বটিয়াঘাটার জলমায় দুর্বৃত্তদের তান্ডবে বাড়ী ভাংচুর, আহত- ৩

আব্দুর রশিদ, খুলনা :

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের তেতুলতলা এলাকায় ফিল্মি স্টাইলে লুটপাটের তান্ডব ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গত ৩০ মার্চ রাত আনুমানিক ১২টার সময় নারায়ণ মন্ডলের ছেলে হরিদাস মন্ডলের বাড়িতে এ নারকীয় নির্যাতন ও লুটপাটের তান্ডবের ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তদের হামলা, নির্যাতন ও লুটপাট তান্ডবের ভয়াবহ চিত্র দেখে রীতিমত হতবাক হয়েছেন এলাকাবাসী সহ আশপাশের লোকজন। এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। চলাচলের রাস্তাসহ আশেপাশের বসবাসকারী লোকদের ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ করে এই নির্মম তান্ডব চালানো হয়েছে। যা সিনেমার ঘটনাকেও হার মানিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দুর্বৃত্তরা দুটি বসতঘর একেবারে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। ঘরে থাকা আসবাবপত্র ও গৃহস্থালীর কাজের ব্যবহৃত মালামাল ভেঙে চুরে বাইরে ফেলে রেখে গেছে ,একটি রাইচ মিল ভাঙচুর করেছে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ধান, চাল, স্বর্ণ ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। এছাড়াও একটি নতুন কেনা ইজিবাইক নিয়ে চলে যায় তারা।এ ঘটনার সময় হরিদাস মন্ডল ও তার বৃদ্ধ বাবা মাকে বেধড়ক মারপিট করে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে থানা পুলিশ খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী হরিদাস মন্ডলের স্ত্রী মিতালী মন্ডল বলেন,আমরা গত ৩০ মার্চ রাত ১২টার দিকে ঘুমাতে গেছি ঠিক তখনি সঞ্জয়, সাইদুল, ইউনুস, পান্না ,বাবু সহ প্রায় ৫০/৬০ জনের একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী দল আমাদের উপর হামলা করে। শুরুতে মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় ও আমাদেরকে জিম্মি করে সবকিছু ভাংচুর শুরু করে এবং আমার স্বামী ও বৃদ্ধ শশুর শাশুড়িকে বেধড়ক মারপিট করে। আমার ১ বছরের বাচ্চা কে চালাচালি করে এবং আমাকেও নির্যাতন করে। ওরা আমাদের সবকিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে এবং ধান, চাল, টাকা সোনাদানা সব লুট করে নিয়ে গেছে। আমি এই সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি করছি এবং আমাদের নিরাপত্তা চাই।

ঐ রাতে ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী বিপ্রদাস বলেন, আমি ঐ সময় ড্রেজারের পেমেন্ট দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। হরিদাস মন্ডলের বাড়ির কাছাকাছি এসে পৌছালে কিছু লোক আমাকে রাস্তায় আটকায় এবং বলে সামনে যাওয়া যাবে না। মুখ বাধা থাকায় আমি কাউকে চিনতে পারিনি। পাশের বাড়ির আরেক প্রতক্ষ্যদর্শী ও বিবেকের কাকাতো ভাই মন্টু মন্ডল বলেন,আমি ভাংচুরের শব্দ শুনে দরজা খুলে বাইরে বের হতে গেলে আমার উঠানে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন বলে এই বাইরে আসবি না চুপচাপ ঘরে বসে থাক।বাইরে আসলে সমস্যা আছে। আমি না বেরিয়ে বারন্দায় বসে থাকি।তখন আমি একাধিক বার সঞ্জয় মন্ডল পঁচার গলার আওয়াজ শুনতে পাই।

স্থানীয় মেম্বার আশরাফুল আলম বলেন, আমি সকালে শুনে ঘটনাস্থলে যেয়ে দেখি ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে এবং শুনি ঘরে থাকা মালামাল,স্বর্ণ, ধান চালু ও নগদ টাকা নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের কারণে এ লুটপাট ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে।এ বিষয়ে জলমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিধান রায় বলেন, আমি ঘটনা শুনে হরিদাস মন্ডলের বাড়ি যাই। যা দেখেছি তা আসলে খুব দুঃখজনক। বর্তমান সময়ে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। তবে এটা জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের কারণে ঘটেছে। আমি শুনেছি বিবেক মন্ডলের নিকট থেকে হরিদাস মন্ডল উক্ত জমি রেজিস্ট্রি বায়না করে নেন। পরে বিবেক মন্ডল রেজিস্ট্রি না করে দিয়ে অন্যকে উক্ত জমির পাওয়ার করে দেন। যাদের পাওয়ার দিয়েছেন তারাই এ ঘটনাতে পারে বলে সবার ধারণা করছে। এ বিষয়ে জানার জন্য বিবেক মন্ডলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আহত হরিদাস মন্ডল ও তার বাবা মা খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। প্রধান ভুক্তভোগী হরিদাস মন্ডল গুরুত্বর অসুস্থ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বটিয়াঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শওকত কবির বলেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে। অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)