শ্যামনগরে সুন্দরবন দিবস পালিত

আশিকুজ্জামান লিমন, শ্যামনগরঃ-
সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা মুন্সিগঞ্জ বাজারে অবস্থিত সুন্দরবন প্রেসক্লাব চত্বরে সুন্দরবন দিবস কে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১৪ই ফেব্রুয়ারি) সকাল দশটায়  শরুব ইয়ুথ টিমের আয়োজনে সংহতি প্রকাশ করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’, সাউদার্ন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন ও সুন্দরবন প্রেসক্লাবসহ উপকূলীয় অঞ্চলের সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
শরুপ ইয়ুথ টিমের সভাপতি জান্নাতুল নাঈম এর সভাপতিত্বে ও মমিনুর রহমান এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্যামনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক সাইদুজ্জামান সাঈদ
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা যুব ফোরামের সভাপতি সাগর কুমার মন্ডল, শরুপ ইয়ুথ টিমের সাধারণ সম্পাদক বাদশা ওয়ালিদ, লিডার্সের কর্মকর্তা পরিতোষ মন্ডল, সাউদার্ন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের  শাহিন সিরাজ, জলবায়ু পরিষদের রঞ্জিত বর্মন ও সুন্দরবন প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি বিলাল হোসেন সহ প্রমুখ।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আরেকটি দিবস, “সুন্দরবন দিবস”। ২০০২ সাল থেকে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে সাতক্ষীরাসহ সুন্দরবন সন্নিহিত জেলাগুলোতে। ১৪ ফেব্রুয়ারিকে তারা সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। সুন্দরবনকে বাঁচানোই এই দিবস পালনের প্রধান লক্ষ্য। উদ্যোক্তাদের আহবান- আসুন, বিশ্বভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসি। সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখি। সেই সঙ্গে সুন্দরবন দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিও তাদের। দেশের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটি এখন বিশ্বঐতিহ্য। জগদ্বিখ্যাত এ প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারী হওয়াতে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে আগলে রেখেছে সুন্দরবন। অনেকটা মায়ের কোলে শিশু যেমন পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকে, তেমনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক বিরাট এলাকা সুন্দরবনকে অবলম্বন করে নিরাপদ রয়েছে। অথচ এই সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বারবার ঝড়-ঝাপটা বয়ে যাচ্ছে। সচেতনতার অভাবে এই বিশ্বঐতিহ্য ক্রমেই হুমকির মুখে।
সুন্দরবন প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি বিলাল হোসেন বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থাও সুন্দরবনের উপর কম-বেশি সম্পৃক্ত এবং পরিবেশগত দিক দিয়ে পুরোপুরি নির্ভরশীল। এ অঞ্চলের মানুষের জীবন প্রবাহের সঙ্গে সুন্দরবন আবর্তিত আবহমানকাল থেকেই। এ অর্থে সুন্দরবনের ভাল-মন্দ, দুঃখ-বেদনা এ অঞ্চলের মানুষকে নাড়া দেয় প্রচন্ডভাবে। এ অঞ্চলের অধিবাসীদের সঙ্গে সুন্দরবনের রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক, নিবিড় ঘনিষ্ঠতা। এই সুনিবিড় ঘনিষ্ঠতা এবং আত্মার আত্মীয়তার টানেই সুন্দরবনকে আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন মনে করি, যেমনটি একটি নবজাতক করে তার মাকে।
শরুব ইয়ুথ টিমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জান্নাতুল নাঈম বলেন, আমরা সুন্দরবনের অনেক ক্ষতি করলেও সুন্দরবন সব সময় শুধুই দিয়েই গেছে বিনিময়ে সে পায়নি কিছুই। আমরা বলতে চাই যারা বুঝে বা না বুঝে সুন্দরবনের ক্ষতিসাধন করে আসছে তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকেই রুখে দাঁড়াতে হবে।
 লিডার্সের পরিতোষ মন্ডল বলেন, ‘সুন্দরবনের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে দুটি সমস্যা গুরুত্বপূর্ণ। একটি মনুষ্যসৃষ্ট, অন্যটি প্রকৃতিসৃষ্ট। এখন মানুষ হিসেবে আমরা যেটি খুব সহজে পারি তা হল মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যা দূর করা। আর প্রকৃতির সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলায় সকল মানুষ এক হওয়া। তাই যদি হয়, তাহলে আমাদের প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হলো-সুন্দরবনের উপর মানুষের যে অনাচার চলছে, তা পুরোপুরি বন্ধ করা। বেআইনী বৃক্ষ নিধন, বন্যপ্রাণী হত্যা, নিরবচ্ছিন্ন মৎস্যসম্পদ আহরণ বন্ধ করতে হবে।
শ্যামনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান সাইদ বলেন, ‘সুন্দরবন শুধুমাত্র পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনই নয়, বিশ্বে সুন্দরবনের মত এত সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য আর কোন বনে নেই। এই জন্যই সুন্দরবনকে বলা হয় ‘জীববৈচিত্র্যের জীবন্ত পাঠশালা’। আমাদের নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সুন্দরবন বেঁচে থাকলে সুন্দরবনও বাঁচিয়ে রাখবে আমাদের, মায়ের মতই পরম আদরে।
সরকারের কাছে সুন্দরবন দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি উদ্যোক্তাদের। তারা বলেছেন, ১৫ বছর ধরে একই দাবিতে সোচ্চার সাতক্ষীরাসহ আশপাশের জেলাগুলোর বাসিন্দারা। অচিরেই সরকার এ দাবি মেনে নিবে, এমন আশাবাদই সংশ্লিষ্টদের।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)