কালীগঞ্জে অগ্রদূত পুজা মন্দির কমিটির বিরোধ আসন্ন দুর্গা পুজা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা

রঘুনাথ খাঁ:

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা চৌমুহুনী অগ্রদূত পুজা মন্দির পরিচালনা কমিটির দু’টি গ্র“পের বিরোধের ফলে আগামি দুর্গাপুজা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

নলতা চৌমুহুনী অগ্রদূত পুজা মন্দির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শঙ্কর কুমার পাল জানান, সাইকেল মিস্ত্রী প্রয়াত রাধাবল্লভ বিশ্বাসের দোকান সরিয়ে নেওয়ায় প্রায় দু’ শতক সরকারি খাস জমিতে ১৯৮৩ সালে নলতা চৌমুহুনীর পাশে অগ্রদূত পুজা মন্দির নির্মিত হয়। প্রতি বছর এখাকে দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন সাধন বিশ্বাস ও সম্পাদক ছিলেন নিরঞ্জন বিশ্বাস। বিগত আট বছরে শিবনাথ বিশ্বাস ও নিত্যানন্দ ওরফে বাবু কর্মকার যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ওই মন্দির পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন। দীর্ঘ আট বছর ধরে সাধারণ সভা না ডাকা, মন্দিরের স য়ী হিসাব নম্বরে কোন লেনদেন না করা, সরকারি ও বেসরকারি অনুদান এবং পুজার চাঁদার যথাযথ হিসাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় মন্দিরের পার্শ্ববর্তী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে বিষয়টি উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ ও পুজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়। গত ৫ মার্চ তারা মন্দিরে এলে গোবিন্দ মণ্ডলের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সেখানে শিবনাথ ও বাবু হিসাব নিকাশ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সর্বসম্মতিক্রমে কমিটি ভেঙে দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৪ মার্চ সাধন বিশ্বাস ও সঞ্জয় বিশ্বাসসহ পাঁচ সদস্য বিশিষ্ঠ আহবায়ক কমিটি গঠণ করা হয়। গত ৪ জুন তাকে(শঙ্কর পাল) ও সঞ্জয় বিশ্বাস রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠণ করা হয়। কমিটিতে পূর্বে দায়িত্বে থাকা অধিকাংশ সদস্যই স্থান পায়। এরপর থেকে মন্দিরের মেঝে ও দেওয়াল সংস্কার, বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়াসহ নানা উন্নয়নের কাজে হাত দেওয়া হয়। আগামি দুর্গাপুজাকে ঘিরে প্রতিমা নির্মাণের কাজ ও শুরু করা হয়। এ জন্য তিনিসহ কয়েকজন সদস্য লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছেন। সম্প্রতি তারা মন্দিরের নামে সোয়া দু’ শতক সরকারি জায়গা বরাদ্দ পেতে জেলা পরিষদের কাছে আবেদন করেছেন। তারা কমিটি গঠণের পর থেকে মন্দিরের উন্নয়ন ব্যহত করতে ও আগামিতে সুষ্ঠভাবে যাতে দুর্গাপুজা না হতে পারে সেজন্য শিবনাথ ও তার সহযোগীরা প্রশাসনকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে।

ডাঃ শঙ্কর কুমার পাল জানান, বর্তমান কমিটি না মেনে কতিপয় সদস্যকে হুমকি ধামকি দেওয়ায় সহসভাপতি সাধন বিশ্বাস গত পহেলা আগষ্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। এরপরও পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমারের কাছে মিথ্যা অভিযোগ এনে দুর্গা মন্দিরে তালা দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ বন্ধ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে তারা বিষয়টি গত সোমবার সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব খান এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা নেওয়ার জন্য কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

নলতা চৌমুহুনী এলাকার হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শিবনাথ বিশ্বাস ২০০৪ সালে শ্যামনগরের একটি চিংড়ি ঘেরে ডাকাতি মামলার অন্যতম আসামী হলে বর্তমানে তিনি নলতা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। অগ্রদূত মন্দিরের সরকারি ও বসরকারি বরাদ্দের টাকার হিসাব দিতেন না তিনি। ডাঃ শঙ্কর পালের সভাপতিত্বে মন্দিরের উন্নয়ন শুরু হলে শিবনাথ যুবলীগ নেতার প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার চাচাত ভাই ও যুবলীগ নেতাকে ভুল বোঝাতে তাদের নামে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার কাছে প্রতিপক্ষের কয়েকজন সদস্যের নাম ব্যবহার করে ডান হাতে- বাম হাতে সাক্ষর করে অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে এলাকায় অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিমা নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে মন্দিরে তালা মারার জন্য তিনি কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেছেন। এতে পুলিশও বিপাকে পড়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিবনাথ বিশ্বাস বিশ্বাস নিজেকে নলতা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দাবি করে বলেন, তিনি আট বছর মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। তার কোন ব্যর্থতা ছাড়াই নিয়ম বহির্ভুতভাবে কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করা হয়েছে। নতুন কমিটির কেউ কেউ আওয়ামী লীগ নেতা তারিকুল ভাইয়ের বিরুদ্ধে র‌্যাব অফিসে অভিযোগ করেছে। তবে অভিযোগকারির পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি র‌্যাব। তার দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের বাধা স্বত্বেও তড়িঘড়ি করে নির্মাণ করা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

কালীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, শিবনাথ বিশ্বাসের অভিযোগ পেয়ে উভয় পক্ষকে থানায় আসার জন্য আগামি ২২ আগষ্ট দিন দেওয়া হয়েছে। সামগ্রিক স্বার্থে মন্দিরের কার্যক্রম আপাততঃ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নির্দেশনা সংক্রান্ত চিঠি পেলেই তিনি অগ্রদূত মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্যদের ডেকে অথবা সরেজমিনে ঘটনাস্থলে যেয়ে শান্তির ফেরাতে উদ্যোগ নেবেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)