সরকারি সম্পত্তি রক্ষা চেষ্টাই কাল হলো খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আমিনুরের

খাদ্য গুদামের সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করার চেষ্টাই কাল হলো সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো. আমিনুর রহমান বুলবুলের। সকল সরকারি নিয়মনীতি অনুসারে খাদ্য গুদামের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হলেও অদৃশ্য কারণে একের পর এক কাল্পনিক অভিযোগ এই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। যার নেপথ্যে শ্যামনগর উপজেলার ভেটখালী খাদ্য গুদামের সরকারি সম্পত্তি রক্ষার বিষয়টি।

ভেটখালী এলাকার হুমায়ুন কবির নামের একজন ভেটখালী খাদ্য গুদামের সম্পত্তি নিজেদের পৈত্তিক বলে দাবি করেন। ঘটনা গড়িয়েছে আদালত পাড়ায়। হুমায়ুন কবির সাতক্ষীরার আদালতে দুইটি ও উচ্চ আদালতে পৃথক দুইটি মামলাও করেছেন।

নকিপুর খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা মো. আমিনুর রহমান বুলবুল জানান, ভেটখালী সরকারি খাদ্য গুদামের এক একর ১৪ শতক সম্পত্তি। গুদামের জমির কাগজপত্র সব রয়েছে। রেকর্ড আর এলএকেসের কাগজপত্রও রয়েছে। কিন্তু হুমায়ুন কবির ২০১৪ সাল থেকে ওই জমির কিছু অংশ অবৈধভাবে দখল করে আছে। সে জমি নিজের বলে দাবি করে তবে তার স্বপক্ষের কোন কাগজপত্র নেই। তার দাদা ও বাবা চেকের মাধ্যমে ওই সময় জমির টাকা বুঝে নেয়। তাদের সেই সময়কার স্বাক্ষরের কাগজপত্রও রয়েছে।

তিনি আরও জানান, হুমায়ুন কবির এখন বলেন ওখানে আমাদের আরও জমি রয়েছে। এ সংক্রান্ত সাতক্ষীরার আদালতে দুইটা ও উচ্চ আদালতে দুইটা মামলা করেন হুমায়ুন করিব। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পক্ষে আমি মামলাগুলো তদারকি করছি। ২০১০ সালে তৎকালীন এমপির কাছে ওই জমি দীর্ঘমেয়াদী ইজারা পাওয়ার জন্য আবেদন করেন হুমায়ুন কবির। সেখানে তিনি বলেন, এক একর ১৪ শতক জমির মধ্যে ৫৭ শতক জমি তার পিতার। যেহেতু গুদামটি এখন বন্ধ রয়েছে সেহেতু জমিটি ইজারা পাওয়ার আমি প্রকৃত হকদার। আর ২০১৪ সালে দাবি করে এক একর ১৪ শতকের মধ্যে ৫০ ফুট জমি তার।

নকিপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো. আমিনুর রহমান বুলবুল অভিযোগ করে বলেন, খাদ্য গুদামের সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করার চেষ্টাই আমার অপরাধ হয়েছে। সরকারি সকল নিয়মনীতি অনুসারে খাদ্যগুদামের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও কাল্পনিক ও মনগড়া অভিযোগ করা হচ্ছে বিভিন্ন দপ্তরে। একই সঙ্গে মিথ্যে তথ্যের সংবাদ পরিবেশন করে সম্মানহানি করা হচ্ছে।

এই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমন চাল সংগ্রহ মৌসুমে শ্যামনগর খাদ্য গুদামে ৭৪৫ মেট্রিক টন চাল নিবন্ধিত তিনটা মিল থেকে কেনা হয়। সরকার নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে মিলে পাক্ষিক ক্ষমতা রয়েছে। আমন চাল সংগ্রহ মৌসুমে ৩৬ টাকা কেজি দরে সরকার চাল সংগ্রহ করা হয়। প্রকল্পের প্রতিটা ডিওর একটা সময় সীমা থাকে, সেই সময় সীমার মধ্যেই অবশ্যই প্রকল্পের সভাপতিকে প্রকল্পের মালামাল গুদাম থেকে উত্তোলন করতে হয়। সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর ডিওর মাল উত্তোলনের সুযোগ থাকে না। এখানে কোন অবস্থাতেই এক মাসের ডিওর মাল অন্য মাসে বিলি বিতরণ দেখানোর সুযোগ নেই। কাবিখার মাল প্রকল্পের সভাপতিগণ ডিওর মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংগ্রহ ও বিতরণ করেন। বড় দিনের ৫শ কেজি চাল সরকারিভাবে বরাদ্দ থাকে গির্জায় ভক্তদের খাবার জন্য। সে চাল কোনভাবেই গুদামে রাখার সুযোগ নেই। গির্জার প্রধানগণ সেগুলো যথা সময়ে উত্তোলন করে নিয়ে যান। মস্টাররোলের মাধ্যমে প্রকল্পের ৫০ লাখ টাকার আতসাৎ অভিযোগ ভিত্তিহীন। এ প্রকল্পের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। এটা পিআইও অফিস থেকে ডিও দেয়। তারাই ডিওতে যে পরিমাণ চাউল থাকে ওই চাউলটাই আমি গুদাম থেকে বিতরণ করি।

তবে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো. আমিনুর রহমান বুলবুলকে দূর্ণীতিগ্রস্থ উল্লেখ করে ভেটখালি খাদ্য গুদামের জমির দাবিকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ওই জমি আমার পৈত্তিক। তার সকল কাগজপত্র রয়েছে। উচ্চ আদালত অন্ধ হলে উচ্ছেদ নোটিশ কার্যক্রম স্থগিত করতো না। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনছে তা সঠিক নয়।

এদিকে, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

তিনি বলেন, খাদ্য গুদাম পরিদর্শনে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের কোন সত্যতা মেলেনি। তবে তদন্তের স্বার্থে উর্দ্ধতন খাদ্য পরিদর্শককে ঘটনার তদন্ত করতে বলা হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)