তবুও আসছে ড্রিমলাইনার

ডেস্ক রিপোর্ট :

উড়োজাহাজে বসে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে আরেকটি ডিজিটাল স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশায় বাংলাদেশ। পারবেন দাফতরিক সব কাজ সারতে, চাইলে দূরালাপনের সুযোগও থাকবে প্রিয়জনের সঙ্গে। ৪৩ হাজার মিটার উচ্চতায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যাত্রীরা সিটে বসে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। যোগাযোগ থাকবে সারা পৃথিবীর সঙ্গে।

আকাশপথে এমন স্বপ্নবিলাস সার্থক করতে আধুনিক মডেলের নতুন উড়োজাহাজ নিয়ে আসছে বাংলাদেশ বিমান। এজন্য বোয়িং ৭৮৭-৮ মডেলের উড়োজাহাজকে বেছে নিয়েছে জাতীয় পতাকাবাহী এ বিমান সংস্থা।

৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ২০০৯ সাল থেকে আকাশ জয় করলেও বাংলাদেশে আসতে এর সময় লাগছে বাড়তি আরও নয় বছর। আসছে নভেম্বরে বিমানের বহরে যুক্ত হচ্ছে স্বপ্নের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির দুটি ড্রিমলাইনার। আরও দুটি আসবে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে।

বিমান কর্তৃপক্ষের দাবি, চারটি ড্রিমলাইনারে থাকবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট দিয়ে উড়ে যেতে পারবে স্টেট অব দ্য আর্ট প্রযুক্তির ড্রিমলাইনার। আকাশের এত উঁচু দিয়ে উড়বে, কিন্তু চেনা জগৎটা থাকবে নাগালেই। বরং গোটা বিশ্বই যেন মুঠোবন্দি থাকবে।

যাত্রীদের জন্য বিশেষ একধরনের ফোনসেটের ব্যবস্থা থাকবে এ উড়োজাহাজে। এতে কথা বলার পাশাপাশি সিনেমা দেখারও সুযোগ আছে। ড্রিমলাইনারে থাকছে বিশ্বমানের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম (আইএফই)। এর মাধ্যমে ক্ল্যাসিক থেকে ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র দেখা যাবে। বিভিন্ন ধরনের সুর-সংগীত শোনা তো যাবেই। ভিডিও গেমসও আছে। পাশাপাশি বিশ্বসেরা নয়টি টিভি চ্যানেলের রিয়াল টাইম লাইভ দেখা যাবে।

উড়োজাহাজগুলো পরিচালনা করবেন দেশেরই দক্ষ ও পরীক্ষিত পাইলটরা। ইতোমধ্যে ১২ জন পাইলটকে প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়েছে। আরও অনেককে পাঠানো হবে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এ উড়োজাহাজ জাতীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমান সংস্থায় সংযুক্ত হলেও সংস্থাটির নেই কোনো সুষ্ঠু ও সুন্দর বাণিজ্যিক পরিকল্পনা।

বিমান কর্তৃপক্ষের দাবি, বিমান বহরে ড্রিমলাইনারের সংযোজন নিয়ে আসবে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন ও সাফল্য। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানের গ্রাহকসেবা ও মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগকে ঢেলে সাজানো না গেলে ড্রিমলাইনার থেকে সুফল পাওয়া যাবে না। কারণ, বিগত কয়েক বছর দুর্বল মার্কেটিং বিভাগের জন্য টিকিট বিক্রি অনেকাংশে কমে গেছে। এ বিভাগের দুর্বল ও বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) ফারুক খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কোনো বিষয়ে কথা বললে সেটা আমলে নিতে হয়। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিগত কয়েকটি মিটিংয়ে এ নিয়ে এজেন্ডা ভিত্তিক আলোচনা হয়েছে। আমরা সুপারিশও করেছি। বিমান পরিচালনাপর্ষদ কী পদক্ষেপ নেয় এখন তা দেখার বিষয়।’

dreemliner

এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এম এ মোমেন  বলেন, ‘আমি অনেকদিন বিমানে নেই। এখনকার মার্কেটিং পলিসি আমার ভালোভাবে জানা নেই। তবে এটা সত্যি যে, যে কোনো এয়ারলাইন্সকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে একটি যুগোপযোগী মার্কেটিং পলিসি থাকা চাই। বিমানের ক্ষেত্রে এর অনুমোদন কিংবা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি নির্ভর করবে পরিচালনাপর্ষদের ওপর।’

গত ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে স্বাক্ষরের জন্য ‘এয়ার সার্ভিসেস এগ্রিমেন্ট বিটুইন দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব ইউনাইটেড আরব আমিরাত’ এর খসড়া চুক্তি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়। পরে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিমানের যাত্রীরা যখন বাংলাদেশ বিমানের টিকিট কাটতে যায় তখন বলা হয় টিকিট নেই। টিকিটের ক্রাইসিস দেখানো হলেও অনেক সময় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গন্তব্যস্থলে রওনা হয় বিমান। অথচ বেসরকারি বিমানে যাত্রী ভরা থাকে, এটা কেন হয়?’ যারা টিকিট বিক্রি করে তারা অন্য এয়ারলাইন্স থেকে সুবিধা পায় কিনা- এমন প্রশ্নও রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

সে সময় বিদায়ী বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন উপস্থিত থাকলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

রাশেদ খান মেননের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘টিকিট বিক্রির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।’

সাত মাস পার হলেও প্রধানমন্ত্রীর ওই প্রশ্নের জবাব মেলেনি। অজ্ঞাত কারণে বিমানের টিকিট বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের দায়িত্বহীন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

বাংলাদেশ বিমানে নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানে টিকিট করতে গেলে অনেক সময় বলা হয়, ‘টিকিট শেষ’। পরে দেখা যায়, বাংলাদেশ বিমানের অনেক আসনই খালি। যাত্রীদের অভিযোগ, বিমানের টিকিট বিক্রেতারা অন্য এয়ারলাইন্স থেকে অবৈধ অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকেন। এ কারণে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে আসন থাকার পরও তারা বলেন টিকিট নেই।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল  বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার পর বিমানের সমস্যাগুলো শনাক্তের চেষ্টা করেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিচক্ষণ বলেই বিমানের আসল সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।’

‘বিমান রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যারা অন্য এয়ারলাইন্সের স্বার্থ দেখেন তাদেরও শনাক্ত করা হবে। বিমানের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা হবে’- বলেও জানান তিনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)