আশাশুনি সড়কের মরা গাছ যেন মরণ ফাঁদ

 নিজস্ব প্রতিবেদক :

সাতক্ষীরা- আশাশুনি ২৪ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে মারা যাওয়া শুশু গাছ এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব গাছ ভেঙে যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় স্থানীয় বাসিন্দা, যানবাহন চালক ও জনপ্রতিনিধিরা গাছ কাটার দাবি জানালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি।

সাতক্ষীরার সঙ্গে আশাশুনির সরাসরি যেগোযোগের মাধ্যম এই সড়ক। প্রায় ৩০ বছর আগে রাস্তার দুই ধারে শিশু গাছ মতান্তরে রেইন্ট্রি গাছ লাগায় সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ ও স্থানীয় লোকজন। কিন্তু বছর খানেক আগে লম্বা লম্বা গাছগুলো শুকিয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে গাছগুলো একেবারে শুকিয়ে গেছে।

ঝড় বৃষ্টিতে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। অনেক সময় সাইকেল, মোটর সাইকেল, ইজিবাইক ও পথচারিরা ছোট খাটো দুর্ঘটনার শিকার হন। সড়কের পাশের গাছ মরার সুনিদ্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। সাতক্ষীরা বনবিভাগের সহকারি বণসংরক্ষক নুরুন্নাহারের ধারণা মাটিতে লবণাক্ততা পরিমান বৃদ্ধির পাশাপাশি এক ধরণের পোকার কারণে এসব গাছ দ্রুত মরে শুকিয়ে যাচ্ছে।

নুরুন্নাহার বলেন, ওই সড়কের গাছগুলো জেলা পরিষদের। গাছগুলো মারা যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ বনগবেষণা ইনস্টিটিউটকে জানানো হয়। একটি টিম এসে শুকনা কাঠ ও পোকার নমুনা নিয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে লাক্ষার কারণে মারা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তণজনিত কারণে সাতক্ষীরায় লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ। প্রতিবেদন পেলে গাছ মারা যাওয়ার সঠিক কারণ জানা যাবে।

শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে সড়কের রামচন্দ্রপুর, সাত্তারের মিল, ভালুকা চাঁদপুর, কোমরপুর, কুল­ার মোড়, বুধহাটা, বাঁকা সড়কের কাদাকাটি, শোভনালী, গোয়ালডাঙা ও বড়দল এলাকায় অসংখ্যা অর্ধমৃত ও শুকিয়ে যাওয়া রেইন্ট্রি। কেউ কেউ জ্বালানির জন্য মরা গাছের ডাল ভাঙছেন।
কুল­া ইউপি সদস্য উত্তম দাস বলেন, গাছগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় বড় ধরণের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ যাতায়াত করছে। সামান্য ঝড় কিম্বা বৃষ্টি হলে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই এসব গাছ কেটে সরিয়ে নেওয়া দরকার।

সাতক্ষীরা পৌরদীঘি এলাকার ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক ইসমাইল হোসেন ও ইজিবাইক চালক শ্বেতপুর গ্রামের বাবুরালি বলেন, সড়কের দুই পাশে মরা গাছের কারণে দিন- রাত ভয়ে ভয়ে যাতায়াত করতে হয়। একটি চক্র মরা গাছের ডাল ভেঙে জ্বালনির কাঠ হিসেবে বিক্রি করছে। গাছের ডাল থেকে পাওয়া আঠা ১০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করা হচ্ছে।

এক সপ্তাহ আগে আশাশুনি থেকে যাত্রী নিয়ে ফেরার পথে তাদের সামনে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। অল্পের জন্য বেঁচে যান তারা। অতি সত্বর মরা গাছ কেটে সেখানে পরিবেশ রক্ষায় নতুন গাছ লাগানোর দাবি জানান তিনি।

ধুলিহর ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন ও ফারুক হোসেন বলেন আশাশুনি থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে লাগানো শিশু গাছ এক বছর আগে পোকা লেগে শুকিয়ে গেছে। চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। জেলা পরিষদকে বারবার জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। গাছের ডাল ভেঙে পথচারিদের মাথায় পড়ছে।

সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরী বলেন, মরা গাছের ব্যাপারে মৌখিকভাবে জেলা পরিষদকে জানিয়েছি। গাছ কেটে ফেলা খুব জরুরী। তবে কিছু নিয়ম আছে। প্রক্রিয়া চলছে।

এ ব্যাপারের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচন করার সময় জনসাধারণ ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে জেলার বিভিন্ন রাস্তায় গাছ মারা যাচ্ছে।এক ধরণের পোকার উপদ্রবে গাছের ছাল নষ্ট হচ্ছে। গত ১২ ডিসেম্বর এক সভায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গাছগুলি ঝুঁকিপূর্ণ। দুটি টিম গঠণ করা হয়েছে গাছ মার্কিং করার জন্য। অনতিবিলম্বে টেণ্ডারের মাধ্যমে মরা গাছগুলি অপসারণ করা হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)