বাংলাদেশ-পাকিস্তান সেমিফাইনাল আজ

এশিয়া কাপের সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে আজ বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে পাকিস্তানের। উভয় দলই একটি জয় ও একটি পরাজয়ের মাধ্যমে সমান পয়েন্ট অর্জন করেছে। ফলে, আজকের ম্যাচের জয়-পরাজয়ই নির্ধারণ করবে ২৮ তারিখের ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ। আর একারণেই ম্যাচটি অঘোষিত সেমিফাইনালে রুপ নিয়েছে। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫ টা ৩০ মিনিটে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে দুবাই স্টেডিয়ামে।

সেই ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর প্রায় ১৬ বছর কেটে গেছে। একে একে বাংলাদেশ হারিয়েছিল প্রবল প্রতিপক্ষদেরও। কিন্তু সেই জালে আটকা পড়েনি পাকিস্তান। ধরা দিতে দিতে ফসকে গেছে বারবার। অসংখ্যবার জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও দুর্ভাগ্য, অনভিজ্ঞতা, আম্পায়ারের ভুল অথবা ক্রিকেটীয় ভদ্রতার বাছবিছারের অভাবে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। একটা সময় সাকিব-তামিমরাও এ নিয়ে ভেবেছেন। কেন জানি হচ্ছেই না।

২০১৫ সালে অবশেষে এই তালা ভাঙে। বাংলাদেশ সফরে প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে হার শুরু হয় পাকিস্তানের। সাব্বির রহমানের সেঞ্চুরিতে প্রস্তুতি ম্যাচ জিতে যায় বাংলাদেশ। এরপর তো ইতিহাস। টানা তিনটি ওয়ানডে ম্যাচে পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করে সাকিব-তামিমরা। বাংলাদেশ সিরিজ জেতে ৩-০ ব্যবধানে। একমাত্র টি-টুয়েন্টিতেও বাংলাদেশের কাছে হারে আফ্রিদিরা। এরপর এশিয়া কাপের টি-২০ ম্যাচেও হার। অর্থাৎ, ১৬বছর যে জয় আসি আসি করেও আসেনি, তা চলে আসে টানা ৫ ম্যাচে।

২০১৫ সালে বাংলাদেশের কাছে ধবলধোলাইয়ের পর এই প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের মুখোমুখি পাকিস্তান। শ্রীলংকার বিপক্ষে বড় জয়। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে হার বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসে যে ভাঙন ধরিয়েছিল, তা সেই আফগানিস্তানকে হারিয়েই ফিরে পেয়েছে মুস্তাফিজরা। একের পর এক ক্লোজ ম্যাচে হেরেছিল মাশরাফিরা। অবশেষে স্বস্তির জয়।

অন্যদিকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর হট ফেভারিট হয়ে এশিয়া কাপে আসে পাকিস্তান। প্রথম ম্যাচে দুর্বল হংকংয়ের বিপক্ষে সহজ জয় পায় তারা। অতঃপর সুপার ফোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘাম ছুটিয়েই জয় তাদের। যদিও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে দুইবারের দেখায় একেবারে পাত্তা পায়নি সরফরাজের দল। আর এমন হারে তাদের আত্মবিশ্বাসেও ফাটল দেখা দিয়েছে। যা স্বয়ং শিকার করেছেন পাকিস্তান প্রধান কোচ মিকি আর্থার।

তারপরেও পাকিস্তানকে হালকা করে দেখার উপায় নেই। এর কারণ, পাকিস্তানক আনপ্রেডিক্টেব্যল। তাদের সম্পর্কে আগে থেকেই কিছু বলা সম্ভব নয়। এছাড়া বড় মুহূর্তগুলোতে নিজেদের স্নায়ুচাপ ধরে রাখার মতো কর্মক্ষমতা হয়েছে।

তবে, এই ম্যাচের আগে বাংলাদেশকে অন্তত মানসিকভাবে এগিয়ে রাখবে গত সিরিজের ফলাফল। অন্তত খেলোয়াড়দের মধ্যে এই বিশ্বাসটি তৈরি হয়েছে যে, পাকিস্তানকে হারানো সম্ভব।

এই ম্যাচে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সেই পুরনো রোগ। উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসার মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসা। দলে সিনিয়র-জুনিয়র বলে কোনো শব্দ নেই। এখানে প্রতিটি খেলোয়াড়েরই দায়িত্ববোধ থাকা জরুরী। গত চার ম্যাচে লিটন দাসের ব্যর্থতা ও উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসা নিঃসন্দেহে দৃষ্টিকটু ছিল। বিশেষত, আফগানিস্তানের বিপক্ষে দারুণ মোমেন্টাম তৈরির পরেও শট সিলেকশনে ভুল করা এবং দায়িত্ববোধের অভাব ক্রিকেটসেন্সকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

আজকের ম্যাচের একাদশে নাজমুল শান্ত’র বদলি হিসেবে সৌম্য সরকারকে সুযোগ দেয়া হতে পারে। বিশেষত, পাকিস্তানের বিপক্ষে তার সর্বশেষ ইনিংস হয়তো তাকে দৃঢ় বিশ্বাস দেবে। ইমরুল কায়েস যেহেতু মিডল অর্ডারে আগের ম্যাচে ভালো করেছে সেহেতু তাকে ওই জায়গা থেকে সড়ানোর কারণ নেই। বাংলাদেশের আগে ব্যাট করলে শুরু থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরী ঠিক কতো রান এখানে লড়াই করার মতো। সেটিকে লক্ষ্য করে ব্যাট করাটা গুরুত্বপূর্ণ। ৩৫ ওভার পর্যন্ত উইকেট ধরে রেখে লড়াই করার মতো ব্যাটিং গুরুত্বপূর্ণ। অতঃপর স্কোরকে যতটা নিরাপদ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় তার চেষ্টা করা।

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় বিপদ স্লগ ওভারের ব্যাটিং। যেহেতু প্রকৃত পিঞ্চ হিটার নেই সেহেতু পরিকল্পিত ব্যাটিং গুরুত্বপূর্ণ। সিঙ্গেল-ডবলের উপর গুরুত্ব দিয়ে ওভারে ১টি বাউন্ডারি তুলতে পারলেই তা নিরাপদ সংগ্রহ এনে পারে।

পাকিস্তান বোলিং লাইন আপে হাসান আলীর বোলিং ধার এখনো সেইভাবে দেখা যায়নি। মোহাম্মাদ আমিরও এখনো জ্বলে ওঠেননি। আজকের ম্যাচেও তারা যেন জ্বলে উঠতে না পারে এমন প্রার্থনা টাইগার সমর্থকদেরও।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)