কলারোয়ার তুলশীডাঙ্গার দেবোত্তর কালীমাতা মন্দিরের সম্পত্তি অবৈধ দখলদার ও ভুমিদস্যু কর্তৃক আতœসাতের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার তুলশীডাঙ্গা দেবোত্তর কালীমাতা মন্দিরের সম্পত্তি অবৈধ দখলদার ও ভুমিদস্যু কর্তৃক আতœসাত এবং মন্দির অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আব্দুল মোতালেব মিলনায়তনে উক্ত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কলারোয়া উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হরেন্দ্র নাথ রায় ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক সন্দীপ রায়। এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হরেন্দ্র নাথ রায়।
তার লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কলারোয়া পৌরসভাধীন তুলশীডাঙ্গা মৌজায় সি.এস ৬৯৬, এস.এ ৬৫১ ও সর্বশেষ বি.আর.এস খতিয়ান নং ১৬ ও ৪৯৬ মোতাবেক ৪.৮৮ একর সম্পত্তি দেবোত্তর কালীমাতা মন্দিমের খাস সম্পত্তি। উক্ত মন্দিরের ৩ জন সেবায়েত ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর এদেশ ত্যাগ করে স্থায়ীভাবে ভারতে চলে যান এবং একজন সেবায়েত ৮০’র দশকে মৃত্যু বরণ করার পর উক্ত মন্দিরে এযাবত কোন সেবায়েত নিয়োগ করা হয়নি। এই সুযোগে তুলশীডাংগা এলাকার পূর্ববর্তী সেবায়েত মৃত তারাপদ রায় চৌধুরীর পুত্র সম্প্রতি মৃত দুলাল চন্দ্র রায় চৌধুরী ও পরিমল চন্দ্র রায় চৌধুরীসহ তাদের পরিবারবর্গ উক্ত বর্ণিত দেবোত্তর সম্পত্তি ও সম্পদ আত্মসাত অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। আর.এস জরিপ চলাকালে উক্ত দুই ব্যক্তি দেবোত্তরের সিংহভাগ জমি বেআইনীভাবে নিজেদের ব্যক্তি নামে রেকর্ড পূর্বক আত্মসাতের অপচেষ্টা চালায়। এছাড়া তারা দেবোত্তরের মূল্যবান বৃক্ষ বেআইনীভাবে কর্তন পূর্বক লক্ষ লক্ষ টাকা আতœসাতসহ মন্দিরের জমিতে অবৈধভাবে দোকানপাট, বাড়ীঘর ও বহুতল ভবন নির্মান পূর্বক জমি দখলের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। তৎকালীন জেলা প্রশাসন সাতক্ষীরা কর্তৃক এহেন অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারী করায় উক্ত দুই ব্যক্তি নিজেদের সেবায়েত দাবী করে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসকসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে বিবাদী করে সাতক্ষীরা সহকারী জজ আদালতে দেং ৮/২০০০ নং মামলা দায়ের করে। যা গত ০৬/০৪/২০০৪ইং তারিখে খারিজ হয়। উক্ত খারিজ আদেশের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে বাদী পক্ষ সাতক্ষীরা জেলা জজ আদালতে দেং আপিল ৩০/২০০৪ নং মামলা দায়ের করেও পরাজিত হয়। উভয় মামলার রায়ে বিজ্ঞ বিচারক এই মর্মে রায় প্রদান করেন যে “মামলার বাদী পক্ষ কোন সেবায়েত নয় এবং বর্ণিত দেবোত্তর সম্পত্তিতে তাদের কোন স্বত্ব-স্বার্থ নেই, দেবোত্তর সম্পত্তির প্রকৃত তত্বাবধায়ক বাংলাদেশ সরকার তথা ১নং বিবাদী জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা এবং এই সম্পত্তিতে পূজারী সকল হিন্দু জনসাধারণের পূর্ণ অধিকার আছে”। এরপর উক্ত বাদী পক্ষ জেলা জজ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মহামান্য হাইকোর্টে সিআর ৭৬৭/২০০৯ রিভিশন মামলা দায়ের করে। যা বিগত ০৬/০৭/২০১৭ তারিখে খারিজ হয় এবং নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকে। এরপরও উক্ত মামলাবাজ ও ভূমিদস্যুদ্বয় হাইকোর্টের উক্ত রিভিশন মামলার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টে লিভ টু আপিল মামলা নং ২০৩৩/২০১৮ দায়ের করে। যা যথারীতি গত ২৮/০১/২০২১ ইং তারিখে খারিজ হয় এবং নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, বর্ণিত দেবোত্তর কালীমাতা মন্দির ও এর আওতাধীন সম্পদ দেশের প্রচলিত আইন এবং আদালতের চুড়ান্ত বিবেচনায় সরকার তথা জেলা প্রশাসন কর্তৃক তত্ত¡াবধানকৃত ও নিয়ন্ত্রিত একটি বৃহৎ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। যেখানে এলাকার হিন্দু স¤প্রদায়ের ধর্মীয় স্বার্থ ছাড়াও গভীর ধর্মানুভূতি জড়িত রয়েছে। অথচ জেলা প্রশাসন সাতক্ষীরা কর্তৃক এলাকার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটির প্রতি চরম উদাসীনতার কারণে উক্ত অবৈধ দখলদার ও ভূমিদস্যুগণ মন্দিরের লক্ষ লক্ষ টাকার বৃক্ষ নির্বিচারে কর্তন পূর্বক আতœসাতসহ ঘরবাড়ী, দোকানপাট, কারখানা ও বহুতল ভবন নির্মান করে দখলদারিত্ব বজায় রেখে দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় যাবত মন্দিরটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আদালতের চূড়ান্ত রায়ের পরও বারবার জেলা প্রশাসন সাতক্ষীরাকে এব্যপারে লিখিতভাবে আবেদন করেও মন্দিরটি দখলদারদের কবল থেকে অবমুক্ত করা হয়নি বা হিন্দু সাধারণের পূজা-অর্চনার জন্য মন্দিরটি উন্মুক্ত করা হয়নি। এতে এলাকার আপামর হিন্দু জনসাধারণ অতিশয় ক্ষুব্ধ ও হতাশাগ্রস্ত। সংবাদ সম্মেলন থেকে এসময় তারা অবিলম্বে উক্ত দেবোত্তর কালীমাতা মন্দিরের সকল অবৈধ স্থাপনা অপসারণ, অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে মন্দিরটি অবমুক্তকরণের মাধ্যমে হিন্দু সাধারণের নিয়মিত পূজা অর্চনা ও জনকল্যাণ মূলক কাজে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্তকরণসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতায় একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে পরিচালনার জন্য সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি স্বপন কুমার শীল, সাধারন সম্পাদক নিত্য নন্দ আমিন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কলারোয়া উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক সন্তোষ কুমার পাল, সংগঠনটির কলারোয়া পৌর কমিটির সভাপতি দিলীপ অধিকারী চান্দুসহ অন্যান্যরা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)