আম খাওয়ার উপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক:

পাকা আম নাকি কাঁচা আম কোনটি কার বেশি প্রিয়? সুস্বাদু এই ফল পছন্দ করেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। অনেকেই কাঁচা বা পাকা আমের চাটনি, গোটা আম, আমের জুস- নানা ভাবে খেতে পছন্দ করেন। তবুও কেউ কেউ মনে করেন, আম খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে, অতিরিক্ত গরম লাগতে পারে বা ঘাম হতে পারে, ঘুম ঘুম লাগতে পারে ইত্যাদি। এই ভয় থেকেই অনেকে আম থেকে দূরে থাকেন। আসলেই কি তাই? খাদ্যবিজ্ঞান কী বলে এ বিষয়ে? চলুন জেনে নেয়া যাক ফলের রাজা আম নিয়ে নানা তথ্য-

কাঁচা আম নাকি পাকা আম?

আম কাঁচা হোক বা পাকা দু’ধরনের আমই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। পরিমিত গ্রহণ করলে আম কাঁচা হোক বা পাকা কোনোটাই আমাদের শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ প্রতিদিন ৩/৪ কাপ পাকা আম খেতে পারেন এবং একটি কাঁচা আম খেলে ভিটামিন সি এর দৈনিক চাহিদার প্রায় ৫০% পূরণ হয়। তবে কাঁচা আম খোসাসহ খেতে পারলে ভালো। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক আমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে-

হজমে সহায়ক

আম একটি প্রিবায়োটিক ফল, যা আমাদের পাকস্থলীর বিভিন্ন গাট ব্যাক্টেরিয়ার জন্য উপকারী। ৩/৪ কাপ আমে থাকে ডায়েটারি ফাইবারের প্রায় ৭%। যা হজম ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

ঘুমে সহায়ক

আমে আছে ট্রিপটোফ্যান, মেলাটোনিন, ও ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের ঘুমকে ত্বরান্বিত করে। অনিদ্রা দূর করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে

আমে রয়েছে প্রায় ২০ এর অধিক ভিটামিন ও মিনারেল এবং এন্টিওক্সিডেন্ট, যা আমকে সুপারফুড হিসেবে পরিচিত করিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে আমের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্তন ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমে প্রস্টেট ক্যান্সার, লিউকেমিয়া ও অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে।

দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে

আম বিটা ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন ও ভিটামিন এ এর ভালো উৎস। ৩/৪ কাপ আমে এ দৈনিক চাহিদার প্রায় ৮% ভিটামিন এ রয়েছে। এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কাজ করার পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ত্বক ও চুলের যত্নে

আম ভিটামিন এ, সি ও ই এর অন্যতম উৎস যা ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে

আমে উপস্থিত বায়োএক্টিভ ও ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান শরীরের ফ্যাট সেল ও ফ্যাট রিলেটেড জিনের বৃদ্ধি ও বিকাশে অন্যতম ভূমিকা রাখে। তাই খুব সহজেই ওজন বা মেদ বাড়ে না। যে কারণে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া সহজ হয়।

হৃদরোগ এর ঝুঁকি কমাতে

আমে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম ও ফাইবার যা শরীরের গ্লুকোজ , কোলেস্টেরল, ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আদর্শ ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে হৃদপিণ্ডের সার্বিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। এছাড়াও আমের আরো অনেক অন্যান্য উপকারিতা রয়েছে। যেমন-

* আম স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতায় ভূমিকা রাখে।

* আম খেলে ভালো ঘুম হয়।

* আমে উপস্থিত ফোলেট ও আয়রন শরীরে রক্তকণিকা গঠনে সাহায্য করে এবং রক্তাল্পতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

* আমের গ্লুটামিক এসিড স্মৃতিশক্তি বারাতে সাহায্য করে।

* কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

* হেলদি এপিথেলিয়াম গঠনে সাহায্য করে।

* আমে প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় এটি স্কার্ভিসহ অন্যান্য মুখের ঘা দূর করতে ভূমিকা রাখে এবং ত্বক, হাড় ও দাঁতের সুস্থতা নিশ্চিত করে।

আম খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা

* আম ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে, পরিষ্কার পাত্রে নিয়ে খেতে হবে।

* আম খাওয়ার সময় এর সঙ্গে অতিরক্ত লবণ ও মরিচ মেশানো যাবে না। এতে পুষ্টিগুণ নষ্ট হবে।

* আম খাওয়ার পরপরই পানি খাওয়া যাবে না।

* অতিরিক্ত আম খেলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

লেখক : পুষ্টিবিদ

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)