ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী…

পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিটি কে? কার নাম বলবেন? নিশ্চয়ই, কোনো বিলিয়নিয়ার ব্যাংকার অথবা কোনো কর্পোরেট মোগলের কথা? বিল গেটস? জন ডি রকফেলার? আফ্রিকান রাজা প্রথম মুসা কেইটার দিকে একটু দৃষ্টি দিলে কেমন হয়?

রাজা মুসা চতুর্দশ শতাব্দীতে মালির শাসক ছিলেন। তাকে ডাকা হতো মাসান মুসা নামে। যার অর্থ ‘রাজাধিরাজ’। তিনি এত পরিমাণ সম্পদ সঞ্চয় করেছিলেন যে, অনেক বিশ্লেষণেই তাকে ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৩১২ সালে যখন মানসা মুসা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেন, ইউরোপের অধিকাংশ জায়গায় তখন চলছে দুর্ভিক্ষ ও গৃহযুদ্ধ‌। কিন্তু বহু আফ্রিকান ও ইসলাম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে বইছিলো সমৃদ্ধির জোয়ার। উন্নয়নের সেই স্রোতধারা নিজের দেশ মালিতেও নিয়ে আসতে মুসা রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ঐতিহাসিক টিমবাক্তু শহরের পরিকল্পিত পরিবর্তন হয়েছিল তার হাত ধরেই। সুবিশাল গাও শহরে তিনি আধিপত্য বিস্তার করেন। বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলের মাধ্যমে তিনি ভূমধ্যসাগর ও পশ্চিম আফ্রিকান উপকূলের মধ্যকার বাণিজ্য বিনিময়ের নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি। ফলে মালি ভূখন্ডের আয়তন বেড়ে বিশাল আকার ধারণ করে।

1.ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী...

তখনকার মালি সাম্রাজ্যের এলাকাগুলো ছিল প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল স্বর্ণ ও খনিজ লবণ। ১৩২৪ সালে সর্বপ্রথম বিশ্ববাসী মানসা মুসার সম্পদের বিপুলতা অবলোকন করে, যখন তিনি মক্কায় হজ যাত্রা করতে যান। তার হজ কাফেলা এত বড় ছিল যে এর শুরু থেকে তাকালে খালি চোখে শেষ মাথা দেখা যেত না। যদিও এ যাত্রার কথা অনেকটাই লোকমুখে শোনা এবং বিতর্কিত কিছু লিখিত পাণ্ডুলিপিতে পাওয়া যায়। তাই মানসা মুসার বৃহৎ হজ্ব কাফেলার সূক্ষ্ম বিবরণ দেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সেটি যে কোনো সম্রাটের সবচেয়ে বড় হজযাত্রা ছিল, এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, মুসার সেই কাফেলায় অন্তত ১০ হাজার সেনা এবং দাসের উপস্থিতি ছিল।

2.ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী...

প্রায় পাঁচশত নকিব ছিল স্বর্ণভর্তি হাড়ি বহনের জন্য। এছাড়াও ছিল অসংখ্য উট ও ঘোড়া যেগুলো নেয়া হয়েছিল বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের বার বহনের জন্য। যাত্রা পথে মুসার কাফেলা যখনই যে শহরে থামতো, তিনি সেখানকার দরিদ্রদের সেসব স্বর্ণ উপহার দিতেন এবং বিভিন্ন এলাকার ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র কিনতেন স্বর্ণের বিনিময়ে, বিশাল বিশাল মসজিদ নির্মাণ করতেন ওই সব শহরে। তার এসব দান-খয়রাত সেসব দেশের অর্থনীতির ভীতকে নাড়িয়ে দিত। মানসা মুসার এই যাত্রা শেষ হতে লেগেছিল দীর্ঘ এক বছর। যখন তিনি কাফেলা নিয়ে টিমবাক্তুতে ফিরলেন, ইতোমধ্যেই তার অগণিত, অসীম সম্পদের গল্প আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যের সীমানা ছাড়িয়ে ভূমধ্যসাগরের তীরে ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়ল।

মালি ও তার সম্রাটের গল্প বলতে গেলে কিংবদন্তি পর্যায়ে চলে যায়। তেরোশো পঁচাত্তর সালের ক্যাটালান আটলাসেও তাদের নাম জায়গা করে নেয়। উল্লেখ্য, ক্যাটালান এটলাস ছিলেন মধ্যযুগের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মানচিত্র। সেখানে মানসা মুসার এমন একটি ছবি ছাপা হয় যেখানে তিনি এক হাতে রাজদণ্ড অন্য হাতে স্বর্ণের পিণ্ড নিয়ে সিংহাসনে বসে আছেন। তবে রাজা মুসা শুধু জাগতিক সম্পদের মোহে আচ্ছন্ন ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম।

3.ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী...

মানসা মুসার সময়কালের আগ থেকেই টিমবাক্তু ছিল ইসলাম ধর্ম চর্চার প্রাণকেন্দ্র। হজ্ব থেকে এসে তিনি এক আন্দালুসিয়ান স্থপতির সহায়তা নিয়ে টিমবাক্তুর বিখ্যাত জিংগুয়েরেবার মসজিদ নির্মাণের পাশাপাশি একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এটি পরবর্তীতে হয়ে ওঠে সারা বিশ্বের মুসলিমদের জ্ঞান চর্চার প্রাণকেন্দ্র। রাজা মুসার অধীনে মালিতে ব্যাপকহারে নগরায়ন ঘটে। প্রায় শতাধিক জনবহুল নগরী গড়ে ওঠে, মুসা সেখানে পর্যাপ্ত স্কুল ও হাসপাতালের ব্যবস্থা করেন। তার অবদান আজও ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)