শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন আজ

নিউজ ডেস্ক:

স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহিদ শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন আজ। ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডির ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার শত্রু ঘৃণ্য ঘাতকদের নির্মম বুলেটের হাত থেকে রক্ষা পাননি বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শেখ রাসেল। সেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নিষ্পাপ শিশু ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শেখ রাসেলকেও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে নরপিশাচরা।

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা তাকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, তাদের সেই অপচেষ্টা শতভাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। শহিদ শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের শিশু-কিশোর, তরুণ, শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের কাছে ভালোবাসার নাম। অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, অধিকারবঞ্চিত শিশুদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হয়ে গ্রামগঞ্জ-শহর তথা দেশের বিস্তীর্ণ জনপদ-লোকালয়ে শেখ রাসেল আজ এক মানবিক সত্তায় পরিণত হয়েছেন। মানবিক চেতনাসম্পন্ন সব মানুষ শেখ রাসেলের মর্মান্তিক বিয়োগ বেদনাকে হৃদয়ে ধারণ করে বাংলার প্রতিটি শিশু-কিশোর তরুণের মুখে হাসি ফোটাতে আজ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত বছর থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন ‘শেখ রাসেল জাতীয় দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। শেখ রাসেল জাতীয় দিবসের এবারের মূল প্রতিপাদ্য  হচ্ছে- ‘শেখ রাসেল নির্মলতার প্রতীক, দুরন্ত প্রাণবন্ত নির্ভীক।’

শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য সদস্যদের মতো রাসেলও ছিলেন সহজ-সরল ও অত্যন্ত বিনয়ী। অন্য শিশুদের সঙ্গে নিজের জামাকাপড় ও খেলনা ভাগাভাগি করা ও মানুষের উপকার করার চেষ্টা ছোটবেলা থেকেই পরিলক্ষিত হয়েছে শেখ রাসেলের মাঝে। তিনি ছিলেন আদর্শ পিতার যোগ্য সন্তান। শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে হয়তো আজ জাতির নেতৃত্ব দিতেন। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করতেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, এতসব স্মৃতি স্মরণ করতে কষ্ট হয়। চোখ ভিজে ওঠে, বুকে পাথর বেঁধে সেইসব স্মৃতির সাগরে ডুব দিই। কারণ সেদিন ঘাতকের বুলেট যে কোমলমতি শিশুটির প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল, সে ছিল নির্দোষ-নিষ্পাপ। মহানুভবতা ও ব্যবহারে সে ছিল অমায়িক। রাসেল যদি বেঁচে থাকতো, তাহলে হয়তো মহানুভব, দূরদর্শী ও আদর্শ নেতা আজ আমরা পেতাম, যাকে নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ব করতে পারতো।

এদিকে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শহিদ শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আজ সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টে নিহত সব শহিদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের শুভ জন্মদিন ‘শেখ রাসেল দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সর্বস্তরের নেতাকর্মীর প্রতি বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

এছাড়া জাতীয়ভাবে সারাদেশে একযোগে এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে শেখ রাসেল দিবস-২০২২ পালিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে সকাল ৬টায় বনানী কবরস্থানে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসটির কার্যক্রম শুরু হবে। সকাল সাড়ে ৬টায় নিজ নিজ মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বা দফতর বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ও প্রাঙ্গণে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবে।

দিবসটিতে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৭টায় পরিকল্পনা কমিশনের সামনে থেকে বিআইসিসি প্রাঙ্গণ পর্যন্ত সবার অংশগ্রহণে র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) হল অব ফেম-এ শেখ রাসেল দিবসের উদ্বোধন ও শেখ রাসেল পদক প্রদান করবেন। দুপুর আড়াইটায় ‘শেখ রাসেলের নির্মম হত্যাকাণ্ড ন্যায় বিচার, শান্তি ও প্রগতির পথে কালো অধ্যায়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনার, একই স্থানে সন্ধ্যা ৬টায় ‘কনসার্ট ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস’ অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে দেশের সব বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উদ্যোগে চিত্রাঙ্কন, দাবা, জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)