দূর্ণীতি সংক্রান্ত সংবাদ নিয়ে পত্রিকায় প্রধান শিক্ষককের হয়ে ভৌতিক প্রতিবাদ!

রঘুনাথ খাঁ:
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর প্রাণকৃষ্ণ স্মারক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে দুটি পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে ক্ষুব্ধ সুবিধাবাদী চক্রটি প্রধান শিক্ষকের নাম ব্যবহার করে রবিবার একাধিক পত্রিকায় প্রতিবাদ ছাপিয়েছে। বিষয়টি নজরে আসার পর তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অনিয়মের মাধ্যমে গঠিত নিয়োগ বোর্ড জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ি বাতিল করা হবে।
এদিকে বিষ্ণুপুর প্রাণকৃষ্ণ স্মারক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে একজন করে কম্পিউটার অপারেটর ও একজন আয়া নিয়োগে ১৬ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্য হওয়ার বিষয়টি ক্রমশঃ বেরিয়ে এসেছে। ফলে দূর্ণীতির মাধ্যমে নিয়োগ দিতে মরিয়া ওই চক্রটি প্রধান শিক্ষকসহ পরিচালনা পরিষদের একাংশের কাছে চ্যালঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর প্রাণকৃষ্ণ স্মারক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার মÐল জানান, গত ৯ মার্চ তার প্রতিষ্ঠানে একজন ল্যাব এসিসট্যান্ট কাম কম্পিউটর অপারেটর এবং একজন আয়া পদে নিয়োগ বোর্ড বসানো হয়। সেখানে ল্যাব এসিসট্যান্ট কাম কম্পিউটর অপারেটর পদে আট জন ও আয়া পদে ছয় জন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। তিনি ও সভাপতির কোন প্রশ্ন না নিয়েই জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) আজাহার হোসেন সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম টুকুকে নিয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা গ্রহণ করেন। বোর্ডে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাকী বিল্লার পক্ষে তার প্রতিনিধি একাডেমকি সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। যদিও পরীক্ষা শেষে তাৎক্ষণিক বাছাইয়ে ল্যাব এসিসট্যান্ট কাম কম্পিউটর অপারেটর পদে শ্যামনগরের পুর্ব দুর্গাবাটি গ্রামের মধুসুধন মÐল ও আয়াপদে তাপসী সরদারকে মনোনীত করে সাইফুল ইসলাম বাদে অপর চারজন শীটে সাক্ষর করে চলে যান। শিক্ষা অফিসারের নিয়োগ বোর্ডে না থাকায় তার সাক্ষর পরে নেওয়ার চেষ্টা ও চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নতুন পরিপত্র অনুযায়ি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের ১১ সদস্য কমিটিতে বিরোধ তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে যান তিনি। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাজাহান কবীর সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ি নিয়োগ প্রক্রিয়া না হওয়ায় নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য তাকে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ি তিনি বিষয়টি নিয়ে পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এরই মাঝে মধুসুধণ মÐলকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না মর্মে অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর কুমার দাশ ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকতা বাকী বিল্লাহ গত ২৭ মার্চ সকালে বিদ্যালয়ে তদন্তে আসেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিস্তারিত জেনে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হলে তা দ্রæত চুড়ান্ত করার নির্দেশ নতুবা কেন নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে না তা তাকে বিস্তারিত লিখে জানানোর জন্য বলে যান। এরপরই দাতা সদস্য গোবিন্দ লাল সরদারের ভাই বিদ্যালয়ের করণিক কাম লাইব্রেরিয়ান রাধ্যেশ্যাম সরদার রেজুলেশন খাতাসহ বিভিন্ন কাগজপত্র তার কাছে না দিয়ে নিজের আলমারিতে রেখে দেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়। এরপর থেকে ওই নিয়োগ বৈধ করতে গোবিন্ধ লাল সরদার তার ভাই র‌্যাধেশ্যামকে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। পরবর্তীতে তাপসী সরদারও নিয়োগ পাওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। কোনভাবেই সর্বশেষ চলতি বছরের ১০ জানুয়ারির পরিপত্রের বাইরে যেয়ে বসানো নিয়োগবোর্ড অনুযায়ি কাউকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে ২৮ মার্চ স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়।
