যশোরে মুলার আমদানি বেশি, তবে লাভ কম

নিউজ ডেস্ক:

দেশের বৃহত্তর সবজির মোকাম যশোরের সাতমাইল বারীনগর পাইকারি হাট এখন শীতকালীন সবজিতে ভরপুর। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। এর মধ্যে মুলার ফলন হয়েছে অনেক বেশি। তবে ন্যায্যমূল্য নিয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে নানা অভিযোগ।

কৃষকরা বলছেন, ফলন ভালো হলেও উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে লাভের পরিমাণ সীমিত। অন্যদিকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বেড়েছে পরিবহন খরচ এবং কৃষি উৎপাদন। ফলে কৃষক ও ব্যবসায়ী কেউই লাভের মুখ দেখছেন না।

হৈবতপুর ইউনিয়নের বারীনগর গ্রামের কৃষক সোলাইমান হোসেন বলেন, এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। তবে উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। অন্যদিকে পরিবহন খারচও বেড়ে গেছে। যে কারণে লাভ খুব সীমিত হবে। তবে যাদের সবজি ভালো তারা ভালো দাম পাচ্ছে।

Dhaka post

সাতমাইল বারীনগর সবজির মোকাম ঘুরে দেখা যায়, শীতকালীন অন্যান্য সবজির তুলনায় মুলার আমদানি ছিল অনেক বেশি। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু মুলা। কৃষক ও ফড়িয়ারা বলছেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় কৃষকরা একই জমিতে পর পর তিনবার মুলার আবাদ করতে পারছেন। তাছাড়া অন্যান্য জেলায় মুলার উৎপাদন খারাপ হওয়ায় যশোর থেকে সরবরাহ বেড়েছে দ্বিগুণ। আর পদ্মা ও মধুমতি সেতুর কারণে দ্রুত সময়ে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দ্রুত সবজি পৌঁছে যাচ্ছে।

মোকামের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোবারক আলী বলেন, আগাম শীতকালীন সবজির ফলন ভালো হলেও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বিপণন, পরিবহন খরচ বেড়েছে। ফলে কৃষক এবং ব্যবসায়ী কারও প্রত্যাশা অনুযায়ী লাভ হচ্ছে না।

দেশের বৃহৎ সবজি ব্যবসায়ী নিউ সীতাকুণ্ড সবজি ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী জানে আলম জুনু ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর সব রকম সবজির ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু ফলন ভালো হলেও যে পরিমাণে লাভ হওয়ার কথা ছিল, সে পরিমাণ হচ্ছে না। মুলার ফলন বেশি, তাই এটা নিয়ে কৃষকরা একটু আশা দেখছেন।

Dhaka post

তিনি অভিযোগ করে বলেন, মহাসড়কে এসব সবজি পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে নানা হয়রানি এবং সড়কে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়।

মোকাম কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিদিন মোকাম থেকে প্রায় ৪০-৬০ ট্রাক সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। এর মধ্যে  ২০-৩০ ট্রাক মুলা। হাটে মুলা প্রতি কেজি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা। এছাড়া বেগুন ৪৫-৫০ টাকা, ফুলকপি ৫৫-৬০ টাকা, শিম ৬০-৬৫ টাকা, বাঁধাকপি ২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর আগে গত বছর জেলায় মুলার ফলন ভালো হওয়া সত্ত্বেও এক টাকা কেজি দরে মুলা বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা বিক্রি না করে মহাসড়কের পাশে ফেলে দিয়েছিল।

সাতমাইল বারীনগর সবজির মোকামের ইজারাদার হৈবতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক বলেন, পদ্মা এবং মধুমতি সেতুর কারণে যশোরের উৎপাদিত সবজি খুব দ্রুত সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যাচ্ছে। তবে কৃষিখাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। আবার জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ বেড়েছে। যে কারণে ব্যবসায়ী এবং কৃষক উভয় কাঙ্ক্ষিত লাভ করতে পারছেন না।

প্রসঙ্গত, যশোর জেলায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে এবং আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার হেক্টর। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)