তালায় জনপ্রতিনিধি-প্রশাসন মুখোমুখি: ফায়দা লুটছে তৃতীয় পক্ষ

জলিল আহমেদ তালা :

অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে তালায় উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা মুখোমুখি অবস্থানে। যে কোন মুহুত্বে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্খায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। একদিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সকল ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় সংসদ সদস্যকে সাথে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ও সভা সমাবেশের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যাহার দাবী করছেন । অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরকারি অর্থ লুটপাটে সহযোগিতা না করায় তার প্রত্যাহার দাবী করা হচ্ছে বলে প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। মাঝে তৃতীয় একটি গ্রুপ যেটি হাইব্রীড শ্রেণি বলে খ্যাতি পেয়েছেন তারা উভয়পক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ক্ষোভের সাথে বলেন, আজ তালায় যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহি:প্রকাশ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার একজন সরকারি চাকুরী জীবী নিয়মতান্ত্রিকভাবে তিনি এক উপজেলা থেকে অন্যত্র বদলি হবেন এটিই সাধারণ ঘটনা। কিন্ত আন্দোলনকারীরা নির্বাহী কর্মকর্তার পাশাপাশি যদি তালায় আজকের এই পরিস্থিতি যারা সৃষ্টি করেছেন তাদের মুখোশ উন্মোচন করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাতে তালার সাধারণ মানুষ যেমন স্বস্তি পেতো তেমনি কোন সরকারি কর্মকর্তা ভবিষ্যতে নিজেকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে হয়তো জড়াতেন না। কিন্ত সরিষার মধ্যে যখন ভূত তখন সে ভূত তাড়াবে কে?
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ফরিদ হোসেন ২০১৬ সালে তালায় যোগদান করার পর দু’একটি বিষয়ে কিছু মত পার্থক্য ছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক মাত্রাই চলছিল। কিন্ত এরই মধ্যে একটি সুবিধাবাদী শ্রেণি তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব সৃষ্টি করে প্রশাসনের নাম ব্যাবহার করে বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে তালার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের জীবন বিষিয়ে তোলে। জামাত বিএনপি নেতাদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল থেকে শুরু করে ৭৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি নিয়োগের নামে হাতিয়ে নেয়া হয় কোটি টাকা, দরিদ্র মানুষের গৃহ নির্মাণ কর্মসূচীর আওতায় ঘর বরাদ্দ দেয়ার নামে আদায় করা হয় আরো কয়েক কোটি টাকা। সার্বক্ষণিক থানায় অবস্থানের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসন কে জিম্মি করে শাসক দল ও শরীক দলের নেতা-কর্মীদের নামে দায়ের করা হয় একাধিক মিথ্যা মামলা। সরকারের শরীক রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে হামলা,রাজনৈতিক নেতাদের মারধোর সবই চলে প্রশাসনের সহযোগিতায়। কিন্ত এতো সব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোন শক্তিশালী প্রতিবাদ গড়ে না ওঠায় স্থানীয় সাংবাদিক , ব্যবসায়ী,রাজনৈতিক নেতাসহ সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে নিজেদের গুটিয়ে ফেলে নীরবতা পালনে বাধ্য হয় । কিন্ত একের পর এক অনৈতিক কর্মকাণ্ড হজম ও ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে দমন করা সম্ভব হওয়ায়। ওই হাইব্রীড চক্রটি আরো উৎসাহিত হয়ে জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া নেতাদের নেতৃত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান গুলো দখল করার কার্যক্রম শুরু করার মধ্যেই বিস্ফোরণ ঘটা শুরু করে। আর উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে চলা রেষারেষি যখন প্রকাশ্য বিরোধে রূপ নিয়েছে এরই মধ্যে তারা উভয় পক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় সহ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ফলে তালার রাজনৈতিক সচেতন মানুষ মনে করেন, আজকের এই জটিল পরিস্থিতি থেকে মুক্তি লাভে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যাহারের দাবী কোন সুষ্ঠু সমাধান নয়, শস্যের মধ্যে থাকা ভূত অপসারণ করার মাধ্যমেই তালার স্বাভাবিক পরিবেশ ও শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)