হাত, পা ভেঙে শ্বাসরোধ করে হত্যা;২৬ বছরে ও বিচার হয়নি আলোচিত কৃষক সাইফুল্লাহ লস্করের

স্টাফ রিপোর্টার:

“১৯৯৬ সালে ঘাতকদের গুলিতে প্রাণ হারান দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক স.ম আলাউদ্দিন । পুলিশ, ভ‚মিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা মিলে ২০০৯ সালের ৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বাড়ির বাইরে নিয়ে আমার স্বামী সাইফুল্লাহ লস্করকে হাত, পা ভেঙে শ্বাসরোধ করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। । দীর্ঘ ২৬ বছরে আলাউদ্দিন হত্যার বিচার হয়নি। হত্যা মামলায় সিআইডি আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে।তাহলে ১৪ বছরে আমার স্বামীর বিচার হবে এমনটি আশা করি কিভাবে ? এ দেশের মাটিতে আমার স্বামী হত্যার বিচারের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম তীব্রতর হবে এটা ভাবতে কষ্ট হয়। এরপরও বেঁচে আছি এটা সৌভাগ্য।”

রবিবার সকালে ঢাকায় অবস্থানকরাকালিন মোবাইল ফোনে এক সাক্ষাৎকারে প্রয়াত কৃষক নেতা সাইফুল্লাহ লস্করের ১৪তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে কি ভাবছেন এমন প্রশ্নের জবাবে উচ্চ রক্তচাপ ও হাড়ের ক্ষয়সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার (৬৯) সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই তার আর্তি জানান।
এদিকে সাইফুল্লাহ লস্করের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠণ বিভিন্ন কর্মসুচি হাতে নিয়েছে।
ভূমিহীন জনপদের একাধিক সূত্রে জানা যায়, দেবহাটার নোড়ারচকে সাবেক যুবদল নেতা নাসিম ফারুক খান মিঠু ও ইউসুফ আব্দুল্লাহ’র ইজারাকৃত জলমহল ভূমিহীনরা দখলে নেওয়ায় ভূমিদস্যুরা সাতক্ষীরা থেকে ভূমিহীন আন্দোলন মুছে ফেলার জন্য দু’টি বড় এনজিও প্রধানের সহযোগিতা নিয়ে পুলিশ ও ভূমিদস্যুরা শহরতলীর একটি বাগান বাড়িতে দফায় দফায় বৈঠক করে। ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর রাতে তৎকালিন পুলিশ সুপার এসএম মনিরুজ্জামান (বর্তমানে অবসরে), সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম কামরুজ্জামান ছয় মাস আগে নির্বাচিত সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কমিটির সদস্যদের সংবর্ধনা দিয়ে সাংবাদিকদের কাছের মানুষ হিসেবে নিজেদে কে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। আগে থেকে সাইফুল্লাহ লস্করের হত্যার মিশনের পরিকল্পনা করে নিজেকে নির্র্দোষ প্রমান করতে ৪ ডিসেম্বর তৎকালিন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার এসএম মনিরুজ্জামান ( চট্টগ্রামের এক মাদক মামলায় এক থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আসামীদের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বাধ্য করার দায়ে তিন বছরের জন্য বহি®কৃত ) বেড়ানোর কথা বলে সাতক্ষীরার তৎকালিন জেলা প্রশাসককে নিয়ে কালীগঞ্জের বন্দকাটি গ্রামের কুখ্যাত হরিণ শিকারী সাত্তার মোড়লের লে সুন্দরবনে রাত কাটান। রাতে সাত্তার মোড়ল ও তার সহযোগি পাতাখালির কুখ্যাত হরিণ শিকারী আব্দুল আজিজ প্রশাসনের দু’ কর্মকর্তার তাস খেলার অংশীদার ছিলেন বলে একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করে। সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের দু’ জেলা প্রধানের একইসাথে সুন্দরবন বিহার সাতক্ষীরার জন্য সেটাই ছিল প্রথম।
২০০৯ সালের ৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির প্রশিক্ষণরত ্উপপরিদর্শক (টিএসআই) নজরুল ইসলাম ও সিপাহী শাহজালাল (কংনং-২৪৮) কৃষক সংগ্রাম সমিতির সহ-সভাপতি ও জেলা ভ‚মিহীন সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সাইফুল্লাহ লস্করকে কাটিয়া লস্করপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে বাইরে ডেকে আনেন।
