সাতক্ষীরায় জমে উঠেছে কোরবানীর পশুর হাট
নিজস্ব প্রতিনিধি:
আগামী ১০ জুন, রবিবার পালিত হবে মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। প্রিয় পশু কোরবানীর মধ্য দিয়ে মুসলিমরা ত্যাগের মহিমায় আত্মশুদ্ধি করেন। তাই কোরবানীর পশু কেনার ধুম পড়েছে সর্বত্র। সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরায় ভারতীয় গরু আমদানী বন্ধ থাকায় খামারী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সেই তোড়জোড় একটু বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জেলায় ১৪ হাজার ৭২৫ জন খামারি নিরাপদ গো-মাংস উৎপাদনে ১০ লাখ ৯২ হাজার ৪৩৩টি বিভিন্ন প্রজাতির পশু পালন করলেও কোরবানিযোগ্য করে তোলা হয়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৫টি গবাদিপশু। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়েও পালন করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির পশু।
সাতক্ষীরা জেলায় স্থায়ী হাট রয়েছে ১৫টি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অস্থায়ী হাট হিসেবে আরো ২২টি প্রস্তুত করা হয়েছে। এর বাইরেও জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫৫-৭০টির মতো অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হয়েছে। এ জেলার বড় পশুর হাটগুলোর মধ্যে সদর উপজেলার আবাদের হাট, পাটকেলঘাটা বাজার, দেবহাটার পারুলিয়া গরুহাট, আশাশুনির বুধহাটা ও বড়দল, কালিগঞ্জের কুশুলিয়া হাট ও শ্যামনগরের নকিপুর বাজার বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
এদিকে, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ইতোমধ্যেই নতুন পুরাতন মিলিয়ে ৩৭টি পশুহাটে পশু বিক্রির প্রক্রিয়া চলমান। তবে গো খাদ্যের দাম বাড়ায় গরু-মহিষ পালন করতে এবার খরচও হয়েছে অনেক বেশি। সে কারণে গতবারের তুলনায় এবার পশুর দাম একটু বেশি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, স্থানীয় সরকারি পশু চিকিৎকদের সহযোগিতায় এ বছর জেলার সাত উপজেলায় নিবন্ধিত ৯ হাজার ৯৩০টি খামারে ১ লাখ ৮ হাজার ৫টি গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কোরবানী উপলক্ষে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৫১২০টি গরু, ১১৯৬০টি ছাগল, ২২৮টি মহিষ ও ৬৩৫ টি ভেড়া, কলারোয়া উপজেলায় ৩৯২০টি গরু, ১০৬২০টি ছাগল, ১৪৫টি মহিষ ও ৫১০ টি ভেড়া, তালা উপজেলায় ৪৯১০টি গরু, ১১৯২০টি ছাগল, ১৯০টি মহিষ ও ৫২৫ টি ভেড়া, আশাশুনি উপজেলায় ৩৬২০টি গরু, ৯৫৯০টি ছাগল, ১২০টি মহিষ ও ৫১০ টি ভেড়া, দেবহাটা উপজেলায় ৩৪৯৩টি গরু, ৯৯৯৫টি ছাগল, ১০৬টি মহিষ ও ৪২৭টি ভেড়া, কলিগঞ্জ উপজেলায় ৩৯৬০টি গরু, ১০৫০০টি ছাগল, ১০৩টি মহিষ ও ৫৪০টি ভেড়া এবং শ্যামনগর উপজেলায় ৩৭৮০টি গরু, ৯৯১৪টি ছাগল, ১০৪টি মহিষ ও ৫৬০টি ভেড়া রয়েছে।
স¤প্রতি কোরবানির ঈদ ঘিরে সাতক্ষীরার গরু ও ছাগলের হাটগুলো বেশ জমে উঠেছে। গবাদি পশুর সংকট নেই, আমদানির প্রয়োজন হবে না। এদিকে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ থাকায় খুশি খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা: এবিএম আব্দুর রউফ বলেন, নিরাপদ গো-মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে আমরা কৃষক ও খামারিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, উদ্ধুদ্ধকরণ ও পরামর্শসহ মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এবারের গবাদিপশুর আর্থিক স্বাস্থ্য অনেক ভালো। আশা করছি, গত বছরের তুলনায় বাড়তি চাহিদা হবে। তবে চাহিদা বাড়লেও গরুর সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
তিনি আরো বলেন, নিবন্ধিত খামারে ১ লাখ ৮ হাজার ৫টি গবাদিপশু রয়েছে। ওই পশুগুলো বিক্রির জন্য স্থায়ী ১৫টি ও অস্থায়ী ২২টি হাট প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু হাট জমে উঠেছে গবাদিপশু বেচা-কেনায়। আশা করি, কোরবানিতে চাহিদা মিটিয়েও গরু মজুদ থাকবে। কোনোভাবেই প্রতিবেশী দেশ থেকে গরু আমদানীর প্রয়োজন হবে না।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সুলতান এগ্রো ফার্মের মালিক সুলতানুল আবেদিন জানান, বর্তমান সময়ে গো খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় হঠাৎ করে বাজারে গরুর দামও বেড়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য লাভজনক। ভালোয় ভালোয় গরুগুলো ছেড়ে দিতে পারলে খুশি।
পাটকেলঘাটার চৌগাছা গ্রামের প্রান্তিক খামারি আব্দুল আলিম বলেন, গরুর খাদ্যতে কোন প্রকার মেডিসিন ব্যবহার করিনি। দীর্ঘ তিন বছর ধরে ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গরু লালন পালন করে বড় করেছি। আদর করে ষাঁড়টির নাম দিয়েছি ‘সম্রাট’।
স্থানীয় পশুহাটগুলোতে দেখা গেছে, দূর-দুরান্ত থেকে বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী জেলা যশোর, খুলনার ক্রেতারা সাতক্ষীরার গরু কিনতে এসেছেন। গত বছর ভারত থেকে পশু আমদানি না হওয়ায় দেশি গরুর চাহিদা ছিল ভাল। এবার ভালো দামের আশা করছেন খামারী ও ব্যবসায়ীরা। তবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে দাম ও বিক্রি নিয়ে অনেকটাই শঙ্কিত খামারিরা।