রমজানে বাজার ভাবনায় স্বস্তি চায় দিনমজুর মানুষ

মোঃ আলফাত হোসেন:
পবিত্র মাহে রমজানে বছরের অন্য মাসের চেয়ে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ও ভোগ্যপণ্যের চাহিদা একটু বেশি থাকে। তাই এ উপলক্ষ্যে নিত্যপণ্যের বাজার এখন বেশ সরগরম। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেশ আকাশছোঁয়া। চাল, ডাল, ছোলা, সয়াবিন, চিনি, গ্যাস সিলিন্ডার, ফলমূল থেকে শুরু করে অধিকাংশ পণ্যের দাম আগের চেয়ে বেশ চড়া। পণ্যের দাম ভোক্তার ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে সরকার ইতোমধ্যে কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। তারপরও পণ্যের দাম যা দাঁড়িয়েছে, তা নিম্নবিত্তের ঘাম ছোটাচ্ছে।
বিশ্বের অনেক দেশেই সারা বছর পণ্যের দাম যতই থাকুক না কেন, পবিত্র রমজানে কিছু কিছু ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশের ক্ষেত্রে তা অনেকটাই ভিন্ন। কিছু অসাধু চক্রের হাতে বন্দি হয়ে থাকে আমাদের বাজার ব্যবস্থা। সারা বছর বাজারের অবস্থা যাই থাকুক না কেন, রমজানকে কেন্দ্র করে কিভাবে পণ্যের দাম বেশি বাড়িয়ে মুনাফা একটু বেশি করা যায়, এ নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। এ অবস্থায় উচ্চবিত্ত কিংবা যাদের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভালো; তারা কোনোরকমে সামলে নিলেও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ।
ব্যবসায়ীদের মজুতের প্রবণতা যদি নিন্দনীয় হয়, তবে ভোক্তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সদাইপাতি কেনার মানসিকতাও পরিত্যাজ্য। কখনো কখনো মাসের মোটা বাজার যেমন, চাল, আটা, ডাল, তেল, চিনি, গুঁড়া দুধ, নুডলস একবারে কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়। এটা ঠিক আছে; কারণ, এতে দাম একটু কম পড়ে। আর তা সাধারণ মানুষের পক্ষে একটু সুবিধাজনক হয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, একবারে প্রয়োজনের তিন বা চার গুণ পণ্য ক্রয় করে বাসায় মজুত করে রাখেন। মাসে সয়াবিন তেল প্রয়োজন পাঁচ লিটার, তিনি হয়তো ১৫ লিটার কিনে রাখছেন, গাড়ি ভরে ভরে পণ্য কিনে নেন অনেকে। কিন্তু তাঁরা চিন্তা করেন না, তাঁদের এই অতিরিক্ত ক্রয়–মানসিকতার কারণে অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ দরিদ্র মানুষ, যাঁদের আয় বাড়েনি কানাকড়িও। এখন অতিরিক্ত ক্রয়মানসিকতার এসব ভোক্তাকে শাস্তির আওতায় আনবে কে? এ বিষয়ে আইনকানুন, বিধিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে মনে হয় না।এ কঠিন সময়ে নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষকে সাহায্যের জন্য এখনই জনবান্ধব নীতি গ্রহণ করা উচিত।
প্রয়োজনে সরকারের পক্ষ হতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং উদ্যোগের পাশাপাশি নজরদারি বাড়িয়ে বাজারে স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে প্রতিটি পাইকারি ও খুচরা দোকানের সামনে ঝুলিয়ে দিলে ক্রেতাদের থেকে বাড়তি দাম আদায় বন্ধ হতে পারে,পবিত্র রমজানে মানুষ যাতে বাজারের ভাবনা ও দুশ্চিন্তায় থেকে মুক্ত হয়ে ইবাদাত-বন্দেগি ও সিয়াম সাধনায় নিমগ্ন হতে পারে, এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা একান্তই কাম্য।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)