পরদিন ভোরে আকবর লস্করের বাড়ির পুকুর পাড়ে কাঠ ও বিচালী রাখার ঘরের মধ্যে সাইফুল্লাহ লস্করের রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় সদর থানার উপপরিদর্শক মনোয়ারা খাতুন ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা (৯২/২০০৯নং) করেন। মামলার তদন্তভার সদর থানার উপপরিদর্শক আব্দুস সবুরের(বর্তমানে প্রয়াত) উপর ন্যস্ত হয়। ৬ ডিসেম্বর রাতে জেলা জাপা নেতা ও ভ‚মিহীনদের পৃষ্টপোষক অ্যাড. আব্দুর রহিমকে আহবায়ক ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা শাখার সম্পাদক বর্তমানে সাংসদ অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট সাইফুল্লাহ লস্কর হত্যার বিচার বাস্তবায়ন সংগ্রাম ও সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। পুলিশ সুপার এসএম মনিরুজ্জামান, সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার শামসুল আলম সরকার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম কামরুজ্জামান ও কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির শিক্ষানবীশ উপপরিদর্শক নজরুল ইসলামসহ যুবদল নেতা ভ‚মিদস্যু নাসিম ফারুক খান মিঠু, আশাশুনির শরাফপুরের ভ‚মিদস্যু প্রয়াত বসির আহম্মেদ, শোভনালী ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম (প্রয়াত), চম্পাফুল ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক, ভ‚মিদস্যু নলতার মহব্বত মীর (প্রয়াত), ইউসুফ আব্দুল্লাহসহ হত্যাকারিদের গ্রেফতারের দাবিতে পরদিন সকালে বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে আপামোর জনতা শহীদ আলাউদ্দিন চত্বরে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এতে সারা সাতক্ষীরা অচল হয়ে পড়ে। কর্মসূচি পালনকালে সাইফুল্লাহ লস্করকে হত্যার পিছনে ভ‚মিহীনদের পৃষ্টপোষক সাতক্ষীরার দু’টি বড় বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) নির্বাহী পরিচালকের হাত আছে বলে সুধী সমাজের নেতৃবৃন্দ দাবি করেন । যা’ পরিদিন বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়। জনগনের আই ওয়াশ করতে কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির শিক্ষানবীশ উপপরিদর্শক নজরুল ইসলামকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয় । ক্ষুব্ধ সাতক্ষীরাবাসির দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন দিকে ঘোরাতে তৎকালিন জেলা পুলিশ সুপার এসএম মনিরুজ্জামান ২০০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর রাতে দেবহাটার নোড়ারচকে ভ‚মিহীনদের হামলার শিকার হয়েছেন মর্মে কাল্পনিক নাটক তৈরি করে সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় সাইফুল্লাহ লস্করের ঘনিষ্ট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাÐার প্রয়াত এনামুল হক বিশ্বাসসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা পুলিশ সুপারের উপর হামলার ঘটনায় দোষী ভ‚মিহীনদের গ্রেফতারের দাবি জানান। এ মামলা থেকে বাঁচানোর শর্তে সাইফুল্লাহ লস্কর হত্যার বিচার বাস্তবায়ন সংগ্রাম ও সমন্বয় কমিটির সদস্য (জেএসডি নেতা) কুদরত-ই -খুদাকে নোড়ার চকের ভ‚মিহীনদের নিয়ে মিছিল করিয়ে নিজের বরাবর স্মারকলিপি ও জেলা ভূমিহীন সমিতির একাংশের সভাপতি কওছার আলীকে দিয়ে সঙ্গীতা মোড় এলাকায় মানববন্ধন করান পুলিশ সুপার এসএম মনিরুজ্জামান। পরবর্তীতে শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে তৎকালিন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হকসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি কমঃ রাশেদ খান মেনন শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে পৃথক সমাবেশে সাইফুল্লাহ লস্কর হত্যার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ঘোষণা দেন। একপর্যায়ে সাইফুল্লাহ লস্করকে হত্যার যথার্থ পরিকল্পনাকারির পুরষ্কার হিসেবে এসএম মনিরুজ্জামান অতিরিক্ত উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) হিসেবে পদোন্নতি পান বলে আবাল বৃদ্ধ বণিতার মুখেমুখে উচ্চারিত হয়।