ধবল ধোলাই হলো বাংলাদেশ

তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষ খেলায় শ্রীলঙ্কার কাছে ১২২ রানের হেরে হোয়াইটওয়াশের শিকার হলো বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার ছুঁড়ে দেওয়া ২৯৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বড় ব্যবধানে হেরেছে সফরকারী বাংলাদেশ। তামিমের দলকে ১২২ রানে হারিয়েছে দিমুথ করুনারত্নের দলটি। তাতে তিন ম্যাচ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে সফরকারীরা।

সিরিজের শেষ ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন লঙ্কান দলপতি দিমুথ করুনারত্নে। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, কুশল মেন্ডিসদের ফিফটি আর দলপতি করুনারত্নে, কুশল পেরেরার দারুণ ইনিংসে লঙ্কানরা নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে তোলে ২৯৪ রান। শেষ ১০ ওভারে লঙ্কানরা তুলে নেয় ১০৬ রান। জবাবে, সৌম্য সরকারের ফিফটিতে বাংলাদেশ ৩৬ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে তোলে ১৭২ রান।

বুধবার (৩১ জুলাই) সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর তিনটায় শুরু হয় ম্যাচটি। গাজী টিভি ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করে। বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যকার সিরিজের সবক’টি ম্যাচ সরাসরি দেখা যায় র‍্যাবিটহোলের ওয়েবসাইটে। অনুশীলনে চোট পাওয়ায় মোস্তাফিজ এই ম্যাচে নেই। একাদশ থেকে ছিটকে যান মোসাদ্দেক হোসেন। তাদের জায়গায় এসেছেন রুবেল হোসেন এবং এনামুল হক বিজয়।

দলীয় ১৩ রানে শফিউল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান আভিস্কা ফার্নান্দো (৬)। ৯৬ রানের মাথায় তাইজুল ইসলাম ফিরিয়ে দেন লঙ্কান দলপতি দিমুথ করুনারত্নেকে। ৬০ বলে ৬টি চারের সাহায্যে লঙ্কান দলপতি করেন ৪৬ রান। এরপর কুশল পেরেরাকে ফেরান রুবেল হোসেন। দলীয় ৯৮ রানের মাথায় পেরেরা সাজঘরে ফেরার আগে করেন ৫১ বলে ৫টি চারে ৪২ রান।

এরপর ১০১ রানের জুটি গড়েন কুশল মেন্ডিস এবং অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ইনিংসের ৪২তম ওভারে সৌম্য সরকার ফিরিয়ে দেন কুশল মেন্ডিসকে। সাব্বির রহমানের হাতে ধরা পড়ার আগে মেন্ডিস করেন ৫৪ রান। তার ৫৮ বলে সাজানো ইনিংসে ছিল ৫টি চার আর একটি ছক্কার মার। ইনিংসের ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে বিদায় নেন ক্রমেই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা দাসুন শানাকা। শফিউলের বলে সাব্বিরের হাতে ধরা পড়ার আগে শানাকা ১৪ বলে দুই চার, দুই ছক্কায় করেন ৩০ রান।

৪৯তম ওভারে শফিউল নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন। ৭ বলে ১৩ রান করা শিহান জয়সুরিয়াকে তামিমের হাতে বন্দি করেন এই পেসার। শেষ ওভারে সৌম্যর বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। তার আগে ৯০ বলে আটটি চার আর একটি ছক্কায় করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৮৭ রান। পরের বলেই সৌম্য ফিরিয়ে দেন আকিলা ধনাঞ্জয়াকে। তবে, হ্যাটট্রিক পূর্ণ করা হয়নি।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। তাইজুল ইসলাম ১০ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট। সৌম্য সরকার ৯ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে নেন তিনটি উইকেট। মেহেদি হাসান মিরাজ ৯ ওভারে ৫৯ রান খরচায় কোনো উইকেট পাননি। শফিউল ইসলাম ১০ ওভারে ৬৮ রান দিয়ে তুলে নেন তিনটি উইকেট। রুবেল হোসেন ৯ ওভারে ৫৫ রান খরচায় পান একটি উইকেট।

