যে কারণে খুন করা হয় কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনকে
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম মোশাররফ হোসেন নিহত হওয়ার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশ কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। তবে নিহতের পরিবারের বা পুলিশের পক্ষ থেকে এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে স্থানীয় কয়েকটি বিরোধকে দায়ী করছে। বিশেষ করে স্থানীয় সাপখালী খালের নেটপাটা অপসারন নিয়ে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় মেয়ে সাফিয়া খাতুন সাংবাদিকদের কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগ করেন। শনিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে কৃষ্ণনগর বাজারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন (৫২)। তিনি এ সময় স্থানীয় যুবলীগ অফিসে বসেছিলেন। কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন স্থানীয় যুবলীগ অফিসে বসেছিলেন। এ সময় পাঁচ ছয় জন যুবক তিনটি মটরসাইকেলে এসে বাজারে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ করে ত্রাস সৃষ্টি করে। এতে লোকজন আতংকিত হয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে এই সুযোগে সন্ত্রাসীরা যুবলীগ অফিসে ঢুকে চেয়ারম্যানকে লক্ষ করে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি করে।
সন্ত্রাসীরা কেবল গুলি করেই ক্ষ্যন্ত হয়নি সাথে সাথে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তাকে কালিগঞ্জ হাসপাতালে নেয়া হলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তৈয়বুর রহমান মৃত. ঘোষনা করেন। ওসি জানান ঘটনাস্থল থেকে দুই রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যাকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এবিষয়ে জেলা জাতীয় পার্টির সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুজ্জামান বিপুল বলেন, চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন জেলার ৭৮টি ইউনিয়নের একমাত্র জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। তিনি পরপর তিনবার চেয়ারম্যান ছিলেন। কালিগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি। তার হত্যাকান্ডের বিষয়টি কেন্দ্রকে অবহিত করা হয়েছে। জাতীয় পার্টি এ জঘন্য হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এবং অবিলম্বে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী করেছেন। তবে এ ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এদিকে এই হত্যার নেপথ্য কারণ নির্ণয়ে পুলিশ মাঠে নেমেছে। পুলিশের একটি সুত্র জানান, এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ধারের জন্য তিনটি মোটিভ নিয়ে পুলিশ মাঠে নেমেছে। স্থানীয় মহসিন ডাকাতের দলের সাথে চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের বিরোধ ছিল। চেয়ারম্যানের কারণে ওইসব ডাকাতরা এলাকায় উঠতে পারেনা। একই ইউনিয়ন পরিষদের তিন নম্বর ওয়ার্ড সদস্য, ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি আব্দুল জলিলের সাথে কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের ১৫০ বিঘা আয়তনের সাপখালী খালের দখল নিয়ে বিরোধ চলছিল চেয়ারম্যানের। সরকারি ওই খাল দখলমুক্ত করতে চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের শক্ত অবস্থান ছিল।
সম্প্রতি ওই মেম্বর মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করে তার অব্যহতি দাবী করেন। কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের ১৫০ বিঘা আয়তনের সাপখালী খালের দখল নিয়ে স্থানীয় নূর ইসলাম ও তার ছেলে আবু বক্করের সাথে বিরোধ ছিল তুঙ্গে। এছাড়া চেয়ারম্যানের সাথে গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা কবিরুজ্জামান মন্টু পরাজিত হওয়ায় তিনিও বিষয়টি ভালভাবে মেনে নিতে পারেননি। এছাড়া প্রতিবাদী মানুষ হিসেবেও চেয়ারম্যান মোশাররফের সুনাম ছিল। এতেও অনেকে তার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। ওসি জানান, এসব সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
এবিষয়ে কালিগজ্ঞ সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার শেখ ইয়াছিন আলী বলেন, নিহতের পরিবারের পাশে পুলিশ রয়েছে। পরিবারের সাথে আলোচনা করে মামলা দায়ের করা হবে। তবে কোনো কারন পুলিশ তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলবে না। তবে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে খুবই দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেন। এদিকে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে নিজ বাড়িতে আনার পর মানুষের ঢল নামে। বাদ আসর কৃষ্ণনগর হাইস্কুল মাঠে বিশাল জানাযা শেষে তার প্রতিষ্ঠিত হাফেজিয়া মাদ্রাসার পাশে কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। সেখানে ব্যক্তিগতভাবে তিনি তিন কন্যা সন্তানের জনক।