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের তৎকালিন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মধুসূধন মÐল ময়না তদন্তে সাইফুল্লাহ লস্করকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দেন। অ্যাড. আব্দুর রহিম, অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহসহ কয়েকজন আইনজীবী পরামর্শ করে এজাহার লিখলেও নিহতের স্বজনরা পরে তা কাট ছাট করেন। নিহতের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার বাদি হয়ে কাটছাট করা এজাহারটি ৬ ডিসেম্বর থানায় জমা দিলে তা হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির শিক্ষানবীশ উপপরিদর্শক (টিএসআই) নজরুলসহ দু’জন পুলিশ ২০০৯ সালের ৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে সাইফুল­াহ লস্করকে তার বাড়ি থেকে ডেকে আনেন বলে মামলায় উলে­খ করা হয়। পুলিশ ও সুবিধা বি ত ভ‚মিদস্যুরা সাইফুল্লাহ লস্করকে হত্যা করেছে মর্মে মামলায় বলা হয়। এ ছাড়া ঘটনার রাতে পুলিশ ও সাদা পোশাক পরিহিত কিছু লোকজন সাইফুল্লাহ লস্করের বাড়ির আশে পাশে অবস্থান করছিল বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। মামলার তদন্তভার সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক(বর্তমানে খুলনার তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সরদার মোশাররফ হোসেনের উপর ন্যস্ত করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়না তদন্ত প্রতিবেদন একটি স্থানে গরমিল দেখা দেওয়ায় তৎকালিন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার এসএম মনিরুজ্জামান ওই বছরের সাত ডিসেম্বর চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত টিম গঠণ করেন। ২০ ডিসেম্বর ওই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনে সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের একটি অংশে জখমীর স্থান নিয়ে ভিন্নতা তুলে ধরেন। পুলিশ ২০০৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর কালীগঞ্জের চম্পাফুল ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন ব্নিপি’র সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হক গাইন (৬৪) ও ২০১০ সালের ৩০ জুন সাতক্ষীরা শহরের থানাঘাটার আবু সাঈদ(৫৮) ওরফে নাক কাটা সাঈদকে গ্রেফতার করে রিমাÐে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট থেকে তৎকালিন জেলা যুবদল নেতা ও সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু ও আশাশুনির শোভনালী ইউপি’র তৎকালিন চেয়ারম্যান ভ‚মিদস্যু শহীদুল ইসলাম(প্রয়াত) চার সপ্তাহের জন্য অন্তঃবর্তীকালিন জামিন নেন। একই সময়ে সাতক্ষীরার বহুল আলোচিত ভ‚মিদস্যু আশাশুনির সরাফপুরের বসির আহম্মেদ(প্রয়াত) ও আলীপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ একইভাবে হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জন্য জামিন গ্রহণ করেন। পরে তারা আর জামিনের আবেদন বাড়ান নি। এমনকি আদালতের নির্দেশে নি¤œ আদালতে তারা আত্মসমর্পণ করেননি।
একপর্যায়ে মামলাটি হিমাগারে পাঠাতে বাদির আবেদন ছাড়াই সদর থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম কামরুজ্জামান তৎকালিন জেলা পুলিশ সুপার এসএম মনিরুজ্জামানের মাধ্যমে ২৩ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ পুলিশের গোয়ন্দা, অপরাধ ও তদন্ত শাখায় মামলার তদন্তভার হস্তান্তরের জন্য পাঠান। ৩০ ডিসেম্বর তদন্তভার ওই বিভাগেই ন্যস্ত হয়। ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি পুলিশের গোয়েন্দা, অপরাধ ও তদন্ত সাতক্ষীরা শাখার পরিদর্শক আমির হোসেন আমু তদন্তভার বুঝে নেন। ৩১ জানুয়ারি সংস্থার খুলনা বিভাগীয় পুলিশ সুপার (সিআইডি) আব্দুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে বাদিকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেন। এ ঘটনায় পরদিন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর মামলার তদন্তভার একই সংস্থার একই শাখার উপপরিদর্শক লস্কর জায়াদুল হকের(বর্তমানে পিরোজপুরে) উপর ন্যস্ত করা হয়। ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর মামলার তদন্তভার একই সংস্থার বাগেরহাট শাখার পরিদর্শক সাইফুল ইসলামের উপর ন্যস্ত করা হয়। তদন্তকালে সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বাদি ও তার স্বজনদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানির অভিযোগ ওঠে।