যেসব কারণে যশোর-চুয়াডাঙ্গায় এতো বেশি গরম পড়ে

ডেস্ক নিউজ:
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। শনিবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২. ডিগ্রি। অন্যদিকে একইদিন চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৪২.৩ ডিগ্রি। এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাওয়া এবারই প্রথম নয়। প্রতিবারই তীব্র দাবদাহ থাকে এই অঞ্চলে।

দাবদাহের কারণে সারাদেশে স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আরো কিছু জায়গায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি হলেও যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় গরমের তীব্রতা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৪ সালে এই জেলার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করার কথা জানা যায়।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এর কিছু প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে। সে অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যের কারণে তাপপ্রবাহ বেশি হয়।

আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বিবিসির এক সাক্ষাতকারে জানান, বাংলাদেশে এপ্রিল হচ্ছে সর্বোচ্চ গরম মাস। এই সময়ে পৃথিবী সূর্য থেকে রশ্মি বা কিরণ পায় সেটি লম্বালম্বিভাবে পায়। সূর্যকে কেন্দ্র করে যে কক্ষপথ ধরে পৃথিবী ঘুরছে সেখানে পৃথিবীর অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ সবচেয়ে কাছ থেকে সূর্যরশ্মি গ্রহণ করছে।

অন্যভাবে বলতে গেলে, এপ্রিল মাসে সূর্য থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অন্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে। যার কারণে সূর্যের তাপ বেশিই পরে এই অঞ্চলে।
যশোর, চূয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, খুলনা এই অঞ্চলে বিস্তৃত সমভূমি রয়েছে। এছাড়া এই অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ। সেখানেও বিশাল এলাকা জুড়ে সমভূমি।

ফলে তাপমাত্রা প্রবাহের যে তিনটি পদ্ধতি রয়েছে- পরিবহন, পরিচলন এবং বিকিরণ- এই তিনটি পদ্ধতির মধ্যে সমভূমি হওয়ার কারণে এই অঞ্চল দিয়ে পরিবহন পদ্ধতিতে তাপ প্রবাহিত হয়। ফলে সরাসরি তাপ লাগার কারণে পুরো অঞ্চলের তাপমাত্রা বেশি থাকে।

দ্বিতীয়ত, চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকা দিয়ে জলীয় বাষ্প প্রবেশ করায় তাপমাত্রা বাড়ে।

বঙ্গোপসাগরের পশ্চিমঘাট হচ্ছে খুলনা, চুয়াডাঙ্গা অঞ্চল। আর বঙ্গোপসাগর হচ্ছে জলীয় বাষ্পের উৎস। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্প এই অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে বলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অন্যান্য এলাকার তুলনায় এই এলাকায় বেশি থাকে। ফলে তাপমাত্রাও বেশি থাকে।

তৃতীয় এবং সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সূর্য থেকে চুয়াডাঙ্গার অবস্থান বা সোলার পজিশন। সূর্যের উত্তরায়নের কারণে তাপমাত্রা বাড়ে। পৃথিবী সাড়ে ২৩ ডিগ্রি কোণে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। ফলে ২১শে মার্চের পর থেকে ২১শে জুন পর্যন্ত উত্তর মেরুতে সবচেয়ে বেশি সূর্যের তাপ পৌঁছায়। আর বাংলাদেশ যেহেতু ২২ ডিগ্রি থেকে ২৬ডিগ্রি এরকম অবস্থানে আছে এবং কেন্দ্র রয়েছে ২৩ ডিগ্রির কাছাকাছি। ফলে সূর্যের যে সর্বোচ্চ কিরণ সেটা কিন্তু পড়ে এই সব অঞ্চলে। যে কারণে এই অঞ্চলে তাপমাত্রাটা বেশি থাকে।

গরমকালে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ থাকলেও শীতকালে অবশ্য সেটি থাকে না। বরং শীতকালে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসে, চুয়াডাঙ্গা সেসব অঞ্চলের অন্যতম।

চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে তাপমাত্রা শীতকালে কম থাকার কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, এর জন্য দায়ী আসলে শীতকালে প্রবাহিত শুষ্ক বাতাস। শীতকালে বাংলাদেশের উপর দিয়ে যে শুষ্ক বাতাস বয়ে যায় তা সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে আসে।

উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে এই শুষ্ক বাতাস বাংলাদেশে প্রবেশ করে দুই ভাগে বিভক্ত হয়। হিমালয়ের একপাশ দিয়ে শুষ্ক বাতাস ঢুকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা- এসব অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে।

আর দ্বিতীয়টি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে। এই দুটি বায়ু-প্রবাহের মধ্যে যেটি বেশি সক্রিয় বা শক্তিশালী থাকে সেবছর ওই অঞ্চলে বেশি শীত অনুভূত হয়।

দাবদাহের কারণে যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় মানুষজন বাড়ি থেকে খুব একটা বের হচ্ছেন না। বিশেষ করে দুপুর বারোটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত অনেকে রাস্তায় চলাচল করছেন না।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)