তালায় প্রবহমান খাল জলকার বদ্ধ শ্রেনীভুক্ত করে ইজারা প্রদান 

ফারুক সাগর (তালা প্রতিনিধি):প্রবহমান খাল জলকার বদ্ধ জলমহলের কাগজপত্র তৈরি  করে ইজারা নিয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল ।তালা উপজেলার মাগুরা ও খলিশখালি ইউনিয়নের মাদরা, কৈখালী, বালিয়াদহা, মাগুরা ভাঙা, খলিশখালী,বাগমারা, মঈললানদকাটী গ্রামের বিল ও বিস্তীর্ন ভাঙা  অঞ্চলের পানি সারা বছর খোবরাখালী জলমহলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়।জলমহলকে বদ্ধ শ্রেণীভুক্ত কাগজপত্র তৈরি করে ইজারা প্রদান করা হয়েছে ।ইজারার কাগজপত্রে জলমহলের নাম খোবরাখালী খাল জলকার নামে উল্লিখিত আছে।যার সা: নাম্বার-৩১.৪৪.৮৭৯০.০১০.০১৬.১৮.৮০১(৫) । তালা উপজেলার খলিশখালী ইউনিয়নে অবস্থিত লেখা থাকলেও উক্ত জলমহলের অধিকাংশ এলাকা মাগুরা ইউনিয়নে অবস্থিত ।যে মৌজার নাম লেখা আছে (মাদরা) সেই মৌজা মাগুরা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ।ইজারাটি মাদরা মৎসজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি সমীরন সরদার নামে প্রদান করা হয়েছে ।
সমীরন সরদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন সরকারি দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমি জলমহলটি ইজারা নিয়েছি।কোথায় কোন বাঁধ দেওয়া থাকলে আমি দ্রুত সরিয়ে নেব।
মাদরা মংসজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সমীরন মন্ডল বলেন সমিতির সভাপতি নিজে এবং বাগমারা গ্রামের মেহের সানার ছেলে ব্বাপা ও হাসমত সানা খাল জলকার এ মংস্য চাষাবাদ করে ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় একটি প্রভাবশালী মহল উক্ত প্রবহমান খাল জলকার বদ্ধ শ্রেনীভূগত করে ইজারা নিয়ে মৎস্য চাষাবাদ করছে।সরকারি নীতিমালা ৭(১৫) উল্লিখিত আছে  নভেম্বর থেকে এপ্রিল  পর্যন্ত খাল থেকে মৎস্য আহরণ করা যাবে না।কিন্তু উক্ত জলমহলে একাধিক  বাধ বেঁধে সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করে মৎস্য আহরণ করা হচ্ছে ।বর্তমানে ইরি মৌসুম চলছে ।এ অঞ্চলের ১০ হাজার বিঘা জমির ইরি ফসল গভীর সেচের মাধ্যমে চাষাবাদ করা হয় ।শুক মৌসুমে খাল জলকার থেকে পানি সরিয়ে নেওয়ার ফলে কৃষি ও ভূগর্ভস্থ পানির  উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
সরুলিয়া ইউনিয়নের আমতলা গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দিনর ছেলে খালেক গাজী বলেন তিনি এখানে মাসিক বেতনে কাজ করেন।এর আগে তিনবার মাছ ধরা হয়েছে,এবার দিয়ে চারবার । ঘটনাস্থানে তখন তিনটি সুইজ গেটের মধ্যে একটি গেট মাটির বস্তা দিয়ে বন্ধ করে পানি নিষ্কাশন চলছিল ।তিনি  আরো বলেন বাগমারা গ্রামের মৃত মেহের সানার ছেলে ব্বাপা সানা ও হাসমত সানা ,মাদরা গ্রামের সমীরন সরদার সভাপতি মাদরা মংস্যজীবী সমবায় সমিতি, ,ঠিকরামপুর গ্রামের আমির সরদারের ছেলে একরামুল সরদার সহ আরও কয়েক জন মিলে উক্ত জলমহলে মংস্য চাষাবাদ করে ।
স্থানীয় খলিশখালী ভূমি অফিসের নায়েব সইদুল ইসলাম জানান বিষয়টি আমার জানা ছিল না ।উধধন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে ইজারা দিয়েছে।তবে কেউ যদি আইনের ব্যত্যয় ঘটায় তার জন্য আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।
তালা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা এস এম তারেক সুলতানের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় তিনি এখন সরকারি প্রশিক্ষণের জন্য ছুটিতে আছেন ।কর্মস্থানে ফিরে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে প্রতিবেদক জানান।
তালা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান আমি এখানে নতুন এসেছি।আমার পূর্ববর্তী নির্বাহী কর্মকর্তার সময় উক্ত জলমহলের ইজারা প্রদান করা হয় ।২০১৭ সালে সাবেক জেলা প্রশাসক সরকারি এক নোটিশে সকল ইজারা বাতিল করার পরেও কেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল জানতে চাইলে তিনি বলেন বিষয়টি আমার নজরে ছিল না ।পরবর্তীতে এ ধরনের প্রবহমান খাল জলকার যেন ইজারা না দেওয়া হয় সে ব্যবস্থা তিনি গ্রহণ করবেন এবং স্থানীয় নায়েবকে যথাযথ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ পাঠাবেন বলে প্রতিবেদকে আশ্বাস দেন ।
স্থানীয় মেম্বার ফারুক হোসেন ,ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রবিউল বিশ্বাস,মংস্য চাষী আশরাফুল আলম শাওন ,যুবলীগ নেতা গফুর পাড় সহ স্থানীয় জনসাধারণ সাইদুল কাগচী, সোহরাব সরদার বলেন বিষয়টি নিয়ে কয়েক বার নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছিল।কিন্তু খোবরাখালী খাল জলকার বদ্ধ দেখিয়ে পুনরায় ইজারা দেওয়া হয় ।তারা আরও বলেন উধধন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ অঞ্চলের কৃষি ও ভূ গর্ভস্থ পানি চক্রের সঠিক মূল্যায়ন করে জনসাধারণের দূভোগ লাঘবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন জানান ।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)