সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে তুলে নিয়ে পুলিশি নির্যাতন ও দায়েরকৃত দুটি মিথ্যা মামলার আট মাসেও আদালতে প্রতিবেদন জমা হয়নি!

রঘুনাথ খাঁ:

প্রকাশ্য দিবালোকে সাতক্ষীরা শহরের পিএন হাইস্কুলের পাশ থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা গোপনে আটকে রেখে পরের দিন চোখ বেঁধে ডিবি পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের পর নাশকতা ও চাঁদাবাজির দুটি মিথ্যা মামলায় দীপ্ত টিভি ও দৈনিক বাংলা ’৭১ এর সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে জেলে পাঠানোর আট মাসেও পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এ ঘটনায় সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালী মৌজার চÐীচরণ ঘোষ ও তাদেও শরীকদেও ফেলে যাওয়া ১৩২০ বিঘা জমি কাজী গোলোম ওয়ারেশ, আইডিয়ালের ডাঃ নজরুল ইসলাম, সখীপুরের আব্দুস সালামসহ একটি মহল জালজালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে ১৯৫৬ সাল থেকে ভোগ দখল করে আসছিল। পরবর্তীতে কাজী গোলাম ওয়ারেশ ব্যতীত অন্যন্যা জমির দাবিদাররা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে জমি ইজারা দিয়ে গত ৫০ বছওে ১৫০ কোটি টাকারও টাকা সরকারি রাজস্ব আত্মসাৎ কওে বলে জিপি লুৎফর রহমানের অভিযোগ। ২০১০ সালে পারুলিয়ার জনাব আলী ওই জমি খাস করার জন্য সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা জজ -২য় আদালতে মামলা করেন। বিচারক এসএম মাহামুদুর রহমান এক আদেশে জমির মালিক দাবিদারদের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বিনিময় দলিলের অন্য পৃষ্টার সঙ্গে ৬০,৬১ ও ৬২ নং পাতার হাতের লেখার সাথে মিল না থাকা, বয়নামার মূল কপি জমা না দেওয়া, খাল, রাস্তা ও কালভার্ট এসএ রেকর্ডভুক্ত করার আইনগত বৈধতা তুলে ধরে তা ত কিপূর্ণ জাল বলে উল্লেখ করেন। একইসাথে ওই জমি অ্যাড. চৌধুরী কুÐু বিকাশসহ দুই জনের নামে রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ দেন। সর্বশেষ ২০২১ সালে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিলেড বিভাগ ওই জমি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দেখভালের দায়িত্ব দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে জমির মালিক দাবিদাররা সুপ্রিম কোর্টে সিভিল রিভিউ ১৬৮/২১ দাখিল করলে গত ৩১ আগষ্ট তা প্রধানর বিচারপতির কাছে শুনানীর জন্য ৪২ নং ক্রমিকে তালিকাভুক্তি হয়। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ ছিদ্দিকির বিদায়ী সংবর্ধণা অনুষ্ঠানের কারণে ৯ নং ক্রমিক পর্যন্ত শুনানী হয়।
সূত্রটি আরো জানায়, ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর দেবহাটার সাপমারা খালের দুইপাশ থেকে উচ্ছেদ হওয়া ভূমিহীনসহ বিভিন্ন স্থানের প্রায় ৮০০ টি ভূমিহীন পরিবার সরকার নিয়ন্ত্রিত খলিশাখালির ১৩২০ বিঘা জমিতে বসবাস শুরু করে। জমিদারদেও প্রজা হিসেবে সুনীল স্বর্ণকারসহ সাত জন ওই জমি তাদের নামে রেকর্ডের জন্য আদালতে মামলা করে । যাহা আজো চলমান। জমির মালিক দাবিদাররা ওইসব ভূমিহীনদের নামে দ্রæত বিচার আইনের মামলাসহ কমপক্ষে ২০টি মামলা দেয়। ভূমিহীনদের উচ্ছেদের জন্য তারা প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করে। ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের সস্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ সভায় তৎকালি পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের বিরোধিতা স্বত্বেও ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করে আদালতে একের পর এক পরাজিত হওয়া গোলাম কাজী ও ডাঃ নজরুলদের ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ভূমিহীনদের পক্ষে ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি রিট পিটিশন দাখিল করা হয়। ২৭ ফেব্রæয়ারি শুনানী শেষে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ না করার জন্য স্টাটাসকো