নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার ও শিশুদের অনলাইনে যৌন হয়রানী শংকামুক্ত সুন্দর জীবন
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর অনুযায়ী ৫৩৩ জন শিশু ধর্ষিত হয়েছে। অনেক মেয়ে ধর্ষণ বা যৌন হয়রানীর শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে| আবার ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। এছাড়া মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাত, খুন বা আহত করার ঘটনা ঘটেছে ।
মানুষ চলার পথে প্রতিটি ঘটনা থেকে বা ইতিহাস থেকে জ্ঞান আহরণ করছে। মানুষ বইয়ের মাধ্যমে, টিভির মাধ্যমে,ভিডিও-অডিও ক্যাসেট ডিক্স এর মাধ্যমে, তাছাড়া পরিবেশ-প্রকৃতি থেকে জ্ঞান লাভ করছে কিন্তু বর্তমান সময়ে যোগ হয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জ্ঞান আহরণ এবং সোস্যাল মিডিয়ার বিশাল জগৎ ।
কিন্তু আমাদের দেশের নারী ও কন্যা শিশুরা প্রতিনিয়ত নানা সহিংসতার শিকার ও নির্যাতিত হচ্ছে । মানুষের দৈনন্দিন জীবন জীবিকা বা পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল কিংবা জনসমাগম স্থল কোথাও তাদের নিরাপত্তা নেই । মূলত: মাতৃগর্ভ থেকে একজন মেয়ের প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য শুরু হয়। আর একটা কন্যা শিশু তার জন্মের পর থেকে হয়ে পড়ে পরিবার ও সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত, প্রান্তিক ও বি ত জনগোষ্ঠীর অংশ। শ্রেণী,পেশা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব ক্ষেত্রে একই চিত্র ।
বাংলাদেশে কিশোরী ও তরুণীরা ক্রমবর্ধমান হারে অনলাইনে যৌন হয়রানী ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে । পুলিশ প্রতিদিন অনলাইনে গড়ে ১০ থেকে ১২ টি যৌন হয়রানীর অভিযোগ পায় বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এর ৯০ শতাংশ ভুক্তভোগী কিশোর কিশোরীরা এবং এর চেয়ে কম বয়সী । খুব স্বাভাবিক ভাবে ধারনা করা যায়, বাস্তবে এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা আরো অনেক বেশী । তবে বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতি দশজন নারীর মধ্যে নয়জন নারীই জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে যৌন হয়রানীর শিকার হন । হাইকোটের নির্দেশনা প্রণয়নের দীর্ঘ নয় বছর পরও কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানী প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না ।
বর্তমান সভ্যতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন ইন্টারনেট । শুরুতে তথ্যের আদান প্রদানের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার হলেও বর্তমানে ইহার ব্যবহার দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে । পত্রিকার পাতা খুললেই যে সকল সংবাদ আমরা পাই তা এখন আমাদের বিবেককে বোবা করে দিচ্ছে । ৩ বছরের শিশু থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধা ধর্ষণ মানুষের মুনুস্যবৃর্ত্তিকে হার মানিয়ে পশু বৃত্তির চরম উৎকর্ষ সাধন । মোবাইল ফেসবুক, গেমস্ ই মেইল ইত্যাদি নিয়ে নতুন প্রজন্ম ব্যস্ত । পাশাপাশি বসে কেউ কারো সাথে এখন কথা বলে না, তারা শুধু ব্যস্ত ইন্টারনেট নিয়ে । ছেলেমেয়েরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে । এ কারণে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে ও পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হচ্ছে । শিশুদের মেধা মনন ও সৃজনশীল বিকাশের জন্য ইন্টারনেটের অপব্যবহার থেকে শিশুদেরকে সুরক্ষা দিতে হবে তা না হলে আমাদের সম্ভাবনাময় যুব তরুণরা অন্ধকারের পথে হারিয়ে যেতে পারে । ইন্টারনেট উন্নয়নের বাহন কিন্তু ইন্টারনেট যেন ক্ষতির কারণ না হয়ে ওঠে সেদিক আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে ।
ইন্টারনেটের অপব্যবহারের মাধ্যমে শিশুদের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে আমাদের করণীয়: প্রথমত: বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সাথে আলোচনা করা,উঠান বৈঠক করা,জনসভা করা, আলোচনা সভা করা,মানববন্ধন করা,র্যালী করা,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিবেট প্রতিযোগিতা করা,নাটক করা,প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা,লিফলেট পোষ্টার ব্যবহার করা,অভিভাবক সমাবেশ করা,পাড়ায় পাড়ায় দলগঠন করা,শিশুদের নিয়ে কাউন্সিলিং করা,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতা বিষয়ক নির্দেশিকা পাঠদান কর্মসূচীতে অন্ত:ভুক্ত করা ইত্যাদি
সত্যিকার অর্থে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঝুঁকিপূর্ণ ইন্টারনেট ব্যবহার শিশুদের জন্য নির্যাতন ও হয়রানির একমাত্র কারণ। বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ এর মাধ্যমে কোমলমতি শিশুরা ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে কিন্ত ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে ভাল মন্দ বিষয়ে তাদের কতটুকু শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, সাতক্ষীরা সদর মো: আবুল হোসেন বলেন ”মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল গুলোতে ইন্টারনেটের অপব্যবহারের মাধ্যমে শিশুরা যাতে নির্যাতনের শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে উপজেলার প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সতর্কতামূলক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা যাতে স্কুলে এনড্রয়েডমোবাইল ব্যবহার না করে সেদিকে শিক্ষকরা খেয়াল রাখবেন। আমরা আমাদের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে নির্যাতন মুক্ত ও নিরাপদ রাখবো এটাই আমাদের প্রত্যাশা । ”
