খালেদাকে বিদেশে পাঠাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পরিবারের চিঠি

ডেস্ক রিপোর্ট:
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্থায়ী মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন তার ভাই শামীম ইস্কান্দার। বৃহস্পতিবার এই চিঠি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিএনপি।

চিঠিটি আইন মন্ত্রণালয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে শামীম ইস্কান্দারের করা আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে এসেছে।’

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে অনেক দিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন বিএনপির নেতারা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিদ্যমান আইনে তাঁকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।

আদালতের নির্দেশের বাইরে করার কিছু নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীআদালতের নির্দেশের বাইরে করার কিছু নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশের আইনটা অগ্রাধিকার পাবে এবং সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশের আইনে যে অবস্থান, তাঁকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, আমি আগে বহুবার বলেছি, এখন আইনের এ অবস্থায় এটা পরিবর্তন করা যাবে না।’

খালেদাকে বিদেশে পাঠাতে হলে প্রথমে শর্তযুক্ত মুক্তি বাতিল করতে হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

বিদ্যমান আইনে খালেদার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই: আইনমন্ত্রী বিদ্যমান আইনে খালেদার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই: আইনমন্ত্রী
আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন সম্প্রতি এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দণ্ডিত হওয়ার পরও সাজা স্থগিত রেখে প্রধানমন্ত্রী ওঁনাকে বাসায় থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ওঁনাকে (খালেদা) বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে হয়ত আইনগত জটিলতা আছে। আদালতের নির্দেশনার বাইরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার সুযোগ নেই।’

তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের দাবি, নির্বাহী আদেশে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার সুযোগ আছে। তাঁর আইনজীবী কায়সার কামাল কয়েকদিন আগে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখন ওনারা যে কথাগুলো বলছেন যে, চিঠি পান নাই বা আদালতে যেতে হবে, সব কিছুই হচ্ছে ছল-চাতুরী। ছল-চাতুরী জাতির সাথে। রাষ্ট্রপক্ষ যেটা বলছেন, সেটা এখতিয়ার বহির্ভূত। কেননা খালেদা জিয়া মুক্ত আছেন এক্সিকিউটিভ অর্ডারে। আদালতের নির্দেশে না।’

খালেদার বিদেশে যাওয়া নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য সঠিক নয়: কায়সার কামাল খালেদার বিদেশে যাওয়া নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য সঠিক নয়: কায়সার কামাল
দুর্নীতির দুই মামলায় আদালতের রায়ে দণ্ড পেয়েছেন খালেদা জিয়া। দুই বছর জেলেও থেকেছেন। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে তাঁকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। এরপর কয়েক দফায় বেড়েছে সাজা স্থগিতের মেয়াদ।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ আদালত ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পর ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। পরের বছর ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট এই মামলায় তাঁর আপিল খারিজের পর শাস্তি বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকার আরেকটি বিশেষ আদালত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করেন। আদালত তাঁকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

খালেদা জিয়া বেশ কিছুদিন ধরেই ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার তাঁকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। এর আগেও চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল।

৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা, লিভারসিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। এ ছাড়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তাঁর। এরই মধ্যে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তাঁর হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।

সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে আবারও রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)