হৃদয়ে আমার তামিম ইকবাল

বাংলাদেশ অলআউট ২২৯…লিখতে লিখতে থেমে যেত হলো। কী ব্যাপার, মুশফিক কেন মুস্তাফিজের সাথে বেরিয়ে এলেন না? কারণটা বোঝা গেল। অবাক বিস্ময়ে সবাই আবিষ্কার করল, তামিম এক হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে নেমে পড়ছেন মাঠে!

তামিমের এটা দেখে সাজিবুল নামের এক ভাষ্যকার মন্তব্য করলেন এইভাবে, ‘ও মাই গড তামিম! আমি তোমাকে ভালোবাসি! তার এই অবিশ্বাস্য সাহস দেখে সত্যিই আমার চোখ দিয়ে অশ্রু চলে এলো’। তোমার এই দেশ প্রেম দেখে আজ সারা বিশ্ব মুগ্ধ ।’ হৃদয়ে থাকবে তুমি চিরকাল ।তোমাকে জানায় হাজার সালাম ।তুমিই বাংলাদের গর্ব তামিম ইকবাল।’

ক্রিকইনফোর লাইভ ধারাভাষ্যে লেখা হলো, ‘অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য। তামিম ইকবাল এগার নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নেমে হাঁটছেন। তাও মাত্র এক হাত দিয়ে? অসাধারণ দৃশ্য। তামিম ইকবালের পক্ষ থেকে অবিস্মরনীয় এক সাহসীকতার কাজ।’

1.যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবেই তুমি বাংলাদেশ!

শুধু ভাষ্যকার নয় দেশের প্রতি তামিমের এই দায়িত্ববোধ দেখে টেলিভিশনের সামনে থাকা অসংখ্য দর্শকদের চোখ দিয়ে অশ্রু বের হয়েছে শনিবার। তাই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এই জয় তামিমের ।

ম্যাচের শুরুতেই কব্জিতে আঘাত। পরে হাসপাতালে করা হলো স্ক্যান। যেখানে দেখা গেল হাতের কব্জিতে চিড় ধরা পড়েছে। জানা গেছে এশিয়া কাপেই আর খেলতে পারবেন না তিনি। পরে টিভিতেও দেখা গেল হাতে ব্যান্ডেজ এবং গলায় সেই হাত ঝুলিয়ে রেখেছেন তিনি।

2.যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবেই তুমি বাংলাদেশ!

এক হাতে ব্যাট করছেন তামিম

এমন পরিস্থিতিতে তামিমের মাঠে নামার কথা চিন্তা করাটাই যেন বোকামি। কিন্তু দেশপ্রেম কাকে বলে, তার চরম পরাকাষ্ট্রা প্রদর্শন করলেন তামিম ইকবাল। একে একে যখন একপাশে উইকেটের পর উইকেট পড়ছে, তখন অন্য পাশে অপরাজিত থেকে যান সেঞ্চুরি করা মুশফিকুর রহীম। এ পরিস্থিতিতে ম্যাচের ৪৭তম ওভারের ৫ম বলে আউট হয়ে যান মোস্তাফিজুর রহমান। বল তখনও বাকি ১৯টি। দলীয় রান ২২৯। এ পরিস্থিতিতে অপরাজিত থাকা তামিম ইকবাল মাঠে নামলে মুশফিকের সঙ্গে জুটি বাঁধতে পারেন।

কিন্তু তামিম তো আহত। ভাঙা হাত নিয়ে কীভাবে মাঠে নামবেন তিনি? সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাঠে নামলেন তামিম। ভাঙা হাতে। কব্জিতে ব্যান্ডেজ বাঁধা। মাঠে নেমে সুরাঙ্গা লাকমালকে এক হাত দিয়ে মোকাবেলা করেন তামিম। বডি লাইনে আসা বলটি এক হাত দিয়ে ধরা ব্যাটে মোকাবেলা করলেন। এরপর বাংলাদেশ দল আরো ১৫ বল মোকাবেলা করেছে শ্রীলঙ্কাকে। প্রতিটি বলই খেলেছেন মুশফিক। তামিমের সঙ্গে সিঙ্গেল ছিল ২টি। অর্থ্যাৎ, দুই ওভারের শেষ দুই বলে। মুশফিক গেছেন স্ট্রাইকে।

মুশফিককে সঙ্গ দিয়ে তামিম বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে যোগ করেছেন আরো ৩২টি রান। অবিশ্বাস্য! সবগুলো রানই হয়তো নিয়েছেন মুশফিক। কিন্তু তামিমের অসাধারণ সাহসিকতা না থাকলে তো এটি মোটেও সম্ভব হতো না। শেষ মুহূর্তে মুশফিক হয়তো চড়াও হয়ে খেলেছেন। তামিমের সাহসের নিজের মধ্যে আরো বেশি সাহস সঞ্চার করার চেষ্টা করেছেন।

https://www.youtube.com/watch?v=_f951TGlyb0

সেই সাহসে বলিয়ান হয়ে লঙ্কান বোলারদের একের পর এক পাঠিয়েছেন মাঠের বাইরে। মুশফিক চেষ্টা করেছেন তামিমের এই আত্ম নিবেদনের মূল্য রাখতে। তিনি পেরেছেন। সফল হয়েছেন। নিজের স্কোর হয়তো ব্যাক্তিগত ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। কিন্তু তামিমের সাহসিকতাই এখানে সবার কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছে।

টুইটারে ঝড় বয়ে গেছে তামিমের এভাবে মাঠে নামা দেখে। দ্বীপ নামে একজন লিখেছেন, ‘আমি আত্মনিবেদনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ দেখতে পাচ্ছি এই মুহূর্তে।’ নোমান নামে একজন লিখলেন, ‘ও ভাই! এই লোককে স্যালুট জানাতে হয়। তামিম ইকবাল ইউ আর গ্রেট।’

আবু তালহা মীর নামে একজন লিখেছেন, ‘ব্যাট হাতে তামিম মাঠে হাঁটছেন। আমি স্বপ্ন দেখছি না তো!’ আতাউর রহমান বলেন, ‘কেউ যদি বলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে কোনো দৃঢ় সংকল্প নেই, সে যেন তামিম ইকবালকে দেখে।’

অ্যাডলি নামে একজন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ দলের স্কোর যা হয় এখন, সবগুলোই তামিমের নামে লিখে দেয়া উচিৎ।’ রুশদি নামে একজন লিখেছেন, ‘এটাই হলো সাহসী আত্মা। এটাই সাহস। এটাই হচ্ছে সঠিক দেশপ্রেম। হ্যাটস অব তামিম।’

কব্জির ইনজুরির কারণে মাঠ থেকে সোজা হাসপাতালে। এবার সেখান থেকে খবর এলো, এশিয়া কাপই আর খেলতে পারছেনা বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান, ওপেনার তামিম ইকবাল। তার কব্জিতে ছিড় ধরা পড়েছে। যে কারণে, তার এশিয়া কাপের বাকি ম্যাচগুলো খেলা আর সম্ভব হবে না।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)