ঢাকায় সিটি নির্বাচনের হাওয়া যোগ্য প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ
রাজধানীতে বইতে শুরু করেছে সিটি নির্বাচনের হাওয়া। আগামী ডিসেম্বরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে এবং বিএনপি অংশগ্রহণ করবে—এমনটি ধরে নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে দলটির শীর্ষ কয়েক নেতা প্রার্থী বাছাইয়ে মাঠ জরিপ শুরু করেছেন। দলের জন্য নিবেদিত, নিজ এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ও অধিকতর জনপ্রিয়—এমন যোগ্য নেতা খুঁজছেন তারা। এ নিয়ে আওয়ামী লীগে এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ, পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা চলছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার মেয়র ও কাউন্সিলরদের বড়ো ভূমিকা থাকবে। ঐ নির্বাচনের আগে ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে চায় দলটি। তাই কানোভাবেই ঢাকার কর্তৃত্ব হাতছাড়া করতে চায় না দলটি। রাজনৈতিক কারণে দলটি গতবারের মতো এবারও ঢাকার দুই সিটির মেয়রের পাশাপাশি বেশিরভাগ কাউন্সিলরের পদ নিজেদের দখলে রাখতে চাইছে। এ প্রেক্ষাপটে মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থী বাছাইয়ে দলের নীতি-নির্ধারকরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বর্তমান মেয়র, কাউন্সিলর ও সম্ভাব্য দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কর্মকাণ্ড মনিটরিং করা হচ্ছে।
সম্প্রতি দলীয় নেতাকর্মীদের সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কয়েক মাস পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন। জোর করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে শেখ হাসিনা নির্বাচনে জিততে চান না। আপনারা কেউ যদি ভাবেন ক্ষমতায় আছি জিতেই যাব, তাহলে ভুল করবেন। আপনাকে জনগণের মন জয় করে, জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হতে হবে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাদের বিজয়ী হতে হবে।’
মাঠ জরিপ শুরু : আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী-পর্যায়ের পাঁচ নেতা জানান, ঢাকার প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে জরিপ চলছে। জরিপে বর্তমান কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন তৃণমূল নেতাকর্মী ও বাসিন্দারা। গত মেয়াদে যারা দলীয় মনোনয়নে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে মূল্যায়ন করেননি, এবার তাদের মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। যেসব প্রার্থী নিজের জনপ্রিয়তা দিয়ে জয়লাভ করতে পারবেন, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। মেয়র পদেও সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে কাজ চলছে।
মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী বাছাইয়ে জরিপ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, মেয়র ও কাউন্সিলরদের গত চার বছর চার মাসে সফলতার হিসাব কষলে অনেকের পাশ নম্বরও জুটবে না। জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর অনেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্কটুকুও রাখেননি।
মেয়র পদে আলোচনায় ৯ জন : দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা জানান, মেয়র পদে দলের বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী নেতা মনোনয়ন পেতে জোর তত্পরতা চালাচ্ছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম ছাড়াও ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ও দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের নামও শোনা যাচ্ছে। তা ছাড়া দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজী হক।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী ও অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক এমপি ও বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের নাম শোনা যাচ্ছে। দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি হাইকমান্ডের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা।
কোন্দল, সংঘাতের আশঙ্কা : এদিকে দলীয় প্রার্থিতা পাওয়া নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র কোন্দল শুরু হয়েছে। কোথাও কোথাও এ বিরোধ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে এগোচ্ছে। দলের নীতিনির্ধারকদের আশঙ্কা, সিটি নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাত আরো বাড়বে, যা সামাল দেওয়া দলীয় হাইকমান্ডের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাই প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে গিয়ে নেতাকর্মীরা যাতে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে না জড়িয়ে পড়ে সে বিষয়ে আগে থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে চান দলীয় হাইকমান্ড। এরই কৌশল হিসেবে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদ উন্মুক্ত রাখার চিন্তাভাবনা চলছে। এ দিকে দুই সিটিতেই আওয়ামী লীগ মেয়র পদে একক প্রার্থী দেবে। দলের কোনো নেতা বিদ্রোহীপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করলে হাইকমান্ড তার বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নেবে।