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের মেয়াদে জামিনে থাকা ভ‚মিদস্যুদের সন্ধিগ্ধ আসামী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার না করে আদালতে দায়সারা জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন জানিয়েই তার দায়িত্ব শেষ করেন। সাড়ে চার বছরে সাতজন তদন্তকারি কর্মকর্তা পরিবর্তণ করা হয়। এ হত্যা সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যেয়ে একুশে টেলিভিশনের সাংবাদিক দীপু সরোয়ার, ক্যামেরাম্যান আনোয়ার হোসেনকে হুমকি ও সাতক্ষীরার সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে ২০১০ সালের ৮মে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় জেল হাজতে যেতে হয়। হুমকির সম্মুখীন হন আন্দোলকারি নেতৃবৃন্দ। মামলা থেকে বাঁচতে এসএম মনিরুজ্জামান প্রভাব খাটিয়ে তিন বছর আগে রাজশাহী থেকে খুলনা রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন। তদন্তকারি কর্মকর্তা তার কাছের লোক বলে পরিচিত বাগেরহাট গোয়েন্দা, অপরাধ ও তদন্ত শাখার পরিদর্শক সাইফুল ইসলামকে কৌশলে তদন্তভার ন্যস্ত করানো হয়।

এদিকে সাইফুল্লাহ লস্কর হত্যার বিচার বাস্তবায়ন সংগ্রাম ও সমন্বয় কমিটির সদস্যরা অধিকাংশই ক্ষমতাসীন ১৪ দলের সদস্য হওয়া, বাদি ও তার পরিবারের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব, অ্যাড. আব্দুর রহিমের মৃত্যু, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিঠু খানসহ সন্ধিগ্ধ হত্যাকারির সঙ্গে বাদির স্বজনদের ঘনিষ্টতা, অস্তিত্ব সঙ্কটে থাকা জেলা ভূমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলী নুর খান বাবলু দোষী এক পুলিশ কর্মকর্তার অর্থায়নে ২০১৩ সালে একটি সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের সঙ্গে স্বপরিবারে বনভোজনে সুন্দরবনে বেড়াতে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে লস্কর হত্যাকারিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন থেমে যায়। যদিও আলী নূর খান বাবুল তা অস্বীকার করেন। ২০১৪ সালে নামমাত্র স্মরণসভা করেই দায়িত্ব শেষ করে জেলা ভ‚মিহীন সমিতি। হত্যার নেপথ্যে থাকা সাতক্ষীরার একটি বড় বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে বিচার বাস্তবায়ন কমিটির একাধিক সদস্যের সুসম্পর্কের কারণে তারা আন্দোলন সংগ্রামে নিরুৎসাহিত হন বলে সুশীল সমাজের অনেকে মনে করে। একপর্যায়ে ২০১৫ সালের ৬ জুলাই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
চারটি ধার্য দিনে ভীতসন্ত্রস্ত বাদি পুলিশ ও ভূমিদস্যৃদের বিরুদ্ধে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিচার পাওয়া যাবে না এমন চিন্তা চেতনাকে মাথায় রেখে আদালতে নারাজির আবেদন দাখিল না করায় ২০১৮ সালের ২১ জুন মামলাটির কার্যক্রম চলে যায় হিমাগারে।
বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি বিএম শামীমুল হক জানান, তারা বিচারের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন। এ উপলক্ষে তারা সোমবার সকাল ১০টায় মরহুমের কাটিয়াস্ত বাড়ি সংলগ্ন জমিতে কবর জিয়ারত শেষে সংক্ষিপ্ত স্মরণসভা করবেন। ভূমিহীন সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার জানান, তারা এ উপলক্ষে চালতেতলায় স্মরণসভা করবেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার জ্যেষ্ট আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. মোসলেমউদ্দিন বলেন, ময়না তদন্তে কোন ব্যক্তির অস্বাবাভিক মৃত‚্যর কথা উল্লেখ করলে সেই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তার আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের সূযোগ নেই। গনতান্ত্রিক দেশে এ ধরণের হত্যাসহ সকল হত্যার বিচার হওয়া উচিত। তবে বিচার পেতে হলে বিচারকার্যক্রমের সঙ্গে সকলের আন্তরিক হতে হবে। #

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)