প্রতিবন্ধী স্কুলের পরিচালক আজহারুলের বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকা দুর্নীতিসহ নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জের নলতায় ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এম.জে.এফ নামের বিশেষ প্রতিবন্ধী স্কুল। এম.জে.এফ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আজহারুল ইসলাম স্কুলটি পরিচালনা করে আসছেন। পরবর্তীতে স্কুলটি ভাড়াশিমলায় প্রধান সড়কের পাশে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে প্রতিবন্ধী স্কুলটি নানা দুর্নীতিতে জর্জরিত। এসব দুর্নীতির উপর ভিত্তি করে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্কুল প্রাঙ্গণে স্কুলের সভাপতি কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মাঈন উদ্দীন হাসানের সভাপতিত্বে এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষক কর্মচারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে উক্ত সভায় এমজেএফ বিশেষ প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও এমজেএফ ফাউন্ডেশনের পরিচালক আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের আলোচনা হয়। প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধকোটি টাকা লুটপাট, স্কুলের পরিবর্তে প্রতারণা করে নিজের এনজিও’র নামে জমি কেনা, শিক্ষিকাদের সাথে অশ্লীল আচরণ ও অনৈতিক প্রস্তাব প্রদান, শিক্ষক-কর্মচারী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণের প্রতিকার দাবি করেন এবং ওই দুর্নীতিবাজের কবল থেকে স্কুলটি রক্ষার দাবি করে লিখিত আবেদন জানান। প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের নাম করে স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের নিকট থেকে জনপ্রতি ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে আত্মসাতসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করেন, প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক জালালুর রহমান, সহকারী শিক্ষক আশিক ইকবাল, হাবিবুল্লাহ বাশার ও অজিফা পারভীন। তারা দীর্ঘদিন বিনাবেতনে শিক্ষাদান ও পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, স্কুলের ১৫ জন শিক্ষকের প্রত্যেকের নিকট থেকে নগদ প্রায় ৩ লক্ষ টাকা এবং স্বাক্ষরযুক্ত ফাকা নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও ব্যাংক চেক গ্রহণ, বিদ্যালয়ের নামে জমি না কিনে নিজের এনজিও’র নামে জমি ক্রয়, বিদ্যালয়ের ভবন শিক্ষার্থীদের কাজে ব্যবহার না করে পানির ব্যবসা ও পোল্ট্রি ফার্মের কাজে ব্যবহারসহ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দাতাদের নিকট থেকে প্রাপ্য অর্থ বিদ্যালয় কিংবা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যয় না করে আজহারুল ইসলাম আত্মসাৎ করেছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ করার পাশাপাশি মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর হুমকি দেন তিনি। এসময় সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি রক্ষার দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন দাতা সদস্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের চিকিৎসক ডা. এসএম আব্দুল ওহাব, প্রেস ক্লাবের সভাপতি শেখ সাইফুল বারী সফু, রিপোর্টস ক্লাবের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক নিয়াজ কওছার তুহিন, মথুরেশপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, নাজিমগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি শেখ ফিরোজ কবির কাজল, নলতা সদর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হক, সাংবাদিক সোহরাব হোসেন সবুজ, হাফিজুর রহমান, তরিকুল ইসলাম লাভলু, প্রতিবন্ধী স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। সাংবাদিক সুকুমার দাশ বাচ্চুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, আশেক মেহেদী, দন্ত চিকিৎসক বাবুল আক্তার, উপজেলা যুবলীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে অডিট করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে প্রধান করে দু’সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হবে এবং উক্ত কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য সময় দেয়া হবে বলে নিশ্চিত করে স্কুলের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মাঈনউদ্দিন হাসান বলেন, এনজিও’র কোনো স্থান বিদ্যালয়ের মধ্যে থাকতে পারে না। প্রতিবন্ধীদের কল্যাণের জন্য বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি সরকারীকরণের প্রক্রিয়া চলছে। ফাউন্ডেশনের পরিচালক আজহারুল ইসলাম এই বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন ভাবেই ছাড় দেয়া হবে না বলে তিনি জানান।

অভিযুক্ত এম.জে.এফ এর পরিচালক আজহারুল ইসলামের নিকট এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি এবিষয় সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে রাজি হননি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)