মেয়ের আত্মহননে ফতোয়াবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এক অসহায় পিতার সংবাদ সম্মেলন সাতক্ষীরা

নিজস্ব প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরার বৈকারি ইউনিয়নের মৃগিডাঙ্গা গ্রামে ফতোয়া দিয়ে মেয়েকে আত্মহননে বাধ্যকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন অসহায় পিতা। শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আব্দুল মোতালেব মিলনয়াতনে এক সংবাদ সম্মেলনে সদর উপজেলার কাথন্ডা গ্রামের মৃত. সাম আলী সরদারের ছেলে মোঃ মফিজুল ইসলাম এই দাবি জানান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রায় ৭/৮ বছর আগে আমার মেয়ে মোছাঃ রোকেয়া খাতুনের সাথে মৃগিডাঙ্গা গ্রামের আবু জাফরের ছেলে সাদ্দাম হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তারা সুখে শান্তিতেই বসবাস করে আসছিল। তাদের সামিয়া (৬) নামের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। কিন্তু

সম্প্রতি সাদ্দামের ভগ্নিপতি কাথন্ডা গ্রামের শহীদুল বিশ^াসের ছেলে ইস্রাফিলের কুনজর পড়ে আমার মেয়ের উপর। বিভিন্ন কৌশলে সে আমার মেয়েকে তার বশীভূত করার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। একপর্যায়ে গত ৬ জুন রবিবার আমার মেয়ে নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজির একপর্যায়ে জানতে পারি লম্পট ইস্রাফিল তার ভগ্নিপতি এরশাদের সহযোগিতায় আমার মেয়েকে ফাঁদে ফেলে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গেছে। ৯ জুন‘২১ মৃগিডাঙ্গা গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে এরশাদ আলী আমার মেয়েকে নিয়ে আসলেও তার শ্যালক ইস্রাফিলকে সাথে আনেনি। এসময় মেয়ের স্বামী সাদ্দাম এবং শ^শুর আবু জাফর পুনরায় রোকেয়াকে গ্রহণ করে শান্তিতে সংসার করার জন্য বলেন।

মফিজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, এঘটনার পর গত ১০ জুন ইস্রাফিলের পিতা শহীদুল বিশ্বাস ও তার জামাই এরশাদ আমার মেয়ের শশুর বাড়িতে গিয়ে শুধু মাত্র রোকেয়াকে দোষারোপ করে এবং তার স্বামী সাদ্দাম, শ^শুর জাফর, শ^াশুড়ি এবং মেয়েকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এছাড়া বিভিন্ন হুমকি ধামকি প্রদর্শন করে। অথচ লম্পট ইস্রাফিলকে কেউ দোষারোপ করেনি। পরে একই এলাকার সাইফুল ইসলাম, এরশাদ ও শহীদুল ইসলামের ইন্ধনে ফতোয়া দেয়া হয় যে, রোকেয়া তিন দিন পর বাড়ি ফিরেছে তাকে তাওবা পড়তে হবে এবং ৫১ বেত্রাঘাত করে পবিত্র করে তারপর ঘরে তুলতে হবে। তা না হলে আমরা ওই নষ্টা মেয়েকে এলাকাছাড়া করবো বলে তার স্বামী এবং শ^শুরকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি প্রদর্শন করে তারা। একপর্যায়ে ওই ফতোয়াবাজদের চাপে পড়ে আমার মেয়েকে ৫১ বার বেত্রাঘাত করতে এবং তাওবা পড়তে রাজি হয় তার শ^শুর বাড়ির লোকজন। সে অনুযায়ী মাও: আবুল খায়ের তাকে তাওবা পড়ান। কিন্তু সাইফুল ইসলাম বেত্রাঘাত করতে উদ্যাত হলে তার থেকে বেত কেড়ে নিয়ে এরশাদ আলী আমার মেয়েকে ৫১টি বেত্রাঘাত করে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১০ জুন রাতে বেত্রাঘাতের পরে এরশাদ, এরশাদের শ^শুর শহীদুল বিশ^াস ও মামা শ^াশুরের চাপে পড়ে ক্ষোভে অপমানে ১১ জুন সকালে নিজ ঘরের আড়ার সাথে গলায় দড়ি দিয়ে আমার মেয়ে রোকেয়া আত্মহত্যা করে। ফতোয়া দিয়ে উল্লেখিতরা আমার মেয়েকে আত্মহননে বাধ্য করেছে। তিনি আত্মহননে বাধ্যকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)