নারী দিবসে নারী নির্মাতাদের কথা

বিনোদন ডেস্ক:

শোবিজ অঙ্গনে পুরুষদের তুলনায় নারী নির্মাতাদের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন। নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন অনেকের থাকলেও পারিবারিক ও সামাজিক বাধার মুখে ইচ্ছাটা অপূর্ণই থাকে অনেক নারীর। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখনও প্রযোজকেরা নারীদের ওপর আস্থা রাখতে পারেন না। ফলে ক্যামেরার পেছনে নারীদের কাজের পরিধি সম্প্রসারিত হচ্ছে না।

তবে ব্যতিক্রমও আছে। অনেক নারী সকল ধরনের বাধা ডিঙিয়ে নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। যা আশাজাগানিয়া বলা যায়। সেরকম কয়েকজন নারী নির্মাতা তুলে ধরা হলো।

রেবেকা: ঢালিউডে প্রথম নারী নির্মাতা হিসেবে সবার আগে রেবেকার নামটি আসে। ১৯৭০ সালে ‘বিন্দু থেকে বিসর্গ’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি। তখন সিনেমাটি বোদ্ধামহলে প্রশংসিত হয়।

কোহিনুর আক্তার সুচন্দা: নায়িকা হিসেবেই নামডাক ছিল সুচন্দার। তবে একটা সময় নায়িকার খোলস ছেড়ে নেমে পড়েন চলচ্চিত্র পরিচালনায়। ১৯৯৯ সালে নির্মাণ করেন ‘সবুজ কোট কালো চশমা’ নামের একটি সিনেমা। এরপর ২০০২ সালে তিনি ফের নির্মাণ করেন জহির রায়হানের উপন্যাস অবলম্বনে সরকারি অনুদানে হাজার বছর ধরে। এ চলচ্চিত্রটি দর্শকদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়। পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ বেশ কয়েকটি শাখায় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে।

নারগিস আক্তার: সমাজকল্যাণের ছাত্রী ছিলেন নারগিস আক্তার। চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন—এমনটা কখনো ভাবেননি তিনি। যদিও শিক্ষা জীবনে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। ২০০২ সালে ‘মেঘলা আকাশ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালনায় আসেন নারগিস। ২০০৫ সালেও বহুবিবাহের অন্যায়কে নির্দেশ করে সেলিনা হোসেনের গল্প অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘চার সতীনের ঘর’। ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মেঘের কোলে রোদ’ সিনেমার গল্প আবর্তিত হয় এইডস সম্পর্কে সচেতনতাকে উদ্দেশ্য করে।  ২০১০ সালে নির্মাণ করেন ‘অবুঝ বউ’ সিনেমা। এটি ৩৫তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা চিত্রনাট্য, সুর ও সম্পাদনার তিনটি পুরস্কার ঘরে তোলে।

রুবাইয়াত হোসেন: ২০১০ সালে রুবাইয়াত হোসেন নির্মাণ করেন ‘মেহেরজান’ চলচ্চিত্র। ছবিটি দেশে আলোচনা-সমালোচনার পাশাপাশি বিদেশে পুরস্কৃতও হয়। এরপর তিনি ‘আন্ডার কন্সট্রাকশন’ ও ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নামে দুটি ছবি নির্মাণ করেন।

শাহনেওয়াজ কাকলী: শাহনেওয়াজ কাকলী ২০১২ সালে নির্মাণ করেন ‘উত্তরের সুর’। ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ চারটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। এরপর ২০১৫ সালে শেখ জহুরুল হকের গুণ উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে কাকলী নির্মাণ করেন নদীজন।

মৌসুমী: ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম চিত্রনায়িকা মৌসুমী। যিনি ২০০৩ সালে ‘কখনও মেঘ কখনও বৃষ্টি’ দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ছোটগল্প ‘মেহেরনেগার’ অবলম্বনে ২০০৫ সালে মৌসুমী নির্মাণ করেন মেহের নিগার।

মেহের আফরোজ শাওন: প্রথম নাটক পরিচালনা করে হাত পাকিয়ে নেন শাওন। এরপর ২০১৬ সালে সালে হাত দেন চলচ্চিত্র নির্মাণে। হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কৃষ্ণপক্ষ’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র। সম্প্রতি আরও একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

সামিয়া জামান: সংবাদকর্মী থেকে রীতিমতো পরিচালক হয়ে যান সামিয়া জামান। ২০০৬ সালে মুক্তি পায় তার নির্মিত ‘রানী কুঠির বাকি ইতিহাস’। ফেরদৌস, পপি অভিনীত এ চলচ্চিত্রটিও দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পায়, পাশাপাশি জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। ২০১৪ সালে সামিয়া জামান নির্মাণ করেন তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘আকাশ কত দূরে’। এ ছাড়া বর্তমানে ‘আজব কারাখানা’ নামের একটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে।

তানিয়া আহমেদ: পরিচালক হিসেবে আসিফ আকবরের ‘উড়ো মেঘ’ মিউজিক ভিডিও দিয়ে হাতেখড়ি হলেও ২০১২ সালে ‘দ্য এ টিম’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটক পরিচালনা করে নজরে আসেন। অবশেষে ২০১৭ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ভালোবাসা এমনই হয়’।

চয়নিকা চৌধুরী: এ সময়ের জনপ্রিয় নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। একটা সময় নিয়মিত নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করলেও এখন চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তার প্রথম ছবি ‘বিশ্বসুন্দরী’ বেশ দর্শকপ্রিয়তা পায়। এখন মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘প্রহেলিকা’ সিনেমাটি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)