লটারির সিদ্ধান্তকেই ভালো মানছেন অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা

অনলাইন ডেস্ক:

প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা। তারা এটিকে সরকারের দূরদৃষ্টি সম্পন্ন সিদ্ধান্তগুলোর একটি বলে মানছেন। এতে করে শিক্ষা জীবনের শুরুতেই শিশুদের মেধা প্রমাণের জন্য যে প্রতিযোগী মনোভাবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, সেটিও কমবে বলে মত দিয়েছেন তারা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, করোনা মহামারির সময় ভর্তি পরীক্ষা না নিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্তটি সঠিক। এটি অবশ্যই সরকারের দূরদৃষ্টি সম্পন্ন সিদ্ধান্ত। এতে করে শিশুদের প্রতিযোগী মনোভাব থেকে বের করা যাবে।

শিশুদের কেন ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে- প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, শিশুদের কেন মেধা যাচাই করতে হবে! এরা সরাসরি বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে, শিক্ষাগ্রহণ করে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রমাণ করবে। করোনার পরও এই নিয়মটি জারি রাখলে শিশুদের জন্য ভালো হবে।

প্রবীণ এই শিক্ষাবিদের মতো না বললেও লটারির সিদ্ধান্তকে ভালো বলছেন অভিভাবকরাও। এজন্য তারা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনিকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মো. জিয়াউল কবির দুলু ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আমরা এই দাবিটি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছি। অবশেষে সরকার আমাদের কথা শুনেছেন। এই ভর্তি পরীক্ষার কারণে আগে অভিভাবকরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতেন, এখন আর তেমনটা হবে না। আমাদের দাবি থাকবে, করোনার পরেও যেন এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তির নিয়মটি চালু থাকে।

তবে ভর্তির ক্ষেত্রে লটারির স্বচ্ছতার দাবিও জানিয়েছেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা এই অভিভাবক বলেন, রাজধানীর সেরা কয়েকটি বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা হয় বেশি। ভর্তির ক্ষেত্রে এসব বিদ্যালয়ে মন্ত্রণালয় নিজে মনিটরিং করলে লটারির স্বচ্ছতা ঠিক থাকবে। মন্ত্রণালয়ে অনেক সৎ ও মেধাবী কর্মকর্তারা রয়েছেন। এই দায়িত্বটি তাদের দিলেই সবার জন্য মঙ্গল।

লটারির মাধ্যমে ভর্তির ক্ষেত্রে মেধাবীদের পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, শিশুদের মেধা যাচাইয়ের প্রশ্নটি অযৌক্তিক। কোমলমতি শিশুদের শেখানোর বদলে প্রতিযোগিতার টেবিলে বসিয়ে দেয়াটা কখনোই ভালো ফল বয়ে আনবে না। এমন চিন্তা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।

উন্নত দেশগুলোর শিক্ষা পদ্ধতির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, তাদের যা কিছু ভালো, সেসব আমাদের নিতে হবে। বিশ্বায়নের এই সময়ে দিনবদল করতে হলে সবার আগে নিজেদের চিন্তাকে উন্নতর করতে হবে বলেও মত দেন তিনি।

উপমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ তাহমিনা হক। তিনি বলেন, শিশুদের কোনোভাবেই প্রতিযোগিতায় বসিয়ে দেয়া চলবে না। দেরিতে হলেও এই সিদ্ধান্তটি যে নেয়া হয়েছে, এজন্য সরকারকে অবশ্যই ধন্যবাদ। এই নিয়মটি প্রয়োজনে আরো উন্নত করতে হবে, তবে কোনোভাবেই যেন আর বন্ধ না করা হয়।

বিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লটারিতে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ১ম থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে। আগামী ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।

তবে শিক্ষামন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের পরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘পরীক্ষা নিতে চাওয়ার অভিপ্রায়’-এ ধরনের অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)