সাতক্ষীরায় ঘুমন্ত স্ত্রীকে জবাই করে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

দুশ্চরিত্রা দাবি করে ঘুমন্ত স্ত্রীকে জবাই করে হত্যার দায়ে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত স্বামীকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ মোঃ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১১টায় এক জনাকীর্ণ আদালতে এ আদেশ দেন।

সাজাপ্রাপ্ত আসামীর নাম জালাল সানা(৪৬) । তিনি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক সানার ছেলে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রঘুনাথপুর গ্রামের আনোয়ার আলী মোড়লের মেয়ে নাসিমা খাতুনের সঙ্গে একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক সানার ছেলে জালাল সানার বিয়ে হয়। রাবেয়া ও খাদিজা খাতুন নামে তাদের দু’টি মেয়ে রয়েছে। সাত বছর আগে থেকে সাংসারিক বিষয় নিয়ে নাসিমার সঙ্গে জালালের প্রায়ই ঝগড়া হতো। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে শালিস হয় কয়েকবার। তাতেও শান্তি ফিরে না আসায় ২০১৪ সালে জালাল তালাক দেয় নাসিমাকে। এ ঘটনায় নাসিমানর বাবা বাদি হয়ে আদালতে যৌতুকের মামলা করেন। পরবর্তীতে জালাল এর অনুরোধে স্থানীয়রা মীমাংসা করে দেওয়ায় নাসিমাকে জালাল এর সঙ্গে পূণঃরায় বিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ও স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকতো। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের ১৩ মার্চ রাতের কোন এক সময় ঘুমন্ত স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করে জালাল। পরদিন জালাল নিজেই থানায় আত্মসমর্পণ করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আনোয়ার আলী মোড়ল বাদি হয়ে জামাতা জালাল সানার নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১৫ মার্চ জালাল সানা বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ জাহিদ হাসান এর কাছে স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।

জবানবন্দিতে সে উল্লেখ করে যে, তার স্ত্রী চরিত্রহীন বিধায় তাকে তালাক দেয় জালাল। এরপরও স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মাওলানা তার সঙ্গে আবারো বিয়ে দেয়। এরপর তাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না ।একপর্যায়ে ১৩ মার্চ দিবাগত রাতে নাসিমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দা দিয়ে জবাই করে হত্যা করে পরদিন সকালে সে থানায় আত্মসমর্পণ করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সোহারাব হোসেন চলতি বছরের ১৭ মে আদালতে এজাহারভুক্ত আসামী জালাল সানার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

মামলার ১৩ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও নথি পর্যালোচনা করে আসামী জালাল সানার বিরুদ্ধে স্ত্রী নাসিমাকে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারক তাকে মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেন। এ সময় আসামী জালাল সানা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
আসামী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাড. আক্তারুজ্জামান।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনাকারী জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. তপন কুমার দাস বলেন, এ ধরণের একটি স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর মামলা সাড়ে আট মাসে নিষ্পত্তি করতে পারায় বিচার বিভাগের প্রতি বিচার প্রার্থীদের আস্থা বেড়ে যাবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)