প্রধান শিক্ষক আরো জানান, রবিবার সকালে তিনি জানতে পারেন যে, সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার ২৮ মার্চের প্রতিবেদনকে ঘিরে রবিবার ওই পত্রিকায় ও পত্রদূত পত্রিকায় তার নাম উল্লেখ করে প্রতিবাদ ছাপানো হয়েছে। কালের চিত্র পত্রিকায় তিনি নিজে প্রতিবাদকারি ও পত্রদূত পত্রিকায় তার কাছ থেকে সাক্ষর করিয়ে নিয়ে প্রতিবাদ দেওয়া হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে যিনি তার কাছ থেকে সাক্ষর করিয়ে নিয়ে প্রতিবাদ ছাপিয়েছেন তার নাম না দিয়ে তার (প্রধান শিক্ষক) নাম ব্যবহার করা হয়েছে। বিতর্কিত নিয়োগকে বৈধ করতে একটি গ্রæপ এ কাজ করেছে। তার কোন সাক্ষর পা ফোনালাপ ছাড়াই কিভাবে তার নাম ব্যবহার করে প্রতিবাদ ছাপা হলো তা তিনি সংশ্লিষ্ট পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছেন।
পত্রদূত পত্রিকা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলা সম্ভব না হলেও কালের চিত্র পত্রিকার সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু আহম্মেদ বলেন, তার স্থানীয় প্রতিনিধি কিভাবে এ প্রতিবাদ পাঠিয়েছে তা নিয়ে তিনি কথা বলার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দুটি পদে নিয়োগ নিশ্চিত করতে লাল দাদা প্রভাব খাটিয়ে কম্পিউটার অপারেটর পদে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধিকে দুই লাখ, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে এক লাখ ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দুই লাখ টাকা ছাড়াও আয়া পদে তাপসীর নিয়োগ নিশ্চিত করতে ওই তিন প্রতিনিধিকে চার লাখ টাকা দিয়ে খরচ বাদে ১৬ লাখ টাকার অবশিষ্ঠাংশ নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন লাল ভাই। লাল দাদা আয়া পদে তাপসীকে নিয়োগ নিশ্চিত করতে জনৈক ব্যবসায়ি মনীষ দাসের মাধ্যমে আট লাখ টাকা নিয়েছেন। এ ছাড়া মধু সুধন মÐলের চাকুরি নিশ্চিত করতে মা রেণুকা বালা ও ভাগ্নি জামাই লিটন মÐলকে সঙ্গে নিয়ে লাল দাদার বাড়িতে যেয়ে নিয়োগ বোর্ডের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে নগদ চার লাখ টাকা ও আইএফআইসি ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখা থেকে লাল দাদার ভগ্নিপতি বিষ্টু সরদারের কৃষি ব্যাংকের কালিগঞ্জ শাখার হিসাবে চার লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে মর্মে প্রচার রয়েছে। ২৭ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে নীচে অপেক্ষমান লাল দাদা সাতক্ষীরার সাংবাদিক মিনালকে হুমকি দেন। একপর্যায়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় বোর্ডের জন্য খরচ হওয়া টাকা কিভাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের ফেরৎ দেবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন লাল দাদা কৌশলে স্ব স্ব প্রত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধিদের দিয়ে প্রতিবাদ লিপির ছাপানোর জন্য জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারেন। যদিও লাল দাদা সাংবাদিকদের বলেন, একটি মহল সুবিধা বি ত হয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। প্রতিবাদ না দিয়ে থাকলে প্রধান শিক্ষক এর প্রতিবাদ করতে পারেন।
এদিকে মধুসুধন মÐল নিজেকে ঘুষমুক্ত বোর্ডের মাধ্যমে সেরা হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, বয়স শেষ হয়ে গেছে। নিয়োগটা না হলে উপায় নেই। তবে গোপাল সরদার নিয়োগে টাকা দেওয়ার কথা অস্বীকার না করেই বলেন, তার মেয়ের নিয়োগ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। যুগ যেভাবে চলছে সেভাবে তাকে তো এগোতে হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)