নির্বাচন বর্জন নিয়ে বিভক্ত বিএনপি

মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে? গতকাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব আন্দোলনের হুমকি দেন। আজ মনোনয়ন বাছাইয়ের দিনে বিএনপি প্রার্থীদের বাতিল হওয়ার উৎসবের পর, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, বিএনপির নির্বাচন বর্জন এখন সময়ের ব্যাপার।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে যা যা করা দরকার তার সবই সরকার করছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন, আদালত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সবাইকে এমন ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে যেন আমরা নির্বাচন করতে না পারি।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কর্মীরা ঘরে থাকতে পারছে না, এরপর নির্বাচন করবো কীভাবে?’ তিনি বলেন, ‘সরকার বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার প্রকল্প নিয়েছে। সরকার জানে বিএনপি যদি, নির্বাচনে শুধু দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলেই সরকারের পরাজয় অবধারিত। এজন্য সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো, এমন পরিস্থিতি তৈরি করা, যাতে বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়েছে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী।’

বিএনপি কি তাহলে নির্বাচন থেকে সরে যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হতে দেব না। বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জন করে তাহলে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদও বলেছেন, ‘সরকার বিএনপির জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে এমন কৌশল নিচ্ছে যেন, আমরা নির্বাচন বর্জন করি। কিন্তু বিএনপি সরকারের ফাঁদে পা দেবে না।’

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ নির্বাচন বর্জনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিলেও, ক্রমেই বিএনপিতে নির্বাচন বর্জনের পাল্লা ভারী হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এখন মনোনয়ন বাছাইয়েও বাদ পড়লেন মীর নাছির, আমানউল্লাহ আমান, মোর্শেদ খানসহ বিএনপির সব হেভিওয়েট প্রার্থীরা। এর ফরে এরাও নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য বিএনপিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিএনপির তৃণমূলকে নির্বাচনের জন্য রাজি করানো হয়েছিল এই বলে যে, বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য এই নির্বাচন। বিএনপির তৃণমূল আশা করেছিল যে, এই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত হয়তো বেগম জিয়া অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু বেগম জিয়ার মনোনয়ন বাতিল হবার পর, বিএনপির মাঠ পর্যায় থেকে নির্বাচন বর্জনের দাবি জোরালো হচ্ছে। বিএনপির একটি অংশ এখনো ভোট বিপ্লবের আশা করছে। তাঁরা মনে করছেন, এসব প্রতিকূলতাকে জয় করে নির্বাচনে টিকে থাকতে পারলেই বিএনপির জয় অবধারিত।

জানা গেছে, বিএনপিতে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে ভিন্নমত ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। এখন এই ইস্যুতে বিএনপি কোন পথে যাবে, তা স্পষ্ট হবে ৯ ডিসেম্বরের আগেই। শুধু বিএনপি নয়, ২০ দলের মধ্যেও এই বিভক্তি ছড়িয়ে পড়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)