খালেদা জিয়ার হঠাৎ অসুস্থতায় উদ্বিগ্ন ২০ দল

ডেস্ক রিপোর্ট :
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে প্রায় দুই মাস কারাগারে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এমনকি আগামী মে মাসের আগে তাঁর জামিনের কোনো সম্ভাবনা নেই। হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দিলেও তা আগামী ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে সহসা মুক্তি মিলছে না বিএনপি নেত্রীর।
তবে হঠাৎ করে বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের এই প্রধানমন্ত্রী অসুস্থতার খবর নতুন করে আবার আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিএনপি ও ২০ দলসহ গোটা দেশের মানুষের মুখে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সংবাদ। তবে তিনি কী রোগে ভুগছেন, সে বিষয়ে এখনো পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি।
গত ২৮ মার্চ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করার দিন ঠিক ছিল। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তাঁকে আদালতে হাজির করা যাবে না। এরপরই বিষয়টি সবার আলোচনায় আসে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে গত ২৯ মার্চ খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের সাক্ষাৎ স্থগিত হওয়ার পর। এরপরই বিএনপির নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সংবাদে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাঁরা জোর দাবি জানান, দলীয় চেয়ারপারসনকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। যাতে তিনি নিজের পছন্দমতো ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার প্যারোলে নয়, নিঃশর্ত মুক্তি চাই। এরপর দল ও তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন কোথায় কোন ডাক্তারের চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সংবাদে উদ্বিগ্ন। কিন্তু সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষ এখনো আমাদের নিশ্চিতভাবে কিছু জানায়নি চেয়ারপারসন কী সমস্যায় ভুগছেন। ফলে আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরো বাড়ছে।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘সরকার খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে কোনো কার্পণ্য করবে না। দরকার হলে ডাক্তারের পরামর্শে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সংবাদে উদ্বিগ্ন। তিনি এমনিতেই দীর্ঘদিন নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। কিন্তু কারাগারে নেওয়ার পর থেকে তাঁকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে দেওয়া হয়নি। আমরা দলের পক্ষ থেকে বারবার তাঁর চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত ডাক্তারদের চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানালেও সরকার তা দেয়নি। একাধিকবার ডাক্তাররা গিয়ে ফেরত এসেছেন কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকারের ভূমিকায় জনগণের মনে শঙ্কা জেগেছে। সরকার বলছে, উনি অসুস্থ; কিন্তু ওনার অসুস্থতা কী, তা নিয়ে দেশের জনগণের মনে শঙ্কা জেগেছে। সবাই তাঁর স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলছে না।’
‘সরকারের একজন মন্ত্রী বললেন, দরকার হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। অসুস্থতাটা কী, সেটাই জানলাম না; এর মধ্যে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা চলে এলো। এসবের প্রক্রিয়ার কারণেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সরকারের ভূমিকা আমদের মনে শঙ্কা জাগিয়েছে,’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য।
২০ দলের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে সরকারের আচরণ আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এরই মাঝে সরকারি দল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলছেন, চিকিৎসার জন্য দরকারে বিদেশ পাঠানোর কথা। এটি আমাদের উদ্বিগ্নতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। আর অবিলম্বে তাঁর অসুস্থতার বিষয়ে জনগণকে প্রকাশ্যে জানাতে হবে।’
মোস্তাফিজুর রহমান ইরান আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ জানে, খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখন তাঁর অসুস্থতার বিষয়েও সরকার কোনো তথ্য দিচ্ছে না। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে হবে এবং তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। যাতে তিনি নিজের পছন্দমতো সুচিকিৎসা নিতে পারেন।’
বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, ‘খালেদা জিয়া শুধু বিএনপি বা ২০ দলের নেত্রী নন, তিনি গোটা দেশের মানুষের নেত্রী। প্রায় দুই মাস তিনি কারাগারে আছেন। এখন হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ, কিন্তু তাঁর অসুস্থতার বিষয়ে এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলছে না সরকার। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে তাঁর দল বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও দেশের মানুষ জানতে চায়। তাঁর বিষয়ে সবাইকে জানানো এটা সরকারের দায়িত্ব।’
২০ দলের এ নেতা বলেন, ‘কেউ জানল না খালেদা জিয়ার অসুস্থতা কী, অথচ এরই মধ্যে সরকারের একজন শীর্ষকর্তা বলছেন, দরকার হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো হবে। এটা কেমন কথা? আগে তো জানতে হবে, খালেদা জিয়ার অসুস্থতাটা কী? কেউ কিছু জানবে না, কিন্তু চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রসঙ্গ চলে এলো।’
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)