দেওয়া হয়। যার মেয়াদ পরবর্তীতে আবারো বাড়ানো হয়। হাইকোর্টেও আদেশ জানতে পেরে জমির মালিকানা দাবিদাররা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা কওে ভূমিহীনদের ইচ্ছামত গ্রেপ্তার, ইয়াবা ও অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করাতে থাকেন। ৪ নভেম্বর সকালে বদরতলা মাসের সেট থেকে পুলিশ ভূমিহীন ইউনুস আলীকে তুলে নিয়ে পারুলিয়া জেলেপাড়ায় অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। ্একই দিনে দ্রæত বিচার আইনে খালাস পাওয়া ১৬ জন ভূমিহীনের তিনজনকে আদালত চত্বর থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার নাম করে তুলে নিয়ে প্রথমে ডিবি পুলিশ হেফাজতে ও পওে দেবহাটা থানায় নিয়ে যেয়ে নির্যাতন করা হয়। পরদিন তাদেরকে অস্ত্র ও গুলিসহ পৃথক দুটি মামলা দিয়ে েেজলে পাঠানো হয়। চারজনের বিরুদ্ধে পৃথক দায়েরকৃত তিনটি মামলায় পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। তবে পুলিশের এহেন আইন বর্হিভুত কর্মকাÐের ঘটনায় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করায় সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান। এরপর গত বছরের ১৫ নভেম্বর পুলিশকে দূরে দাঁড়িয়ে রেখে আদালতে পরাজিত জমির মালিক দাবিদাররা ৭৮৫টি ভূমিহীনদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে ও লুটপাট করে উচ্ছেদ করে। বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করায় সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের নির্দেশে সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে শহরের পিএন হাইস্কুলের পাশ থেকে মটর সাইকেল থেকে নামিয়ে অপহরণ করেন সদও থানার পুলিশ পরিদর্শক আজিজ বিন তারেক ও উপপরিদর্শক লোকমান। বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে তাকে বিকেলে দেবহাটা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সাংবাদিকের অবস্থান সম্পর্কে পুলিশ মুখে ক্লুপ আটে। একপর্যায়ে বামপন্থী নেতা ও আন্তজার্তিক মানবাধিকার কর্মীদের বিবৃতির মুখে ২৩ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে পুলিশ সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁর অবস্তান নিশ্চিত করে। পরদিন তাকে হাতকড়া পরিয়ে বিভিন্নভাবে ভিডিও চিত্র ধারণ করে দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সকাল ১০টার পর রঘুনাথ খাঁকে নাশকতা ও চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চোখ বেঁধে প্রথমে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি ঘরে আটক রেখে চোখ বেঁধে হ্যাÐকাপ পরিয়ে পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান ও তার সহযোগীরা সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে ইলেকট্রিকশকসহ অমানুষিক নির্যাতন করেন। বিকেল ৫টার দিকে তাকে চোখ বেঁধে আদালতে নিয়ে আসা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবদের জন্য আদালতে ৫ দিনের রিমাÐ আবেদন জানানো হয়। পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য সাংবাদিক কল্যাণ ব্যাণার্জিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যেকে মানসিক নির্যাতন ও চরম অপমান করা হয়। ২৯ জানুয়ারি সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ জামিনে মুক্তি পান। এরপর আট মাস মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ ওই দুই মিথ্যা মামলায় আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেনি।
এ ব্যাপারে দেবহাটা থানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের সঙ্গে শুক্রবার বিকেলে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন কওে দেন।
তবে সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন ওই দু মামলায়(৮ ও ৯ নং দেবহাটা) আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন না আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)