কালিগঞ্জে সরকারি জমি দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ

আরাফাত আলী:
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে এলজিইডির সড়কের পাশে ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ণ বোর্ডের রেকর্ডকৃত জমিতে পাকা স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি জায়গা দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় পাকা বিল্ডিং নির্মাণকাজ বন্ধে উদ্যোগ নেয়া হলেও এলজিইডির সড়কের পাশে নির্মাণ কাজ অব্যাহত আছে। বড় অংকের উৎকোচ নিয়ে এলজিইডি’র সার্ভেয়ার আবুল বাশার কৌশলে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার সুযোগ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিন জানা গেছে, মহৎপুর মৌজাধীন কালিগঞ্জ-শ্যামনগর সড়কের পাউখালী থেকে নাজিমগঞ্জ অভিমূখে এলজিইডি’র পিচের রাস্তার গা ঘেষে ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নামে রেকর্ডকৃত জমিতে আদি যমুনা নদীর তীরে মহৎপুর গ্রামের নেছার উদ্দীন তরফদারের ছেলে রেজাউল ইসলাম (৪৮) দুইটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছেন। দীর্ঘদিন টিনের বেড়ার আড়ালে এই পাকা স্থাপনা নির্মাণ করার কারণে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়নি। সম্প্রতি ইটের গাথুনির কাজ ছাদ পর্যন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর এলজিইডি ও পানি উন্নয়ণ বোর্ডের জায়গায় পৃথক দুইটি পাকা স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। নির্মাণাধীন দুইটি বিল্ডিংয়ের মাঝখানে উক্ত রেজাউল ইসলাম ও তার স্ত্রী রেশমা খাতুনের নামে রেকর্ডীয় জমি থাকলেও তারা সেখানে পাকা বসতঘর নির্মাণ না করে অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি জমি অবৈধভাবে দখলের জন্য স্থাপনা নির্মাণ করছেন। এর আগেও উক্ত রেজাউল ইসলাম সরকারি জমিতে একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে রেখেছেন। এবার তিনি একই সময়ে দুইটি পাকা স্থাপনা নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। উক্ত পাকা স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের জন্য স্থানীয় একজন ব্যক্তি গত ২৪ সেপ্টেম্বর উপজেলা প্রকৌশলী ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরপরই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্য সহকারী নাজিমুদ্দৌলা রসি ঘটনাস্থলে যেয়ে রেজাউল ইসলামকে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ রাখতে বলেন। অপরদিকে উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেয়ার পর সার্ভেয়ার আবুল বাশারকে ঘটনাস্থলে যেয়ে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। কিন্তু সার্ভেয়ার আবুল বাশার স্থাপনা নির্মাণকাজ বন্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো রেজাউল ইসলামের নিকট থেকে বড় অংকের উৎকোচ নিয়ে দ্রæত কাজ শেষ করার জন্য সুযোগ দিয়ে এসেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকালও সেখানে নির্মাণশ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে। সরকারি জায়গা অবৈধ দখল বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরব ভূমিকায় এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থাপনা নির্মাণকারী রেজাউল ইসলাম তরফদার জানান, ওয়াপদা কর্তৃপক্ষ নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বলায় তিনি কাজ বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু এলজিইডি’র জায়গায় এখনও নির্মাণ কাজ কেন করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাব দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
সার্ভেয়ার আবুল বাশারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলে যেয়ে রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি জায়গায় পাকা বিল্ডিং নির্মাণের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। পরে আমি বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী মহোদয়কে জানিয়েছি। নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে তার কোনো হাত নেই বলে দাবি করেন তিনি। তবে কাজ বন্ধ রাখার ব্যাপারে উদ্যোগ না নেয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন।
এবিষয়ে জানার জন্য উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইফতেখার উদ্দীন জোয়ার্দ্দার এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)