সড়ক আইন আজ থেকে কার্যকর; থাকছে যে শাস্তির বিধান

অবশেষে বহুল আলোচিত নতুন সড়ক পরিবহন আইন আজ শুক্রবার থেকে কার্যকর হচ্ছে। বিআরটিএ থেকে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের আইনটি কার্যকর করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

৭৯ বছরের পুরনো মোটরযান অধ্যাদেশ বাতিল করে নতুন এ আইনে বেপরোয়া গাড়িচালকের কারণে মৃত্যু হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটায়, তাহলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আইনটিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে আজ (১ নভেম্বর) থেকে এটি কার্যকর করতে কোনো বাধা নেই। এর আগে দীর্ঘদিন থেকে আইনটি মন্ত্রণালয়ে কার্যকরের অপেক্ষায় ঝুলে ছিল।

আইনের খসড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়। গাড়ি চালানোর সময় চালকদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের জন্যও দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

আইনে বলা হয়েছে, অষ্টম শ্রেণি পাস না করলে লাইসেন্স পাবেন না চালকরা। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে এক মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। আইনে সাধারণ চালকের বয়স আগের মতোই কমপক্ষে ১৮ বছর এবং পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। ফিটনেস চলে যাওয়ার পরেও মোটরযান ব্যবহার করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।

দুর্ঘটনার জন্য দণ্ডবিধি অনুযায়ী তিন রকমের বিধান রয়েছে। নরহত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের সাজা হবে। খুন না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী তিন বছরের কারাদণ্ড হবে। দুই গাড়ি পাল্লা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটালে তিন বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। দুর্ঘটনায় না পড়লেও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর জন্য আইনে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে আইনে। নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়ঃজ্যেষ্ঠ যাত্রীর জন্য সংরক্ষিত আসনে অন্য কোনো যাত্রী বসলে এক মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।

এছাড়া মদপান করে বা নেশাজতীয় দ্রব্য খেয়ে গাড়ি চালালে, সহকারীকে দিয়ে গাড়ি চালালে, উল্টো দিকে গাড়ি চালালে, নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য স্থানে গাড়ি থামিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, চালকছাড়া মোটরসাইকেল একজনের বেশি সহযাত্রী উঠালে, মোটরসাইকেলের চালক ও সহযাত্রীর হেলমেট না থাকলে, ছাদে যাত্রী বা পণ্য বহন, সড়ক বা ফুটপাতে গাড়ি সারানোর নামে যানবাহন রেখে পথচারীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি, ফুটপাতের ওপর দিয়ে কোনো মোটরযান চলাচল করলে সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড বা ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড প্রস্তাব করা হয়েছে।

গত বছরের রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে। দোষী চালকদের শাস্তি দাবিতে অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্যে আইনটি আলোচনায় আসে। এরপরে অক্টোবরে আইনটি জাতীয় সংসদে পাশ হলেও মালিক-শ্রমিকদের বাধার মুখে প্রয়োগ করা যাচ্ছিল না। সম্প্রতি সচিবালয়ে এক সভায় মালিক-শ্রমিকেরা আইনের বেশ কিছু ধারা সংশোধনের জন্য দাবি জানায়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)