ইলেকট্রিক কেতলি থেকে এফআর টাওয়ারে আগুন

রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারের আগুন একটি ইলেক্ট্রিক কেতলি থেকে লেগেছে। ২৩ তলা ওই ভবনের আট তলার স্পেক্ট্রা গ্রুপের অফিসের রান্না ঘরের ইলেক্ট্রিক কেতলি থেকে ভয়াবহ এই আগুনের সূত্রপাত হয়।

ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি এমন তথ্য পেয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আজ কালের মধ্যেই এই তদন্ত রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন।

নাম প্রকাশ না করে ফায়র সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, এফআর টাওয়ারের লেভেল-৭ (৮ তলা) এ স্পেক্ট্রা এসএন টেক্সটাইলের অফিস ও স্টোর রুম। স্পেক্ট্রা গ্রুপের অফিসের রান্নাঘরের ইলেক্ট্রিক কেতলি বিকল হয়েই আগুনের সূত্রপাত হয়। যে আগুন কেড়ে নিয়েছে ২৬টি প্রাণ।

ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি দেখতে পেয়েছে- আট তলায় স্পেক্ট্রা অফিসের স্টোর রুমের পাশেই রান্নাঘর। গ্যাস সংযোগ থাকার পরও ইলেক্ট্রিক কেতলিতে চা বা কফির জন্য পানি গরম করা হতো। কিন্তু ঘটনার দিন (২৮ মার্চ) কেতলিটি বিকল হয়ে আগুন ধরে যায়। পরে শর্ট সার্কিট হয়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পাশের স্টোর রুমে রাখা স্পেক্ট্রা সোয়েটার ও স্পেক্ট্রা বায়িং হাউজের পোষাকের নমুনা  ও টেক্সটাইল কারখানায় ব্যবহৃত কেমিকেল ছিল। আর এসব দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত গ্রাস করে বহুতল ভবনটি।

জানা গেছে, ২৮ মার্চ দুপুরে আগুন লাগার সময় স্পেক্ট্রা অফিসে তিনজন কর্মচারী দায়িত্বরত ছিলেন। ওই সময় রান্না ঘর থেকে হটাৎ ধোয়া বের হতে দেখে তারা দৌড়ে এসে দেখেন কেতলি পুড়ে আগুন জ্বলছে। এসময় তারা আগুন নেভাতে চেষ্টা করেও পারেনি। একপর্যায়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তারা ওইভাবে রেখে বের হয়ে যান। একপর্যায়ে গ্যাস লাইন ও স্টোর রুমের কেমিকেলের নমুনা ও তৈরি পোষাকের নমুনায় আগুন ধরে গিয়ে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে।

এদিকে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভিাগ (সিআইডি) বনানী থানায় এই আগুনের ঘটনায় করা মামলার আলামত হস্তান্তর করেছে। অগ্নিকাণ্ডের পর সিআইডি’র ক্রাইম সিন বিভাগ ঘটনাস্থল থেকে ১০ প্রকার আলামত সংগ্রহ করে। হস্তান্তর করা এসব আলামতের মধ্যে রয়েছে-পুড়ে যাওয়া ইলেক্ট্রিক কেতলি, পোড়া বৈদ্যুতিক তারের অংশ, বৈদ্যুতিক লাইনের বোর্ডসহ বৈদ্যুতিক তার, বৈদ্যুতিক বোর্ডের পোড়া তার, মাল্টিপ্লাগসহ পোড়া সুইচ বোর্ড, প্লাস্টিকের বোতল, জিন্স প্যান্টের পোড়া অংশ, টিন ও প্লাস্টিকের বোতল, একটি পার্টিকেল বোর্ডের পোড়া অংশ, দেয়ালের পোড়া জায়গার ক্রেসিং কালো গুড়া এবং তারসহ বৈদ্যুতিক বোর্ড।

উদ্ধার করা আলামতের মধ্যে পোড়া জিন্স প্যান্ট স্পেক্ট্রা এসএন টেক্সটাইলের তৈরি পোষাকের নমুনা। টিন ও  প্লাস্টিকের বোতলে ছিল টেক্সটাইলের কাপড় তৈরীর কাজে ব্যবহৃত কেমিকেল।

অপরদিকে, বুধবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি টিম বসুন্ধরা আবাসিকের এফআর টাওয়ারের আংশিক মালিক সেলিম উল্লাহর বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে সেলিম উল্লাহ ও তার ছেলে সাকিবকে পাওয়া যায়নি।

একইদিন পৃথকভাবে ভবন পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ এ এম মনিরুজ্জামানের বনানী মাঠের পাশে তার বাংলো বাড়িতে অভিযান চালায় ডিবি। বাংলোতে তাকে পাওয়া যায়নি। এফআর টাওয়ারের ১৫ তলার মাইকা সিকিউরিটিজের স্বত্বাধিকারী এএএম মনিরুজ্জামান আত্মগোপন করেছেন।

এফআর টাওয়ারের একজন কর্মকর্তা বলেন, সেলিম উল্লাহ এফআর টাওয়ার পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি। ৮ তলা ও ৭ তলায় সেলিম উল্লাহ’র ছেলে সাকিবের অফিস রয়েছে। গেল কয়েক বছর যাবৎ সেলিম উল্লাহ’র টেক্সটাইল ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। টঙ্গীর হিমেরদীঘি তার স্পেক্ট্রা সোয়েটারের কারখানা। এফআর টাওয়ারের পুড়ে যাওয়া আট তলার প্রধান অফিসের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে টেক্সটাইলে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেলিম উল্লাহ অফিসে অনিয়মিত ছিলেন। ওই ফ্লোরে ৩/৪ জন কর্মচারী থাকতো। তার ছেলে সাত তলায় নিয়মিত অফিস করতেন। আর পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ হলেন সৈয়দ আমিনুর রহমান। এফআর টাওয়ারের ৯ তলার ( লেভেল-৮) মালিক তিনি। এআই ফ্রেইথ নামে তার অফিসটি ছিল ৯ তলায়। যদিও অগ্নিকাণ্ডে ৯ তলার দেয়াল, আসবাবপত্র জানালার কাঁচসহ সব কিছুই পুড়ে গেছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)