২৯৫ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বিদায় নেন পুরো সিরিজে ব্যাট হাতে ব্যর্থ তামিম ইকবাল। কাসুন রাজিথার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে তামিম ৬ বলে করেন মাত্র ২ রান। প্রথম ওয়ানডেতে ০ রানে ফেরা তামিম দ্বিতীয় ওয়ানডেতে করেছিলেন ১৯ রান। অষ্টম ওভারের শেষ বলে বিদায় নেন ২০১৮ সালের পর ওয়ানডে একাদশে ফেরা এনামুল হক বিজয়। রাজিথার দ্বিতীয় শিকারে ফেরার আগে বিজয় ২৪ বলে দুই বাউন্ডারিতে করেন ১৪ রান। দাসুন শানাকার করা ১২তম ওভারের শেষ বলে বিদায় নেন প্রথম দুই ওয়ানডেতে ফিফটি করা মুশফিকুর রহিম। স্লিপে ক্যাচ দেওয়ার আগে মুশি করেন ১৫ বলে ১০ রান।

দলীয় ৬০ রানের মাথায় বিদায় নেন ৪ রান করা মোহাম্মদ মিঠুন। বাংলাদেশ চার উইকেট হারায়। ৮৩ রানের মাথায় বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৯)। সাব্বির রহমনাও (৭) বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। এরই মধ্যে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১১তম ফিফটি তুলে নেন সৌম্য সরকার। ৮ রান করা মেহেদি হাসান মিরাজ বেশিক্ষণ সৌম্যকে সঙ্গ দিতে পারেননি। দলীয় ১১৭ রানের মাথায় বাংলাদেশ সপ্তম উইকেট হারায়। ইনিংসের ৩২তম ওভারে ফেরেন সৌম্য সরকার। তার আগে ৮৬ বলে ৫টি চার আর একটি ছক্কায় করেন ৬৯ রান। শফিউল ইসলাম করেন ১ রান। শেষ দিকে ব্যাট হাতে চমক দেখান তাইজুল ইসলাম। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলার পথে ২৮ বলে ৫টি চার আর একটি ছক্কায় করেন অপরাজিত ৩৯ রান। দাসুন শানাকা তিনটি, লাহিরু কুমারা দুটি, রাজিথা দুটি, ধনাঞ্জয়া একটি আর হাসারাঙ্গা একটি করে উইকেট তুলে নেন।

সিরিজের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে তামিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জিতেছিল ৫ উইকেটে। গত ২৬ জুলাই সিরিজের প্রথম ম্যাচে লঙ্কানরা ৮ উইকেট হারিয়ে তোলে ৩১৪ রান। বাংলাদেশ ৪১.৪ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে তোলে ২২৩ রান। ওয়ানডেতে তামিমের অভিষেক অধিনায়কত্বে সফরকারীরা ম্যাচ হারে ৯১ রানে।

সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে গত ২৮ জুলাই মাঠে নেমেছিল দুই দল। বাংলাদেশ ৮ উইকেট হারিয়ে তোলে ২৩৮ রান। জবাবে, ৩২ বল হাতে রেখে ৩ উইকেট হারানো লঙ্কানরা ম্যাচ জেতে। বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারানোর পাশাপাশি স্বাগতিকরা নিজেদের মাটিতে প্রায় ৪৪ মাস পর ওয়ানডে কোনো সিরিজ নিজেদের করে নেওয়ার সুযোগ পায়।

বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, এনামুল হক বিজয়, সাব্বির রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজ, শফিউল ইসলাম, তাইজুল ইসলাম এবং রুবেল হোসেন।

শ্রীলঙ্কা একাদশ: দিমুথ করুনারত্নে (অধিনায়ক), আভিস্কা ফার্নান্দো, কুশল পেরেরা, কুশল মেন্ডিস, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, শিহান জয়সুরিয়া, দাসুন শানাকা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, আকিলা ধনাঞ্জয়া, কাসুন রাজিথা এবং লাহিরু কুমারা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)