দেবহাটায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও ক্রয়-বিক্রয় নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্টের অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার:

শিশু-কিশোর থেকে বয়োঃবৃদ্ধ, সকলের কাছেই বেশ পরিচিত ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ ঔষধ। সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো সিজনাল ডিজিস কিংবা যেকোন জটিল অসুখ দ্রুত নিরাময়ে বর্তমান সময়ে ব্যাপক হারে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রাগ লিখে থাকেন চিকিৎসকরা। দেশের প্রচলিত আইনে কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাই পারেন রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে নির্দিষ্ট মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ গ্রহণের পরামর্শ দিতে। কিন্তু বর্তমান সময়ে সে নীতির তোয়াক্কা করেননা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পল্লী চিকিৎসক ও ফার্মেসী গুলো। গ্রামাঞ্চলে একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে অনভিজ্ঞ পল্লী চিকিৎসকরা যেকোন রোগীর ব্যবস্থাপত্রেই অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন হরহামেশাই।

মূলত ঔষধ কোম্পানী গুলোর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েই এসকল পল্লী চিকিৎসক সরকারি আইন অমান্য করে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ ক্রয় ও সেবনের পরামর্শ দেন। এমনকি প্রত্যন্ত এলাকার ফার্মেসী গুলোতেই প্রেসক্রিপশন ছাড়াই দেদারছে বিক্রি হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রাগ। অনেক চিকিৎসক এবং ফার্মেসী মালিকেরা আবার অতিরিক্ত মুনাফার লোভে নামিদামি ঔষধ কোম্পানীর অ্যান্টিবায়োটিকের পরিবর্তে মিসব্র্যান্ডের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ রোগীদের গলধকরণ করাচ্ছেন। অ্যান্টিবায়োটিকের এমন লাগামহীন ব্যবহার ও বিকিকিনি রীতিমতো উদ্বেগজনক ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর।

সম্প্রতি সাতক্ষীরার দেবহাটায় রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে পল্লী চিকিৎসকরা অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ প্রদান ও ফার্মেসী গুলোতে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ব্যাপকহারে এই ড্রাগ বিক্রয় করায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনা করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। সোমবার (১০ এপ্রিল) উপজেলার পারুলিয়া ও সখিপুর বাজারের একাধিক ফার্মেসীতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন তিনি। মোবাইল কোর্টের অভিযানে রেজিস্ট্রার খাতায় লিপিবদ্ধ না করে অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক ড্রাগ বিক্রির দায়ে জনতা ফার্মেসীর মালিকসহ বেশ কয়েকজন ঔষধ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেন তিনি। পাশাপাশি ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টেটিভদের সাথে বৈঠক করে ফার্মেসী গুলোতে প্রতিনিয়ত সরবরাহকৃত অ্যান্টিবায়োটিকের পরিমান, ব্যাচ নম্বর ও অন্যান্য তথ্য রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ রাখার নির্দেশ দেন তিনি। তাছাড়া কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক রোগীদের কাছে সম্পূর্ণ কোর্সের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রাগ একসাথে বিক্রি এবং বিক্রয় পরবর্তী ওই চিকিৎসক ও রোগীর যাবতীয় তথ্য রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করার জন্যও ফার্মেসী মালিকদের নির্দেশনা দেন তিনি।

অভিযানকালে নির্বাহী অফিসার খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ড্রাগ এমন এক ধরণের ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই ওষুধ মানুষ বা পশুর দেহে প্রয়োগ করলে এটি শরীরের ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে বা এর বংশবিস্তার রোধের মাধ্যমে রোগ নিরাময় করে। কিন্তু ভুল গ্রুপের কিংবা অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবন মানবদেহের জন্য চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিকর। এরফলে মানবদেহের ওজন বেড়ে যাওয়া, টাইপ ওয়ান ডায়বেটিস, শরীরের প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হওয়ায় হাঁপানী, শ্বাসকষ্ট, এজমা রোগে আক্রান্তসহ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, স্থুলতার ঝুঁকি, পেটের প্রদাহ ও লিভারের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও ক্রয়-বিক্রয় নিয়ন্ত্রণে এ অভিযান অব্যহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)