সাতক্ষীরায় অবৈধ নবজাতক আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি!

 এক নারীর অবৈধ সন্তান জন্মদানের ২০ ঘণ্টা পার না হতেই এক ক্লিনিক মালিক আড়াই লাখ টাকায় ওই সন্তান বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার দুপুর দু’ টোর দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের নিকটবর্তী হার্ট ফাউন্ডেশন এন্ড ইনসেন্টিভ কেয়ার হসপিটালে ওই বাচ্চার জন্ম হয়।
যশোরের শার্শা থানাধীন বাগআচড়া গ্রামের ফাতেমা খাতুন জানান, একই এলাকার আতিয়ার রহমানের ছেলে আক্তারুলের সঙ্গে চার বছর আগে তার বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর সিজারের একটি কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ার পরপরই তার স্বামী মালয়েশিয়ায় চলে যায়।

স্বামী বিদেশ চলে যাওয়ার শ্বশুর শাশুড়ি তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতো। একপর্যায়ে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাপের বাড়িতে চলে আসেন। সেখানে কলারোয়ার কাজীরহাটের এক মোটর ম্যাকানিক বর্তমানে যশোরের সাত মাইলের একটি মোটর গ্যারেজে কর্মরত আক্তারুজ্জমানের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের কথা বলে আক্তারুল তার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে।

একপর্যায়ে সে অন্তঃস্বত্বা হয়ে পড়লে আক্তারুল তার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করে। পরবর্তীতে বিষয়টি তার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন জানতে পারে। তার স্বামী মালয়েশিয়া থেকে তাকে জানায় যে, ওই বাচ্চা সে মেনে নেবে।

বিষয়টি জানতে পেরে তারে গ্রামের সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য খাদেজার স্বামী আব্দুল্লাহ যোগাযোগ করে কলারোয়া সদরের মনোয়ারা নার্সিং হোমের মালিক হাতুড়ে ডাক্তার মনোয়ারা সঙ্গে। তিনি তার ক্লিনিকে বাচ্চা সিজার করানোর কথা বলে একটি দিন নির্ধারণ করে দেন।
ফতেমার স্বামীর পরিবারের সদস্যরা জানান,ফতেমার গর্ভে অবৈধ সন্তান আসার বিষয়টি জানতে পেরে মনোয়ারা নার্সিং হোমের মালিক মনোয়ারা খাতুন, খাদিজা মেম্বরের স্বামী আব্দুল্লাহ ও ফতেমার মা নাছিমার যোগসাজশে নবজাতককে আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে ক্লিনিক থেকে দিয়ে দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন।

সে অনুযায়ী গত ২ ফেব্রুয়ারি তড়িঘড়ি করে আব্দুল্লাহ তাকে (ফাতেমা) তাকে মনোয়ারা ক্লিনিকে ভর্তি করান। সেখানে তিন দিন রাখার পর কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ বেলাল হোসেন সিজার এখনই করার সময় হয়নি উল্লেখ করে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেন। সে অন্যত্র সিজার করাতে পারে এমন আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় আব্দুল্লাহ পুলিশ এনে মনোয়ারার কথামত সিজার করার হুমকি দেয় তার মা নাছিমাকে।

একপর্যায়ে তাকে গত রোববার সকালে তার প্রতিবেশী চাচী মঞ্জুয়ারার ও সাতক্ষীরা শহরতলীর চালতেতলার ডাঃ জামিরুলের মাধ্যমে নয় হাজার টাকা চুক্তিতে ডাঃ ফয়সাল আহম্মেদের মালিকানাধীন হার্ট ফাউন্ডেশন এন্ড ইনসেনটিভ কেয়ার হসপিটালের তিন তলার ১০ নং কেবিনে ভর্তি করা হয়। রোববার দুপুরে ডাঃ দেবদুলাল সরকার তার সিজার করলে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ডাঃ মনোয়ারা হার্ট ফাউন্ডেশনের সামনে মেইন রোডের বিপরীতে অবস্থান করে তার মা নাছিমাকে দিয়ে নবজাতক ছেলে সন্তানকে নিয়ে যায়।
ফাতেমার এক আত্মীয় মঙ্গলবার সকালে এ প্রতিবেদককে জানান, ডাঃ মনোয়ারা, আব্দুল্লাহ ও মঞ্জুয়ারা মিলে আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে তাদেরই পাশের গ্রামের এক বিত্তশালীর কাছে ফতেমার গর্ভস্থ সন্তানকে বিক্রি করেছে।

পরে সাংবাদিকদের ভয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সহায়তায় মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে ওই নবজাতককে ক্লিনিকে ফিরিয়ে আনা হয়। যদিও সিজারের পর পাঁচ দিন রাখার কথা থাকলেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ নিজেদেরকে বাঁচাতে মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে ফতেমাকে বের করে দিয়েছে।
জানতে চাইলে ডাঃ দেবদুলাল সরকার জানান, তিনি সিজার করেছেন ঠিকই । পরবর্তী কোন খবর তিনি রাখেন না।
কলারোয়া মনোয়ারো নার্সিং হোমের মালিক মনোয়ারা খাতুন নিজেকে আনোয়ারা খাতুন পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি একটি অবৈধ সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়তে চেয়েছিলেন। শিশুটিকে বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

মঞ্জুয়ারা খাতুন জানান, প্রতিবেশী হিসেবে ফাতেমাকে তার বাপের বাড়ির এলাকার গ্রাম ডাক্তার জামিরুল ইসলামের মাধ্যমে হার্ট ফাউণ্ডেশনে ভর্তি করিয়েছেন।
হার্ট ফাউন্ডেশন এন্ড ইনসেন্টিভ কেয়ার হসপিটালের ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম বলেন, বাচ্চা বিক্রির বিষয়টি তারা জানেন না। মঙ্গলবার বিকেলে বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার পর তারা থাকতে না চাওয়ায় ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)