কালিগঞ্জে স্কুলের শিক্ষকরা চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করে কালিগঞ্জে স্কুল শিক্ষকরা চালিয়ে যাচ্ছে কোচিং বাণিজ্য। উপজেলার অধিকাংশ স্কুলের শিক্ষক জড়িয়ে রয়েছে কোচিং এর সাথে।প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে সম্প্রতি এইসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সব ধরনের কোচিং বন্ধ থাকার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মণি।
ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছেও। কিন্তু এসব নির্দেশনা উপেক্ষা করে কালিগঞ্জে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। কেউ কেউ কিন্ডার গার্ডেনের সাইনবোর্ড অথবা কোচিং সেন্টারে নাম দিয়ে আবার অনেক শিক্ষক তাদের বাড়িতে কৌশলে চালাচ্ছেন এই বাণিজ্য। সরেজমিনে উপজেলার অনেক শিক্ষকদের বাড়িতে যেয়ে চোখে পড়ে কোচিং করানোর দৃশ্য। কোচিংয়ের উপর সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও সরকারি কালিগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমান মিজান,সাহাঙ্গীর ইসলাম গফফার রহমান লাভলু ইসলাম গোপাল গাইন,রোকনুজ্জামান ও মরিয়ম পারভীন সকাল ৭ টা থেকে স্কুলের ভিতরে প্রতিদিন চালিয়ে যাচ্ছেন কোচিং বাণিজ্য।
ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানান, মিজানুর রহমান মিজান জোর করে তাদের কোচিং করান। কেউ তার কাছে কোচিং করতে না চাইলে সেই ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন ভাবে ক্লাসে অপমান করেন। ওই স্কুলের শিক্ষকরা কোচিং করানোর জন্য ৩ শত টাকা থেকে ৫ শত টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন বলে জানান কোচিংয়ের শিক্ষার্থীরা। পাইলট স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শাহিনুর রহমান শাহিন বাজারগ্রাম কাঁপালি পারায় তার নিজের বাড়িতে খুলেছেন কোচিং সেন্টার। এছাড়া শ্যামনগর মহাসিন ডিগ্রি কলেজের প্রফেসর তাইজুল ইসলাম ৭ম শ্রেণি থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিদিন কোচিং করান বাজারগ্রাম এলাকায় তার নিজের বাড়িতে।
এছাড়া কুশুলিয়া ইউনিয়নের মহৎপুর গ্রামে ইউনিক কোচিংয়ে পাইলট স্কুলের শাকিল ইসলাম ও এম খাতুনের সিরাজুল ইসলাম ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন কোচিং বাণিজ্য। মৌতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঞ্জীব রায় কুশুলিয়া ভদ্রখালী তার নিজের বাড়িতে করাচ্ছেন কোচিং। এছাড়া উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে কয়েকজন শিক্ষক তাদের বাড়িতে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোচিং করিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্য কৃষ্ণনগর বাজারের পাশে অবস্থিত কৃষাণ মজদুর ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সোতা গ্রামের দেবদাশ রায় ও তার ভাই প্রশান্ত রায় তাদের নিজেদের বাড়িতে কোচিং করাচ্ছেন। এছাড়া বালিয়াডাঙ্গা দাখিল মাদ্রাসার একই এলাকার শিক্ষক তপন সরকারকে তার নিজের বাড়িতে কোচিং করাতে দেখা যায়।
কোচিং বাণিজ্যর বিষয় জানতে চাইলে শিক্ষকরা বলেন, বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের আইন তাদের জানা নেই। তবে উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষক কোচিং করাচ্ছেন এজন্য তারাও করাচ্ছেন। উপজেলার সব শিক্ষক কোচিং বাণিজ্য ছেড়ে দিলে তারাও ছেড়ে দিবেন বলে জানান। এছাড়া নেংয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিশেষ ক্লাসের নাম করে চালানো হচ্ছে কোচিং বাণিজ্য। বিশেষক্লাস করালেও অমান্য করা হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন। ওই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হারুন ইসলাম প্রতিদিন ছুটির পড়ে চালিয়ে যান বিশেষ ক্লাস। এক রোল থেকে দশ রোল পর্যন্ত শিক্ষার্থীকে দেখা যায় বিশেষ ক্লাস করছে।
এবিষয়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হারুন ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করছেন।
এ বিষয়ে নেংয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর মান্নান জানান,শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইনমেনে তার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ ক্লাস করানো হচ্ছেনা বলে স্বীকার করেন তিনি।
এবিষয়ে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, তাদের বাচ্চাদের কোচিং করানোর জন্য অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হয়। কোচিং না করালে বাচ্চারা খারাপ রেজাল্ট করতে পারে এই ভয়ে কোচিং করাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তাছাড়া স্কুলে পাঠদান কোচিংয়ের মত ভাল হলে কোন ছাত্র-ছাত্রীর অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে শিক্ষকদের কাছে কোচিং করতে হতনা।
অবৈধ কোচিংয়ের বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন,কালিগঞ্জসহ জেলায় যেসকল শিক্ষক কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে আগামী ৬ দিনের মধ্য প্রজ্ঞাপন জারী করে কোচিং বন্ধের জন্য জানানো হবে।তারপরও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ উপেক্ষা করে কোন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।