লাইন নেই তবুও আসছে বিদ্যুৎ বিল

ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) এর সেবা নিয়ে বিপাকে সাধারণ গ্রাহকরা। প্রায়ই ভূতুড়ে বিলের হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহক। অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও পাচ্ছেন না কোনো প্রতিকার।

অভিযোগ আছে মিটার না দেখেই আনুমানিক বিল করা, ঘন ঘন মিটার রিডার পরিবর্তন করা। ডেসকোর কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। যার ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। আর প্রি-প্রেইড মিটারের গ্রাহকদের ভোগান্তি তো আছেই।

সারাদেশে বিদ্যুৎ বিতরণ করে এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৬টি। এগুলো হচ্ছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড (বাপবিবো), ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডেসকোর কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বৈধ গ্রাহকরা। মো. শাহিন হাওলাদার। রাজধানীর তুরাগের বাউনিয়াতে বসবাস করেন। ডেসকোর নিয়ম অনুযায়ী বৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছেন তিনি। কিন্তু কয়েক মাস পর পারিবারিক কারণে কয়েক হাত দূরে সরানোর প্রয়োজন হয় মিটারটি। পরামর্শর জন্য দ্বারস্থ হন ডেসকোর একজন কর্মচারীর কাছে। ওই কর্মচারী বলেন, অফিসে অনেক ঝামেলা আছে আপনার যেতে হবে না, আমাকে ২০ হাজার টাকা দেন আমি অফিস থেকে বলে সব করে দেব। সহজ সরলভাবে গ্রাহক তাকে ১৬ হাজার টাকা দিয়ে দেন। কাজও হয়ে যায় কথা মতো। কিছুদিন পর হঠাৎ ডেসকোর উত্তরা অফিস থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসে লাইন কেটে দিয়ে উল্টো গ্রাহককে চোর সাব্যস্ত করেন। বলা হয়- এই তার চুরি করেছেন গ্রাহক। কাগজ নিয়ে যেতে বলা হয় অফিসে। দিনের পর দিন গ্রাহক উত্তরার অফিসে ধন্না ধরেও কোনো প্রতিকার পাননি। বাসায় বিদ্যুৎ না থাকলেও আসছে বিলের কাগজ।

ভুক্তভোগী শাহিন ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আমি নিয়ম মেনে টাকা দিয়ে লাইন নিয়েছিলাম। পারিবারিক সমস্যার কারণে আমার ঘরটা ২০ গজ সরে যাওয়ার কারণে মিটারটা সরানোর প্রয়োজন হয়। তাই আমি ডেসকো অফিসে যেতে চাইলে তাদের অফিসের একজন বলে আমি করে দিচ্ছি। অফিসে গেলে অনেক ঝামেলা হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, আমি টাকা দিয়ে বৈধভাবে লাইন নিয়েছি। সরানোর জন্য তারা আবার টাকা নিলো এখন আমাকে উল্টো বলছে আমি তার চুরি করেছি। বাসায় বিদ্যুৎ নেই কিন্তু প্রতি মাসে বিলের কাগজ দিতে ভুল করছে না ডেসকো।

পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগের সত্যতা জানতে সরেজমিনে উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরে ডেসকোর অফিসে গেলে কেউ কথা বলতে চাননি। এক রুম থেকে অন্য রুমে যেতে বলা হয় বার বার। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দিলে ডেসকোর ইঞ্জিনিয়ার মো. ছামছুল ইসলামের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।

ইঞ্জিনিয়ার মো. ছামছুল ইসলাম ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, গ্রাহক যেটা করেছেন সেটা অন্যায়। এই ঘটনায় আমাদের অফিসে কয়েকজন চাকরিচ্যুত হয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি হেড অফিস দেখছে। তদন্ত চলছে, শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।

তিনি আরো বলেন, যে ক্যাবল (তার) পাওয়া গিয়েছে সেটি চোরাই তার ছিল। আমাদের না জানিয়ে মিটার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেয়া উচিত হয়নি। যারা এই অন্যায় কাজে সহযোগিতা করেছেন তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

বাসায় লাইন নেই কিন্তু বিদ্যুৎ বিলের কাগজ যাচ্ছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো যাবেই, সর্বনিম্ন একটি বিলের কাগজ দেয়া হয়, এটা নিয়ম।

এদিকে ডেসকো অফিসে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ লাইন এবং নানা ঝামেলা নিয়ে কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে দারে ঘুরছেন গ্রাহকরা। বিল পরিশোধ করতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে থাকতে হয় বলে অভিযোগ করেন তারা। আবার হঠাৎ করে অস্বাভাবিক বিল আসা গ্রাহকরা সমাধানের জন্য দৌড়-ঝাপ করছেন। কিন্তু কোনো সমাধান পাচ্ছেন না।

আব্দুল মোত্তালিব রাজধানী তুরাগের বাউনিয়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা, টিনশেড বাড়িতে দু’টি ফ্যান ও তিন থেকে চারটি লাইট ব্যবহার করেন। মাসে বিল আসে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা। এদিকে প্রতি মাসের বিল পরিশোধ থাকার পরও লাখ টাকার নোটিশ পাঠায় ডেসকো কর্তৃপক্ষ। তাদের অফিসে গিয়ে বিলের কাগজ দেখানোর পরও কোনো সমাধান করছে না কর্তৃপক্ষ। উল্টো প্রতিমাসে নোটিশ দেয়া হলেও কাটা হয় না লাইন।

দিনের পর দিন ডেসকো অফিসে ধন্না ধরে কোনো সমাধান না পেয়ে মামলা করতে বাধ্য হন তিনি। আদালতের রায়ে ডেসকোর এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি।

আব্দুল মোত্তালিব বলেন, এটা নিয়ে আমরা অনেক হয়রানির মধ্যে ছিলাম। আমাদের মামলার ভয় দেখাতেন ডেসকোর লোকজন। আমরা অফিসে গিয়ে একজনকে টাকা আর কাগজ দিয়েছিলাম। টাকা খেয়েও কাজ করেননি উল্টো কাগজগুলো হারিয়ে গিয়েছে বলে জানান ওই ব্যক্তি। তিনি আরো বলেন, ডেসকো অফিসে আমার বৃদ্ধ বাবাকে দিনের পর দিন ঘুরিয়েছে তারা। বাধ্য হয়ে কোনো দিশা না পেয়ে উকিলের পরামর্শে মামলা করে নিস্তার পাই।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)