ইন্টারনেটের অপব্যবহার শিশুদের জীবনকে সাংঘাতিক ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় শিশু সন্তানেরা ধ্বংস হয়ে যাবে। যুগ এখন বিশ্বায়নের ,যেখানে আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিচরণ করছি । তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারতা পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে । ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এখন আই সি টি একটা বিষয় সংযোজন করা হয়েছে যা পাঠ্যক্রম হিসাবে মাধ্যমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ানো হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের যথেষ্ট সুফল আমরা ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছি কিন্ত এর অপব্যবহার আমাদের শিশুদেরকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে যা থেকে শিশুদেরকে সুরক্ষা দিতে না পারলে ভালর চেয়ে খারাপটাই বেশী হয়ে যাবে । শিশুরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে । ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিশুরা বন্ধুত্ব করছে নতুন নতুন মানুষের সাথে । কেউ কেউ তাদের খুব কাছের মানুষ হয়ে উঠছে । অনেক সময় তাদের এই সব ছেলে কিংবা মেয়ে বন্ধুর সাথে নিজের ইচ্ছায় বা বন্ধুটির ইচ্ছায় সেক্সটিং বা যৌন উত্তেজনামূলক ছবি, ভিডিও ধারণ করে তাদের কাছে পাঠাচ্ছে একসময় সম্পর্ক ভেঙে গেলে এই ছবি ও ভিডিও গুলো ছড়িয়ে পড়ছে ইন্টারনেটে। শিশুদের প্রতি বিকৃতভাবে আকৃষ্ট ব্যক্তিরা ছবিগুলো সংগ্রহ করে বিক্রি করছে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে । যা শিশুদের ভবিষ্যৎ বিকাশের ক্ষেত্রে অভাবনীয় ঝুকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে ।
এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে অজানা বিস্ময়, না দেখা নতুন পৃথিবীর অবিশ্বাস্য জগৎ । সীমাহিন কৌতুহল নিয়ে শিশুরা নতুন নতুন কিছু জানার আগ্রহে তারা ইন্টারনেট ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে । অবাধ তথ্যের সম্ভারে বিচরণের সুযোগ থাকছে, তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে পরস্পর পরস্পরের সাথে পরিচিত হচ্ছে ও বন্ধুত্ব স্থাপন করছে, নিজের চিন্তা চেতনার দ্বার প্রসারিত হচ্ছে, ভিডিও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে বাস্তব জ্ঞান অর্জনে সক্ষম হচ্ছে তাছাড়া বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও বৈচিত্রতা সম্পর্কে জানতে পারছে যা শিশুদের চিন্তা চেতনা তথা মননশীলতা বিকাশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা হিসাবে কাজ করছে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের জন্য ইন্টারনেট এখন উন্মুক্ত । ইন্টারনেট হলো বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশাল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা । যোগাযোগ ও তথ্য আদান প্রদানের এটি অন্যতম একটি মাধ্যম।
ইন্টারনেটের অপব্যবহার শিশুদের জীবনকে সাংঘাতিক ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় শিশু সন্তানেরা ধ্বংস হয়ে যাবে । যুগ এখন বিশ্বায়নের ,যেখানে আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিচরণ করছি । তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের যথেষ্ট সুফল আমরা ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছি কিন্ত এর অপব্যবহার আমাদের শিশুদেরকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে যা থেকে শিশুদেরকে সুরক্ষা দিতে না পারলে ভালর চেয়ে খারাপটাই বেশী হয়ে যাবে । শিশুরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে । ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিশুরা বন্ধুত্ব করছে নতুন নতুন মানুষের সাথে । কেউ কেউ তাদের খুব কাছের মানুষ হয়ে উঠছে । অনেক সময় তাদের এই সব ছেলে কিংবা মেয়ে বন্ধুর সাথে নিজের ইচ্ছায় বা বন্ধুটির ইচ্ছায় সেক্সটিং বা যৌণ উত্তেজনামূলক ছবি, ভিডিও ধারণ করে তাদের কাছে পাঠাচ্ছে একসময় সম্পর্ক ভেঙে গেলে এই ছবি ও ভিডিও গুলো ছড়িয়ে পড়ছে ইন্টারনেটে । শিশুদের প্রতি বিকৃতভাবে আকৃষ্ট ব্যক্তিরা ছবিগুলো সংগ্রহ করে বিক্রি করছে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে । যা শিশুদের ভবিষ্যৎ বিকাশের ক্ষেত্রে অভাবনীয় ঝুকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে ।
পরিশেষে ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিশুদের যৌন হয়রানী সংক্রান্ত অপরাধীদের বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য সরকারকে আরও ইতিবাচক হতে হবে, অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর আগাম সতর্কতাই পারে শিশু ও যৌন নির্যাতন অনেকাংশে কমিয়ে আনতে, সাথে সাথে প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় করা । তাছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে যৌন শোষণ ও যৌন নির্যাতন থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখার জন্য আমাদের সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু ভাল ফলাফলের জন্য নয় বরং ভাল মানুষ হওয়ার কারখানা হতে হবে তদ্রূপ পরিবারে সন্তানের প্রতি অন্ধ ভালবাসার চেয়ে সতর্ক ভালবাসা অনেক মূল্যবান। যৌন নির্যাতনের মত ঘটনাকে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করা দরকার, এ ব্যাপারে শিক্ষক ও অবিভাবকদের কে বড় ধরনের ভূমিকা নিতে হবে ।
তবে বে-সরকারি সংস্থা অগ্রগতি সংস্থার বাস্তবায়নে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরী সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তাছাড়া শিশুর আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষে ইন্টারনেটের অপব্যবহার রোধে শিশুদেরকে সুরক্ষিত রাখি ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।