কালিগঞ্জে দু’ সন্তানের জননীকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা : লাশ ঘরে রেখে পালিয়েছে স্বামী

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা :

দু’ সন্তানের জননীকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ ঘরের মেঝেতে রেখে দরজায় ছিকল লাগিয়ে পালিয়েছে তার স্বামী। রবিবার রাত ১১টার দিকে পুলিশ সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বাজারগ্রাম রহিমপুরের যমুনা নদীর তীরের বাসিন্দা ছবিলার রহমানের বাড়ির ভাড়া বাসা থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করেছে।

নিহতের নাম রোজিনা খাতুন (৩৩)। সে কালিগঞ্জ উপজেলার বাজারগ্রাম রহিমপুরের শেখ আবু রায়হানের মেয়ে ও ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী।

কালিগঞ্জ উপজেলা সদরের ফুলতলা মোড়ের মুরগি বিক্রেতা ও বাজারগ্রাম রহিমপুরের আবু হাসান জানান, তার বোন রোজিনা খাতুনের সঙ্গে ২০০৭ সালে একই উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামের শেখ রবিউল ইসলামের বিয়ে হয়। খুশী ও হাসি নামে তাদের দু’টি মেয়ে থাকাকালিন বোন ও ভগ্নিপতির মধ্যে আড়াই বছর আগে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। সেখান থেকে রোজিনা তাদের বাড়িতে থেকে বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও ছাত্রাবাসে থেকে কাজ করে নিজের খরচ চালাতো ।খুশী রঘুরামপুর কলেজিয়েট স্কুলে নবম শ্রেণীতে ও হাসি ধলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। মায়ের টানে হাসি তাদের বাড়িতে মাঝে মাঝে আসলেও খুশী আসতো না।

আবু হাসান আরো জানান, মোবাইল ফোনে পরিচয় সূত্রে ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুরের মোহনপুর গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে বাসচালক শফিকুল ইসামের(৩৩) সঙ্গে রোজিনার বিয়ে হয় দেড় বছর আগে। বিয়ের পর থেকে তারা যশোর জেলার ঝিকরগাছায় একটি বাড়িতে ভাড়া খাকতো। উপার্জন ভাল না করায় সংসারে অভাবকে ঘিরে তার বোন রোজিনা বাপের বাড়িতে ফিরে আসে পাঁচ মাস আগে। কয়েকদিন পর শফিকুলও তাদের বাড়িতে এসে উপজেলা পরিষদের সামনে যমুনা নদীর চরভরাটি জমির বাসিন্দা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ছবিলার রহমানের বাড়ি ভাড়া নেয়।

এ সময় রোজিনা অন্যের বাসায় ও ছাত্রবাসে রান্না করতো। অপরিচিত জায়গায় শফিকুলের দিনমজুরের কাজও জুটতো না। সংসারে অভাব নিয়ে রোজিনা ও শফিকুলের মধ্যে প্রায়ই ঝড়া হতো বলে ছবিলার রহমানের অন্য ভাড়াটিয় দের কাছ থেকে তারা জানতে পারেন। রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোবাইল ফোনে ছবিলার রহমানের বাড়ির একজন ভাড়াটিয়া আম ব্যবসায়ি আব্দুর রব তাকে মোবাইল ফোনে জানায় যে রোজিনাকে সকাল থেকে তারা বের হতে দেখেননি। দেখা যায়নি শফিকুলকে।

শনিবার রাতে ঝড়বৃষ্টির সময় স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে তুমুল গণ্ডগোলের আওয়াজ তারা পেয়েছিলেন। রাত ১০টার দিকে পুলিশ ও ইউপি সদস্য খায়রুল ইসলামের সহায়তায় তারা দরজার ছিকল খুলে রোজিনাকে মেঝের উপর মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। রোজিনার গলায় দড়ি দিয়ে টান দেওয়ার মত দাগ রয়েছে। মুখমণ্ডলে ও আঘাতের চিহ্ন আছে। ধারনা করা হচ্ছে সাংসারিক বিরোধের কারণে নাক ও মুখ চেপে ধরে গলায় ঝোলানো থাকা মাদুলির নাইলনের সুতা (কার) দিয়ে শফিকুল তার বোনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। পরে সে লাশ ঘরের মধ্যে ফেলে রেখে দরজায় ছিকল টেনে দিয়ে পালিয়ে গেছে।

কালিগঞ্জ উপজেলার পরিষদের সামনে যমুনার চরের বাসিন্দা ছবিলার রহমান জানান, মাসিক এক হাজার ২০০ টায় ভাড়ায় পাঁচ মাস যাবৎ রোজিনা ও শফিকুল তার বাসায় থাকতো।

কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম মোস্তফা জানান, রবিবার রাত ১১টার দিকে রোজিনার লাশ তার ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করে সাধারণ ডায়েরী মূলে সোমবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভাবের কারণে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র করে রোজিনাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ মেঝেতে ফেলে দরজায় ছিকল তুলে দিয়ে শফিকুল পালিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আবু হাসান বাদি হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)