এনামুলের সিন্দুক খুলতেই মিললো কোটি কোটি টাকা

গোয়েন্দা তথ্যে র‌্যাব জানতে পারে, রাজধানীর ইংলিশ রোড থেকে পাঁচটি সিন্দুক বানিয়ে নিয়েছেন গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু। এ তথ্যের ভিত্তিতে তিনটি পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে সিন্দুকগুলোর সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব-৩। এসব সিন্দুক খুলতেই মিলেছে কোটি কোটি টাকা। পাঁচটি সিন্দুক থেকে নগদ ৫ কোটি টাকা, ২টি পিস্তল, ১টি শটগান, ১টি রিভলবার, ২টি ইয়ারগান ও ৭৩০ ভরি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীর ৩১ নং বানিয়ানগর, ৮৩১ নং লালমোহন সাহা স্ট্রিট ও নারিন্দার ২২১ নং শরৎগুপ্ত রোডে অভিযান চালিয়ে এই বিপুল পরিমাণ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

ক্যাসিনো থেকে পাওয়া টাকার অংশই এনামুল পাঁচটি সিন্দুকে রেখেছিলেন বলে র‌্যাবের দাবি। তবে এনামুলকে পায়নি র‌্যাব। এরই মধ্যে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। গত সপ্তাহে এনামুল থাইল্যান্ড গেছেন বলে পরিবার সূত্রে জানতে পেরেছে র‌্যাব।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল জানান, প্রথম অভিযানে এনামুল ও তার ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়ার বাসা থেকে তিনটি সিন্দুকে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা, ৭৩০ ভরি সোনা ও ৫টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে র‌্যাব।
তিনি বলেন, এর আগে অভিযান চালানো মতিঝিলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের অংশীদার এনামুল। সেখান থেকে পাওয়া লভ্যাংশের টাকা দিয়ে সোনা কিনে সিন্দুকে লুকিয়ে রাখতেন তিনি। নগদ টাকা রাখতে বেশি জায়গার প্রয়োজন, সেজন্য টাকাগুলো নিয়ে এসে সোনায় কনভার্ট করতেন। আরেক নেতা রুপনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে বলে জানান শাফিউল্লাহ বুলবুল।
দ্বিতীয় অভিযানটি চালানো হয় এনামুলের কর্মচারী আবুল কালামের বাসায়। ৮৩১ নং লালমোহন সাহা স্ট্রিটের ওই বাসা থেকে একটি সিন্দুক উদ্ধার করা হয়। সেটিতে ২ কোটি টাকা ও গুলিসহ একটি রিভলভার পেয়েছে র‌্যাব।

লে. কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, সিন্দুকটি থেকে হাজার টাকার নোটের বান্ডিলে ২ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এছাড়া এই বাসা থেকে গুলিসহ একটি রিভলবার উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, এনামুলের বডি গার্ড পাভেল এই সিন্দুক ও গুলিসহ রিভলভারটি রেখে গেছে।
তৃতীয় অভিযানটি চালানো হয় নারিন্দার শরৎগুপ্ত রোডের ২২১ নম্বর বাড়িতে। বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় থাকতেন এনামুলের বন্ধু হারুন অর রশিদ। ট্রাকস্ট্যান্ডের এই কর্মচারীর বাসা থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

হারুনের স্ত্রী র‌্যাবকে জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে এনামুল এই টাকাগুলো বাসায় রেখে গেছেন। তারা এই টাকার বিষয়ে কিছু জানেন না।
এত বিপুল পরিমাণ টাকার সুনির্দিষ্ট উৎসের তথ্য জানতে না পারলেও ক্যাসিনোর টাকা বলে ধারণা করছেন অভিযান সংশ্লিষ্টরা।
র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক আরও বলেন, এত টাকা লুকিয়ে রাখার জন্য বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়। এজন্য এনামুল তার টাকায় সোনা কিনে রাখতেন। আমরা তার বাসা থেকে ৭৩০ ভরি সোনা উদ্ধার করেছি।
র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, র‌্যাবের কাছে তথ্য ছিল এনামুল ও তার ভাই রুপন ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের অংশীদার। ধারণা করা হচ্ছে ক্যাসিনোর টাকাই তিনি বিভিন্ন সিন্দুকে লুকিয়ে রেখেছিলেন।
এই টাকা, সোনা ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)