আমেরিকায় আরো ৮ বাংলাদেশির মৃত্যু; মোট ৬৩

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রতিদিনই বাড়ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নিউইয়র্কে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো ৮ বাংলাদেশি মারা গেছেন। পুরো যুক্তরাষ্ট্রে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৬৩ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। এর মধ্যে নিউইয়র্কে মারা গেছেন ৫৯ জন।

নিউইয়র্কের কুইন্সে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। কুইন্সে প্রচুর বাংলাদেশি বসবাস করেন। কুইন্সের এলমার্স্ট হাসপাতাল ইতোমধ্যে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।

এ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। তাছাড়া নিউইয়র্কে ঘণ্টায় ১২ জন মানুষ মারা যাচ্ছেন এই ভাইরাস এর সঙ্গে লড়াই করে। এ কারণে বাংলাদেশি কমিউনিটির মাঝে বেড়েছে উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি দিনদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে এক হাজার ৩২১ জন মারা গেছেন। যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩৯২ জন। এর মধ্যে শুধু নিউইয়র্কে মারা গেছেন ৩ হাজার ২১৮ জন। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যায় দেশটি ইতালি, চীন ও স্পেনকেও ছাড়িয়ে গেছে।

এই ভাইরাসে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭৭ হাজার ১৬১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ হাজার ২৮৪ জন। যা একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ১২ হাজার ২৮৩ জন।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে দুই লাখ ৫৭ হাজার ৪৮৬ জন আক্রান্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬৯৯ চিকিৎসাধীন, যাদের অবস্থা স্থিতিশীল। বাকি ৫ হাজার ৭৮৭ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছেন।

আমেরিকার শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্টনি ফসি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এক লাখ বা তারও বেশি হতে পারে। এরপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একই কথা বলেছেন।

বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এখন প্রায় ১১ লাখ ছুঁইছুঁই। আন্তর্জাতিক জরিপ পর্যালোচনাকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটার এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী বর্তমানে বিশ্বে করোনাভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৯ হাজার ১৬০ জন। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৪৩৪ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ লাখ ২৮ হাজার ৯২৩ জন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনে বৈশ্বিক এ মহামারির প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও ভাইরাসটিতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরো ৭৬৬ জন কোভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় সাড়ে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেলেন; যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।

প্রতিনিয়ত ইতালিতে মৃত্যুর মিছিল লম্বা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার দেশটিতে করোনায় ৭৬০ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪ হাজার ৫৮৫ জনের দেহে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৭ জন।

মৃত্যুতে ইতালির পরই রয়েছে স্পেনের অবস্থান। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ১৯৮ জন মারা গেছেন, আর আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজার ১৯৮ জন। করোনার উৎপত্তিস্থল চীনে আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৬২০ জন, মারা গেছেন ৩ হাজার ৩২২ জন।

ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্সে এ পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৩৩৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। গেল ২৪ ঘণ্টায় সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ১২০ জন। দেশটিতে করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৫০৭ জনের।

এছাড়া জার্মানিতেও প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৯১ হাজার ১৫৯ জন, আর মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৭৫ জনের।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ইউরোপের প্রায় সব দেশ লকডাউন। যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি মানুষ ঘরবন্দী। এ রকম লকডাউন চলছে এশিয়া ও আফ্রিকাসহ অন্যান্য মহাদেশেও।

এশিয়ার মধ্যে ইরানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৯৪ জনে, আর মোট আক্রান্ত হয়েছে ৫৩ হাজার ১৮৩ জন।

ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৫৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে, মারা গেছেন ৭২ জন। পাকিস্তানে মৃতের সংখ্যা ৩৫ জন, আক্রান্ত ২ হাজার ৪৫০ জন।

এদিকে বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১ জনে, এর মধ্যে ছয় জন মারা গেছেন। এরইমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৬ জন। আর এখনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৪ জন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)