষা করি, তাহলে ধান ঝরে যাবে। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে কৃষক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। গবাদিপশুর খাদ্য সংকটসহ কৃষক চরম লোকসানের মধ্যে পড়বে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) দীপঙ্কর দাশ বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৪৫৯ মেট্রিক টন। বুধবার পর্যন্ত ৯৫ হাজার ১০৩ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। অর্থাৎ ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ জমির ধান কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। বৃষ্টিতে ক্ষেতে কেটে রাখা ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। ভিজে যাওয়া ধানের গাছ থেকে শিষ ভেঙে পড়ছে। ধানের অঙ্কুরোদগম শুরু হয়েছে। ভিজে যাওয়া ধানের দাম কম হবে। তবে আর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)