২০ দলও বিলুপ্ত হচ্ছে

জামাতের পর বিলুপ্ত হচ্ছে ২০ দলীয় জোটও। আজ শনিবার ২০ দলীয় জোটের একটি বৈঠক ডাকার কথা ছিল। কিন্তু জামাত ইসলাম বৈঠকে অনাগ্রহ দেখিয়েছে এবং ২০ দলের আরও তিনটি শরিক দল এই বৈঠকে এত স্বল্পতম সময়ে যোগ দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে। এর মাধ্যমেই কার্যত ২০ দলের বিলুপ্ত হচ্ছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে।

২০০১ সালের নির্বাচনের আগে এই ২০ দলীয় জোট গঠিত হয়েছিল। এই ২০ দলীয় জোটের প্রধান দুটি দল ছিল বিএনপি এবং জামাত। তারপর নানা টনাপোড়নে ২০০১ সালে বিজয়ী হয়ে জামাতকে নিয়েই বিএনপি সরকার গঠন করে। জামাতের দুজনকে সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তারপর থেকেই ২০ দলীয় জোট নানা টানাপোড়নের মধ্য থেকে এগিয়ে গেছে।

এই জোটে আরও অনেক শরিকদল থাকলেও মূলত জামাত এবং বিএনপিই ছিল মূল শক্তি। যখন জামাত গত সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, তারা ২০ দলীয় ঐক্যজোটের সঙ্গে থাকবে না। তারা আলাদাভাবে চলবে, এবং তাদের রাজনৈতিক টানাপোড়নেই যখন তারা ব্যস্ত, ঠিক সে সময়েই ২০ দলীয় জোটেরও বিলুপ্তি ঘটবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা বলছেন, ‘জামাত থাকার কারণেই তারা ২০ দলীয় জোট রাখার পক্ষে ছিল। জামাত না থাকলে বাকি দলগুলোকে নিয়ে ২০ দলীয় জোট করা অবান্তর।’ বিএনপির ঐ নেতা বলেছেন, ‘এখন জামাত বাদ দিয়ে যে শরিকদলগুলো আছে তাদেরকে আমরা বলবো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিতে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারেই আমরা পরবর্তী আন্দোলন -সংগ্রামগুলো এগিয়ে নিতে চাই।’ তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি সূত্র বলেছে যে, ‘২০ দলীয় জোটের যে দলগুলো সেকুলার, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক সে দলগুলোকে তারা ঐক্যফ্রন্টে নিতে পারেন। সেখানে যে ইসলামিক দলগুলো আছে, সেগুলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে নিবে না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাজনীতিতে একটি সেকুলার চরিত্র রাখতে চায়। দক্ষিনপন্থীদের সঙ্গে হাত মেলাতে চায় না।‘

ফলে ২০ দলীয় জোটের হাতেগোনা চারটি বা পাঁচটি ছাড়া কোন দলই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবে না। ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত হলো কি হলো না, তা জানতে চাওয়া হলে বিএনপির সিনিয়র নেতা এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন,‘২০ দল আনুষ্ঠানিকভাবে বিলোপ হয়নি। এবং এরকম বিলোপ করার সিদ্ধান্ত বিএনপির নেই।’ তবে তিনি বলেন,‘পত্র পত্রিকায় দেখেছি জামাত ২০ দলীয় জোটে থাকতে চায় না।’ কিন্তু তিনি বলেন যে, ‘এ ব্যাপারে জামাতের কাছ থেকে কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাইনি। আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া পর আমরা বিবেচনা করবো।’ আজকের বৈঠকটি হলো না কেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,‘বহুদিনই বহু বৈঠক হয়নি। নানা জনের নানা সমস্যা থাকে। এসব সমস্যার কারণেই আমাদের বৈঠক পিছিয়ে দিতে হয়। বৈঠক হয়নি মানেই এই নয় যে ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ’

তবে নজরুল ইসলাম খান যাই বলুক না কেন। জামাত এবং বিএনপির আনাগ্রহের কারণে ২০ দল বিলুপ্তির মুখে। কারণ, বিএনপির যে অংশটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্যে আগ্রহী। তারা মনে করছে, ‘জামাতকে নিয়েই বিএনপি থাকলে দলটি আন্তর্জাতিক কোন সহযোগিতা পাবে না। এজন্যই তারা বিভিন্ন সময়ে দলের মধ্যে জামাত ছাড়ার চাপ সৃষ্টি করছিল।’ অন্যদিকে যারা ২০ দলীয় জোটের পক্ষে ছিলেন, তারাও যখন জামাত আলাদা হয়ে গেছে। তখন তারা মনে করছেন, জামাতকে বাদ দিয়ে শুধু অন্যদলগুলো নিয়ে ঐক্য করা অর্থহীন। এ দলগুলোর শক্তি সামর্থ্য খুবই সামান্য। এ কারণেই এখন বিএনপিপন্থী রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের প্রক্রিয়া চলছে এবং এই মেরুকরণের মধ্যে যেটা অনিবার্য সেটা হলো ২০ দল আর থাকছে না। তবে ২০ দল থাকলে শেষ পর্যন্ত শরিকরা কি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যাবে নাকি অন্যকোন গ্রুপ করবে সেটাই দেখার বিষয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)