শুভ জন্মদিন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি
আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের স্ট্রাইকার লিওনেল আন্দ্রেস মেসির ৩১তম জন্মদিন আজ।
আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে ১৯৮৭ সালের এই দিনটিতে জন্মগ্রহণ করেন বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবল তারকা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ইতোমধ্যেই ভক্তরা শুভ জন্মদিন বলে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এ ফুটবল কিংবদন্তিকে। কিন্তু সত্যিই কি আজ শুভ দিন কাটাচ্ছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক?
নিজের জন্মদিন হলেও দিনটা ভালো কাটছে না লিওনেল মেসির। কেননা রাশিয়া বিশ্বকাপে দুটো ম্যাচ শেষ হলেও দ্বিতীয় রাউন্ড এখনো নিশ্চিত হয়নি দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। তবে তাদের সম্ভবনা এখনো রয়েছে। তাই মেসি ভক্তরা তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করার অনুপ্রেরণাও জোগাচ্ছেন।
ছোট বেলাতেই ফুটবলের প্রেমে পড়া মেসির শৈশব কেটেছে দুই অগ্রজ এবং কাজিনদের সাথে বল পায়ে উঠোন মাত করে। মাত্র চার বছর বয়সেই স্থানীয় ক্লাব গ্রান্ডোলিতে যোগ দেন লিও। তার মাত্র দু’বছর পরেই গায়ে চাপান প্রিয় ক্লাব নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের। ওল্ড বয়েজের জার্সি গায়ে কিশোর মেসি করেছিলেন প্রায় পাঁচশ গোল। গোলের সংখ্যার মতই দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছিল ছোট্ট লিও। তবে ভিলেন হয়ে কোনো ব্যক্তি নয় বরং এলো এক ব্যাধি। হরমোনগত যে ব্যাধির আরোগ্যের জন্য চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য ছিল না লিওর বা কিংবা ক্লাবের। লিওর ওপর নজর রাখা বিশ্বখ্যাত আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভার প্লেটও পিছিয়ে গেল চিকিৎসার ব্যায়ের ভয়ে। এটাকে অদৃষ্টের ইচ্ছা বললে বোধয় ভুল হবে না। নানা নাটকীয়তার পর লিওকে টেনে নেয় কাতালান পাওয়ার হাউস বার্সেলোনা।
চৌদ্দ বছর বয়সে হরমোন চিকিৎসা শেষে লিও অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠেন বার্সার সর্বকালের সেরা যুব দলের, যেটি পরিচিতি পায় ‘বেবি ড্রিম টিম’ নামে। যুব দলের হয়ে নিজের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মৌসুমে ৩০ ম্যাচে ৩৬ গোল দিয়ে জানান দিয়েছিলেন নিজের আগমন বার্তার। সে সময় লিও নজর কেড়েছিলেন ইংলিশ জায়ান্ট আর্সেনালের। কিন্তু বন্ধু ফেব্রেগাস বা পিকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইংলিশ ফুটবলের স্বাদ নেয়ার বদলে প্রাণের ক্লাব বার্সার সেবা করার বিষয়ে মনঃস্থির করেন লিও।
আর্জেন্টিনা যুব দলের হয়ে জিতেছেন ফিফা ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপ। যেটিতে সেরা খেলোয়াড় এবং সর্বোচ্চ গোল স্কোরার, দুটি পুরষ্কারই বগলদাবা করেছিলেন তিনি। জিতেছেন ২০০৮ সালের অলিম্পিকের স্বর্ণপদকও। ২০০৫ সালে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকও হয়ে যায় তার। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে মাঠে নেমে হয়ে যান সর্বকনিষ্ঠ আর্জেন্টাইন হিসাবে বিশ্বকাপে মাঠে নামা, এবং গোল করা খেলোয়াড়।
ক্লাবের হয়ে দিনকে দিন নিজেকে যেমন অস্পর্শনীয় এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, জাতীয় দলের হয়ে গল্পটা হয়েছে ঠিক বিপরীত। ২০০৬ এ কোচের অদ্ভুৎ খেয়ালের বলি হওয়া দিয়ে শুরু, জাতীয় দলের হয়ে সবটুকু নিংড়ে দিলেও দিন শেষে গল্পটা শুধুই হতাশার।
২০১০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ফুটবল ঈশ্বর ডিয়াগো ম্যারাডোনার সাথেও জুটি বেধে পারলেন না। ২০১৪ তে নিজের সামর্থের সর্বোচ্চ দিয়ে দল ফাইনালে তুলেও ছোঁয়া হলো না স্বপ্নের ট্রফিটা। ২০১১ থেকে জাতীয় দলের বাহুবন্ধনী বাহুতে বেঁধে মাঠে নামা মেসি জাতীয় দলের হয়েও সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছেন। জিতেছেন ‘১৪ বিশ্বকাপের সেরার পুরষ্কারও। ব্যক্তিগত এ অর্জন কোনো সান্ত্বনা বয়ে আনতে পারেনি, বরং বাড়িয়েছে বেদনা। টানা তিনটি ফাইনালে হারের ক্ষত নিয়ে যিনি বিদায়ই বলে দিয়েছিলেন জাতীয় দলকে।
সে বিদায় স্থায়ী হয়নি। বিশ্বজোড়া সমর্থকদের আকুল আবেদনে আবারো ফিরেছেন আকাশি জার্সি গায়ে। খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে বিশ্বকাপে নিয়ে এসেছেন দলকে। কিন্তু আবারো সেই হৃদয় ভাঙ্গার গল্পের যেন নতুন চিত্রনাট্য লেখা হচ্ছে। জন্মদিনের দুদিন পরেই বাঁচা মরার সে ম্যাচ। মেসি কি পারবেন জন্মদিনে নিজেকে সেরা উপহারটা দিতে? জাতীয় দলের জার্সি গায়ে বিধ্বস্ত মেসি যেন ফুটবলেরই মস্ত বড় এক ধাঁধাঁ। ক্লাব পর্যায়ের একের পর এক রেকর্ড যার পায়ের কাছে এসে লুটিয়ে পরে জাতীয় দলের হয়ে তিনি কেন ফিরেন শূন্য হাতে? জওয়াবটা দিতে হবে মেসিকেই এবং সেটি তা পা জোড়া ব্যবহার করেই।