স্কুল ফাঁকি দিয়ে মৎস্যঘের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন প্রধান শিক্ষক!

নিজস্ব প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরা সদরের ৫২ নং খড়িয়াডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিপক চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে স্কুল ফাাঁকি দিয়ে নিজের মৎস্যঘের নিয়ে ব্যস্ত থাকাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি এহেন কর্মকান্ড করলেও অজানা কারণে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেননা সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ। ফলে দিনদিন ওই স্কুলের প্রিত আগ্রহ হারাচ্ছেন অভিভাবকরা এবং কমতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীর সংখ্যা।

মঙ্গলবার(৪ মার্চ) সকাল ১১ টার দিকে সরেজমিনে যেয়ে জানা যায়, ওই স্কুলে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৬ জন। যার মধ্যে ১ম শ্রেণীতে ৯জন, ২য় শ্রেণীতে ১২জন, ৩য় শ্রেণীতে ১১ জন, ৪র্থ শ্রেণীতে ৮ জন, ৫ম শ্রেণীতে ৬জন এবং প্রাক প্রাথমিকে ১০জন থাকলেও ঠিকমতো স্কুলে আসেননা অধিকাংশ শিক্ষার্থী। ১ম শ্রেণীতে ক্লাস করছেন মাত্র ৪জন আর ২ শ্রেণীতে ৮ জন। এছাড়া প্রাক প্রাথমিকের কোন শিক্ষার্থী দেখা যায়নি। তবে ওই সময় ওই স্কুলের ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর কতজন শিক্ষার্থী আসেন তা জানা সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক দিপক কুমার রায় সপ্তাহে একদিনও ঠিকমতো স্কুলে আসেননা। কোনদিন সকাল ৯টায় আসলে চলে যান সকাল ১০ টায়। আবার কোনদিন সাড়ে ৯ টায় আসেলে চলে যান টিফিনের সময়। এছাড়া কোন কোন দিন মোটেও বিদ্যালয়ে আসেননা। তার কাছে কেউ ফোন দিয়ে জানতে চাইলে বলেন ‘টিও’ অফিসে মিটিংএ আছি। অথচ তিনি ‘টিও’ অফিসে না যেয়ে চলে যান নিজের মৎস্যঘেরে। এছাড়া মাঝে মাঝে যেদিন স্কুলে আসেন সেদিন স্কুলে বসেই তার মৎস্যঘেরের ও মাছের কাটার হিসাব নিকাশ করেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা স্কুলে এসে তার সাথে খোশগল্পে ও ব্যবসায়ীক হিসাবে মেতে ওঠেন। ফলে তিনি বাচ্চাদের ঠিকমতো ক্লাসই নেননা।’

তারা আরো বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত স্কুলের ক্ষুদ্র মেরামত, স্লিপের টাকা যথাযথ ব্যবহার না করে জাল-জালিয়াতি করে কাগজ সৃষ্টি করে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করেন।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা আরো বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক দিপক চন্দ্র রায়ের নৈতিক চরিত্র ভাল না। অনেক আগে রাতের আঁধারে পার্শ্ববতী সিতা নামে এক বিধবার ঘরে যেয়ে ধরা পড়েন এবং সিতার ছেলে শিক্ষক দিপক চন্দ্রের একটি কান কেটে ফেলেন। সেই থেকে প্রধান শিক্ষক ‘কান কাটা দিপক’ নামে পরিচিত। প্রধান শিক্ষকের কারণে লোক লজ্জার ভয়ে সেই সীতা ভারতে চলে গেছেন। এরপর থেকে ভয়ে অভিভাবকরা বিশেষ করে মহিলা অভিভাবকরা স্কুলে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। আর কেউ কেউ স্কুলে গেলেও তার সাথে খারাপ আচরণ করেন শিক্ষক দিপক কুমার রায়।’

স্কুলের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর একাদিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অন্যান্য ম্যাডামরা ঠিকমতো স্কুলে আসলেও প্রধান শিক্ষক ঠিক সময়ে স্কুলে আসেননা। স্কুলে পাশে বাড়ি হলেও কোন কোন দিন প্রধান শিক্ষক মোটেও স্কুলে আসেননা। তিনি আমাদের তেমন একটা ক্লাসও নেননা।’

খড়িয়াডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি সুধাংশু গাইন বলেন, ‘আমি এবারই সভাপতি হয়েছি ফলে স্লিপের টাকা বা মেরামতের টাকা সংক্রান্ত ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। এছাড়া প্রধান শিক্ষক স্কুলে ঠিকমতো আসেননা বলে অভিভাবকরা আমাকে বলেছেন। আমি প্রধান শিক্ষককে বললে তিনি ঠিকমতো স্কুলে আসেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।’

তবে স্কুলে না আসার ব্যাপারে আংশিক স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক দিপক কুমার রায় বলেন, ‘আমি ৮০ভাগ দিনে স্কুলে আসি। তবে মাঝে মাঝে মাছ বিক্রির জন্য আমার বাজারে যাওয়া লাগে। ফলে আর স্কুলে আসা হয়না। এছাড়া স্কুলে কোন টাকা আমি আত্মসাৎ করিনি বা অভিভাবকদের সাথে আমি খারাপ ব্যবহার করিনা। আর কান কাটার বিষয়টি একটি গুজবমাত্র।’

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল গনি বলেন, ‘নানা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক দিপক কুমার রায়ের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)