করোনাভাইরাসের মহামারির ‘গতি বাড়ছে’ জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুঁশিয়ারি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ার করেছে যে, করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট মহামারি আরো “বেগবান” হচ্ছে। এ পর্যন্ত তিন লাখের বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে।

কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়া প্রথম ব্যক্তি থেকে শুরু করে এই সংখ্যা এক লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ৬৭ দিন। পরের ১১ দিনে আরো এক লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়, আর পরের এক লাখে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র চার দিন।

কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইয়েসাস বলেন, “এখনো এর গতিপথ পাল্টে” দেয়া সম্ভব।

তিনি দেশগুলোকে কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষা এবং আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের সনাক্ত করার কৌশলের ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।

“আমরা কী পদক্ষেপ নেই সেটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়ে একটা ফুটবল ম্যাচ জেতা যায় না। প্রতিরক্ষার সাথে সাথে আক্রমণও করতে হবে।”

ফুটবল খেলোয়াড়দের নিয়ে “কিক আউট করোনাভাইরাস” বা “করোনাভাইরাসকে দূর কর” -এমন একটি কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফিফার প্রেসিডেন্ট গিয়ান্নি ইনফানটিনোর সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।

ড. টেড্রোস বলেন, মানুষকে ঘরের ভেতরে থাকতে বলা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো পদক্ষেপ ভাইরাসের সংক্রমণের গতি কমিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এগুলোকে প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা জিততে সাহায্য করবে না।”

“জয় পেতে হলে আমাদের আগ্রাসী আর সুনির্দিষ্ট কৌশল গ্রহণ করতে হবে-প্রতিটি সন্দেহভাজন ব্যক্তির পরীক্ষা করতে হবে, শনাক্ত হওয়া প্রত্যেক ব্যক্তিকে আইসোলেশন ও যত্নে রাখতে হবে, আর তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে।”

বিশ্বজুড়ে ব্যাপক হারে চিকিৎসা কর্মীদের আক্রান্ত হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ড. টেড্রোস। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামাদি বা পিপিই পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকার কারণেই সংক্রমণের শিকার হয়েছেন তারা।

“স্বাস্থ্যকর্মীরা তখনই তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারবেন যখন তারা নিজেরা নিরাপদে থাকতে পারবেন,” তিনি সতর্ক করে বলেন।

“আমরা যদি অন্য সবকিছুই ঠিক ঠাক করি কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত না করি, তাহলে অনেক মানুষ মারা যাবে কারণ যে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের সেবা দিতো তারাই অসুস্থ।”

তিনি বলেন, পিপিই-কে অগ্রাধিকার দেয়া এবং এর গুরুত্ব নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর অংশীদারদের সাথে মিলে কাজ করছে। একই সাথে বিশ্বজুড়ে এর সংকটের বিষয়টিও তুলে ধরা হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান “আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও সমন্বয়ের” আহ্বান জানান এবং বলেন যে, চলতি সপ্তাহে জি-২০ জোটভুক্ত নেতাদের তিনি আহ্বান জানাবেন তারা যাতে সুরক্ষা সরঞ্জামাদি উৎপাদন বাড়ায় এবং সেগুলো রপ্তানির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়। সেই সাথে এসব সরঞ্জামের বণ্টন যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী হয় সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইউরোপের লড়াই শক্তিশালী হয়েছে

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সোমবার রাতে ঘোষণা দেন যে, “সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া… মানুষকে ঘরের বাইরে বের হতে দেয়া হবে না।” এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা, প্রতিদিন এক ধরণের ব্যায়াম করা, যেকোন চিকিৎসা সেবার জন্য এবং ঘরে থেকে কাজ করা সম্ভব না হলে কাজে যাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষজন বের হতে পারবে।

সোমবার পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ৩৩৫ জন মারা গেছে।

বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ইতালিতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৬০২ জন। সব মিলিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬০৭৭ জনে।

কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের পর এই প্রথম এক দিনে কমসংখ্যক মানুষ মারা গেল। ধারণা করা হচ্ছে যে সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছিল তা কাজ করতে শুরু করেছে।

স্পেনে এক দিনে মারা গেছে ৪৬২ জন যা মিলিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২১৮২ জনে-সংখ্যার হিসাবে যা প্রায় ২৭% বেশি।

ফ্রান্সে নতুন করে মারা যাওয়া ১৮৬ জনসহ মোট মৃতের সংখ্যা ৮৬০ জন। সেখানে মঙ্গলবার থেকে লকডাউন কঠোর করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শরীর চর্চার মতো কার্যক্রম কঠোরভাবে সীমিত করা হয়েছে এবং খোলা বাজার বন্ধ করা হয়েছে।

এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সদস্য ডিক পাউন্ড বলেছেন যে. করোনাভাইরাসের কারণে টোকিও অলিম্পিক এক বছর পেছানো হতে পারে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এনিয়ে কোন ঘোষণা দেয়নি আইওসি।

খেলার ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চার সপ্তাহ সময় নিয়েছে আইওসি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডা বলেছে যে তারা জাপানে এই গ্রীষ্মে খেলায় অংশ নেবে না এবং গ্রেট ব্রিটেনও বলেছে যে তারাও হয়তো কোন দল পাঠাতে পারবে না।
অন্যান্য দেশের অবস্থা কেমন

•যুক্তরাষ্ট্রে ৪৮১ জন মারা গেছে এবং রাজ্য ও শহরের গভর্নররা কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা চেয়েছে।

•প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তিন রাজ্য যথা- ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।

•ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতের সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে বুধবার ভোর থেকেই সব ধরণের অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে।

•দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বলেছে যে বৃহস্পতিবার থেকে ২১ দিনের লকডাউন কার্যকর করবে তারা।
•মহামারি ঠেকাতে একটি “বৈশ্বিক যুদ্ধবিরতির” আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, সংঘাত চলতে থাকলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষ-“নারী ও শিশু, প্রতিবন্ধী, সংখ্যালঘু ও বাস্তুচ্যুতদেরকেই” সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হবে।

সূত্র-বিবিসিবাংলা

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)