নলতায় ইউনিক ক্লিনিক বন্ধের দাবিতে সিভিল সার্জনের কাছে অভিযোগ

হাফিজুর রহমানঃ ভুল চিকিৎসায় একের পর এক রোগীকে হত্যা, পরীক্ষার নামে নানান অপচিকিৎসায় ডাঃ অনন্যার কসাই খানা খ্যাত ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের দাবি সহ ভুক্তভোগী রোগী ও এলাকাবাসী সিভিল সার্জন এর নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা কদমতলা মোড় নামক স্থানে গড়ে ওঠা ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে গত ২৩ মার্চ সহ এর আগেও রোগীকে ভুল অপারেশনে হত্যা, স্কুলছাত্রীকে অপচিকিৎসা, ভুল রিপোর্টে জীবননাসের চেষ্টা সহ একাধিক অভিযোগে সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ দিলেও সিভিল সার্জন অফিসের বড়বাবু খ্যাত প্রধান সহকারি আশেক নেওয়াজ এর অদৃশ্য শক্তিতে ফাইল বন্দি হয়ে আর আলোর মুখ দেখেনি । সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগের ডাঃ অনন্য রানী, আশাশুনি থানার প্রতাপনগর গ্রামের মাসুম হোসেন সহ ৪ জন শেয়ারে ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নাম দিয়ে ৩ তলা বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়া ডাক্তার, নার্সবিহীন অনন্যা নির্ভর করে হাসপাতালটি চালিয়ে আসছে। অথচ এই এই ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চোখ ধাঁধানো লাইটিং সাইনবোর্ড হরেক রকমের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাম থাকলেও হাসপাতালে কোন ডাক্তারের সন্ধান মেলে না। গত ৩ জানুয়ারি কালিগঞ্জ উপজেলার ভাঙানমারি গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের স্ত্রী ফুলজান বিবিকে পেটের ব্যথা নিয়ে ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাঃ অনন্যার চেম্বারে নিয়ে আসে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে পেটে টিউমার অপারেশন করে।পরবর্তীতে বাড়িতে নিয়ে রোগী অসুস্থই পড়লে পুনরায় ইউনিক ক্লিনিকে নিয়ে আসে। কিন্তু রোগীর অবস্থা দেখে তাড়িয়ে দিলে তারা সাতক্ষীরা হার্ট ফাউন্ডেশনে ডাঃ শরিফুল ইসলাম, ডাঃ ফয়সাল, ডাঃজেড আতিক এর শরণাপন্ন হলে তারা আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রায় দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা খরচ করে আগে ভুল অপারেশন হয়েছে বলে পুনরায় অপারেশন করে। কিন্তু তখনো রোগীর অবস্থা সংকটাপূর্ণ ছিল পরবর্তীতে ওই রোগী বাড়িতে এনে কিছুদিন পরে মারা যায়। এ ব্যাপারে ওই রোগীর পুত্র তৌহিদুল ইসলাম সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন বরাবরঅভিযোগ দিলে সিভিল সার্জন ৩ সদস্য একটি তদন্ত কমিটি করে দিলেও আজও পর্যন্ত সেই তদন্তের আলোর মুখ দেখেনি। অথচ অভিযোগের সময় রোগী বেঁচে ছিল ওই তদন্ত কমিটির প্রধান কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল কবির, সিভিল সার্জন অফিসের একজন ডাক্তার এবং কালিগঞ্জ হাসপাতালেরএকজন ডাক্তারসহ ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করে দেয়।এগুলো আজও বড়বাবুর ফাইল বন্দি হয়ে আছে। গত কিছুদিন আগে নলতা গ্রামের নবম শ্রেণী এক ছাত্রীকে ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পেটের ব্যথার জন্য ভর্তি করে। তার স্বজনদের নিকট থেকে পরীক্ষার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে অপারেশনের জন্য কলারোয়া একজন পাইলস ডাক্তারের নিকট পাঠায়। সেখানে ভুল অপারেশনে রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় সাতক্ষীরা একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ইউনিক ক্লিনিকে প্রতিবাদ করলে তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়। গত ১৬ মার্চ দেবহাটা থানার কালাবাড়িয়া গ্রামের ওসমান গনির কন্যা নাংলা গ্রামের রবিউল ইসলাম এর স্ত্রী শামীমা পারভীনকে সন্তান সম্ভাবা অবস্থায় ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াবেটিস সেন্টারে ডাঃ অনন্যার নিকট নিয়ে যায়। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা নামে ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে বলে যে পেটের বাচ্চা মারা গেছে। এই মুহূর্তে অপারেশন করার জন্য ৫০০০ টাকা লাগবে। বিষয়টি তাদের সন্দেহ হলে তারা তাৎক্ষণিক সাতক্ষীরা রেটিনাতে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে সেখানকার ডাক্তাররা জানান রোগী এবং তার বাচ্চা সুস্থ আছে কোন ধরনের অসুবিধা নাই। ওই অবস্থায় যদি তাকে অপারেশন করা হতো তাহলে তার পেটের বাচ্চা মারা যেত। বিষয়টি জানতে পেরে ওসমান গনি ডাক্তার অনন্যা এবং ইউনিক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর বিরুদ্ধে সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হয়নি বলে জানান। এ ব্যাপারে ডাঃ অনন্যার নিকট একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বুলবুল কবিরের নিকট ফোন দিলে তিনি ব্যস্ততার জন্য কথা বলতে পারেননি। এলাকাবাসী অতি দ্রুত ডাক্তার নার্স বিহীন অবৈধ ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক বন্ধের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)